রাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা দিবসের খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার ১২:৩১, ২৭ মার্চ, ২০২২
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ শামসুজ্জোহা হলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষিত শহীদ শামসুজ্জোহা হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি চিরন্তন চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলামের নেতৃত্বে গতকাল ২৬শে মার্চ দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. একরামুল ইসলাম।
জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য একবেলা বিশেষ খাবারের বরাদ্দ করে কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৩০ টাকার বিনিময়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। শামসুজ্জোহা হলেও বেলা ১২টা থেকে খাবার পরিবেশন শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, তারা যখন খাবার নেয়ার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তখন হল ছাত্রলীগের সভাপতি চিরন্তন ও সাধারণ সম্পাদক মোমিনের নেতৃত্বে প্রায় ২০-২২ জন কর্মী জোরপূর্বক ১০০-১২০ প্যাকেট খাবার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে হলটির অন্তত ১০০ শিক্ষার্থী খাবার থেকে বঞ্চিত হয়।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি যখন টোকেন নিয়ে খাবার নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন এই ঘটনা ঘটে। তাদের এমন আচরণ দেখে প্রাধ্যক্ষের কাছে আমার টোকেনটি জমা দিয়ে খাবার না নিয়েই চলে আসি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ৩ দিন আগে বিশেষ খাবারের জন্য টোকেন কিনে নিয়েছিলাম। আজ দুপুর ১টার একটু আগে গিয়েও খাবার পাইনি। পরে প্রাধ্যক্ষ স্যার বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে আমাদের দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ঘটনার পরপরই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলাম বলেন, হল প্রাধ্যক্ষের কাছে আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ১০০ প্যাকেট খাবার দাবি করেছিলাম। সেই হিসেবে কর্মীরা সম্মিলিতভাবে গিয়ে কিছু খাবার নিয়ে আসে। এতে কিছুটা খাবারের সংকট হয়। এখানে খাবার ছিনতাইয়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তবে এ বিষয়ে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করা যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি চিরন্তন চন্দ বলেন, হলের প্রাধ্যক্ষ ছাত্রলীগের সবার খাবার একসঙ্গে দেবে বলে আমরা সেখানে যাই। তবে আমি ডাইনিং এ খুব অল্প সময় থাকার পর চলে আসি। আমাদের আসার পর হলে অনেকে নাম ভাঙ্গিয়ে খাবার নিতে পারে। সে বিষয়ে বলতে পারছি না। আমরা অতিরিক্ত খাবারের প্যাকেট নিইনি।
এদিকে খাবার ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমি যতদূর জেনেছি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতিরিক্ত কোনো খাবার নেয়নি। তবে কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এরকম ঘটনা ঘটায়, তবে উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ ঘটনায় হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. একরামুল ইসলাম সরাসরি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের আয়োজনে কোনো ঘাটতি ছিল না। তবে, খাবার বিতরণ শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের কর্মীদের জন্য ২০০ প্যাকেট খাবার দাবি করেন।
তারা যদি খাবার টোকেন নিয়ে থাকে, তবে তারা খাবার পাবে, আমার এমন বক্তব্যের পরেও তারা অতিরিক্ত খাবার দাবি করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের নেতৃত্বে প্রায় ২০-২২ জন শিক্ষার্থী এসে, আমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও টোকেন ছাড়াই অনেকগুলো খাবারের প্যাকেট নিয়ে যায়, বলেন তিনি।
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানিয়েছি, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, জোহা হলে খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি শুনে আমরা প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছি। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সম্পর্কে হল প্রাধ্যক্ষ আমাদের কাছে রিপোর্ট দিলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।