ঢাকা (সকাল ১১:২৬) মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

Join Bangladesh Navy


যশোরে বাসের মধ্যে নারী ধর্ষণ নিয়ে তোলপাড়ঃআটক ৭

মোঃ আলম,যশোর মোঃ আলম,যশোর Clock শনিবার সন্ধ্যা ০৬:৫১, ১০ অক্টোবর, ২০২০

যশোরে বাসের মধ্যে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার দিনব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য গোপন করে ভিকটিম একেক সময় এক ভুল তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের। যার কারণে ঘটনার আসল রহস্য বের করতে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশের। একাধিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এবার আসল রহস্য বেরিয়ে এসেছে।

জানা গেছে, পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা এই বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে একেক সময় একেক রকম তথ্য পেয়েছেন। সন্ধ্যার পর ঘটনার রহস্য সম্পর্কে অনেকটা সঠিক তথ্য মেলে। হাসপাতালে ভর্তির সময়ও ভিকটিম ভুয়া নাম পরিচয়ের তথ্য দেন। তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়েছে। তিনি ধর্ষণ করা নিয়েও মিথ্যাচার করেছেন। একাধিক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেছে বলে প্রথমে দাবি করলেও পরে নিশ্চিত করেন ঘটনার সাথে ১ জন জড়িত। সহায়তা করেছেন ৬ জন।

এই ঘটনায় কোতয়ালি থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় মোট ৭জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ধর্ষণের মামলা হয়েছে বাস শ্রমিক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের ওহিদুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে মনিরুল যশোর সদর উপজেলার রামনগর ধোপাপাড়ায় শহিদুল ইসলামের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। বাকি ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা এবং মারপিটের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মনিরুল ছাড়াও এই মামলার বাকি ৬ আসামি হলেন, শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়ার মহিদুল ইসলাম বাবুর ছেলে শাহিন হোসেন জনি, সিটি কলেজপাড়ার রনজিৎ বিশ্বাসের ছেলে কৃষ্ণ বিশ্বাস, একই এলাকার মৃত সমর সিংহের ছেলে সুভাষ সিংহ, বারান্দী কাঁঠালতলা বৌ বাজার এলাকার জাবেদুল ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম রকিব, বারান্দীপাড়ার কাজী আব্দুস সামাদের ছেলে কাজী মুকুল এবং বেজপাড়া কবরস্থান রোডের গোলাম মাওলার ছেলে মাঈনুল ইসলাম।

ওই নারী জানান রাজশাহী থেকে যশোরে বাড়ি ফেরার জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে এমকে পরিবহনে ওঠেন ওই নারী। রাত ১১টার দিকে তিনি মণিহার এলাকায় গাড়ি থেকে নামেন। কিন্তু এত রাতে বাড়িতে ফেরার উপায় না থাকায় তিনি বাসেই অবস্থান করছিলেন। বাসটি যশোর শহরের বকচর কোল্ড স্টোর মোড়ে গিয়ে থামে। সেখানে তাকে হেলপার মনিরুল কোমল পানীয় দেয়।

তা পান করার পরে তিনি গভীর ঘুমে ঢলে পড়েন। এরপর বাসের মধ্যে নিয়ে মনিরুল ধর্ষণ করে। চেতনা ফিরে পেয়ে তিনি ‘ধর্ষণের শিকার’ হয়েছেন বলে বুঝতে পারেন। এদিকে, খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার এসআই পলাশ বিশ্বাস তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বর্ণিত ঘটনায় জড়িতদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই নারী। তবে পুলিশ অন্য কথা বলছে। এটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা নয় বরং প্রেমিকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম জানিয়েছেন, ওই নারী (২৫) রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকার জিপিও নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন। বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের মীর্জাপুর গ্রামে। যশোর থেকে এমকে পরিবহনের দুইটি বাস সরাসরি রাজশাহী যায়। ওই নারী প্রতিবার এমকে পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী থেকে যশোরে যাওয়া আসা করতেন। যাতায়াতের পথে বাসের হেলপার মনিরের সাথে তার পরিচয় হয়। মাঝেমধ্যে মনিরের সাথে মোবাইল ফোনে তার কথাবার্তা হতো। বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে তিনি যশোরে আসার জন্য মনিরকে ফোন দেন। কিন্তু তিনি প্রথম ট্রিপ ধরতে পারেননি। মনির প্রথম ট্রিপে যশোরে চলে আসে। তিনি দ্বিতীয় ট্রিপে বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী থেকে রওনা দেন। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি বাসে করে মনিহার প্রেক্ষাগৃহের সামনে নামেন এবং মনিরকে মোবাইল করেন। মনির ফোন পেয়ে তার সাথে দেখা করেন।

পরিদর্শক তাসমীম আলম আরো জানিয়েছেন, মনির ওই রাতে নারীকে জানান বাঘারপাড়ায় যাওয়ার কোন বাস পাওয়া যাবে না। তাকে যশোরে থাকতে হবে। সে সময় ওই নারী তার বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে মনির জানায় তার বাড়িতে বৌ আছে। সেখানে নিয়ে যাওয়া যাবে না। বাসের মধ্যে রাতে থাকতে হবে। মনির প্রথম ট্রিপে এসে বাসটি (যশোর-ব-১১-০১২৪) যশোর বিসিএমসি কলেজের সামনে রেখে ধোয়া মুছার কাজ করছিলেন। ওই নারীর ফোন পেয়ে মনির তার সাথে দেখা করেন। পরে মনিহার প্রেক্ষাগৃহের বিপরীতে রাজপ্রিয়া নামক একটি খাবার হোটেলে রাতে খাবার খায়। পরে মনির বাসের মধ্যে ওই নারীর যাত্রীযাপনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বাসটি পরে হেলপার ওই স্থান থেকে কোল্ডস্টোরেজ মোড়ে নিয়ে যায়। এই দৃশ্য দেখেন সেখানে থাকা অন্য শ্রমিকরা। তারা পিছু নেয়। এবং বাসের মধ্যে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলে। তখন অন্য তিন শ্রমিক ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সে সময় তিনি বাঁধা দিলে তাকে মারপিট করা হয়। এবং তিনি চিৎকার দেন। পরে পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। আর মনিরসহ ৬জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদ হাসান হিমেল জানিয়েছেন, ওই তরুণী শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারী রাতে প্রথমে নিজের নাম মিতু এবং বয়স ২১ বলে জানায়। তার পরিচয় জানতে চাইলে মাগুরার শালিখা উপজেলা শতপাড়া গ্রামের গফফার বিশ্বাসের মেয়ে বলে পরিচয় দেন। হাসপাতালে সাংবাদিকরা ওই নারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি একই কথা বলেন। তাকে তিনজনে ধর্ষণ করেছে বলে তিনি জানান। পুলিশ তার কাছ থেকে পরিচয় পেয়ে সে মোতাবেক কাগজপত্র তৈরি করে। কিন্তু শুক্রবার একাধিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পরে তার আসল পরিচয় জানান। পুলিশ জানিয়েছেন, মনিরের সাথে আগেই ওই নারীর সম্পর্ক ছিলো।

সেই সূত্রে তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বাসের মধ্যে। পরে জানাজানি হলে বিষয়টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। ওই নারী সারাদিন পুলিশকে ভুগিয়েছেন তথ্য গোপন করে।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT