মাদারীপুরে খেয়া মাঝিকে মারধর করা ভিডিও ভাইরাল;মামলা আমলে নেয়নি পুলিশ
মীর এম ইমরান,মাদারীপুর বৃহস্পতিবার রাত ০৩:২৪, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
খেয়া মাঝিকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ ভাইরাল হলেও মামলা নেয়নি মাদারীপুর সদর থানায়। দুই দিন আগে মাদারীপুর পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় সাইদুল মাল নামে এক খেয়ামাঝিকে বেদম মারধর করেন উঠতি বয়সী কিছু যুবক। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভূক্তভোগি মাঝি।
বুধবার দুপুরেও মামলা নথিভূক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম মিঞা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী কয়েকজন যুবক লাঠি দিয়ে এক ব্যক্তিকে বেদম পিটাচ্ছেন। কিছু লোক তাদের ফিরানোও চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা তাদের কথা না শুনে লোকটাকে মারধর করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে ১০ থেকে ১২ জন যুবক লঞ্চঘাট এলাকার দিয়ে আড়িয়াল খা নদী পার হয়ে পাচখোলায় যাচ্ছিলেন। এসময় নদী পারাপারের নৌকার মাঝি সাইদুল মালের খেয়ায় তারা পার হয়। প্রথম পারাপারের সময় তারা ফেরার পথে ভাড়া দিবে বলে চলে যায়। পরবর্তিতে কিছু সময় পরে ফিরে এসে আবার খেয়া নৌকায় পার হওয়ার সময় খেয়ার মাঝি ভাড়া দাবি করলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে খেয়ামাঝি সাইদুল মালকে ঐ কিশোরা মিলে বেধরক মারধর করে আহত করে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে সদর থানায় কিশোরদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভূক্তভোগি খেয়া মাঝি। তবে অজ্ঞাত কারণে দুই দিন গেলেও মামলাটি আমলে নেয়নি থানা পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাঝি সাইদুল মাল।
এ ব্যাপারে খেয়ামাঝি সাইদুল মাল বলেন, ‘আমি ৯ জন বখাটের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। যেখানে আসামী করা হয় সদর উপজেলার পূর্ব রাস্তি এলাকার টিপু হাওলাদারের ছেলে সাজিদ হাওলাদার, সিরাজ বেপারীর ছেলে আকাশ বেপারী, সেন্টের ছেলে শামিম, সেলিমের ছেলে রবিন, আইয়ুবের ছেলে সরল, সুমনের ছেলে হাসান, সেলিমের ছেলে জুম্মন। এদের সবার বাড়ী সদর উপজেলার পূর্ব রাস্তি এলাকায়।
এছাড়া অমিত ও আশিক নামের দুই জনসহ অজ্ঞাত আরো ৪ থেকে ৫ জনকে আসামী করা হয়। তবে কেন মামলাটি আমলে নিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করছেন না, বিষয়টি বুঝছি না। এরা সবাই এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় হয়ত মামলা হচ্ছে না।
এব্যাপারে খেয়া ঘাটের ইজারাদার আবদুর রশিদ গৌড়া জানায়, ‘খেয়া দিয়ে পাচখোলা এলাকার চার থেকে পাচ হাজার লোক দৈনিক এপার-ওপার যাতায়াত করে। এলাকার গরীব জনগনের কথা চিন্তা করে আমরা ইজারাদার হিসাবে এ ঘাটের খেয়া নৌকার থেকে কোন টাকা নেই না। যে কারণে এলাকার লোকজন মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকা ভাড়া দিয়ে আড়িয়াল খাঁর মতো বড় একটি নদি পারাপার হতে পারছে।
এরপরেও বহিরাগত এসব কিশোর যুবকরা মাঝে মাঝেই ঘাটে এসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
লঞ্চঘাট ঘুরে স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকানদারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আশেপাশের কিছু বখাটে যুবক নিয়মিত লঞ্চঘাট এলাকায় এসে বাজে আড্ডায় লিপ্ত হয়।তারা ঢাকা থেকে আসা ঘাটে অবস্থান করা লঞ্চে উঠে আড্ডা দেয় এবং নেশা করে। লঞ্চ স্টাফরা কিছু বলতে সাহস পায় না। আর কিছু বললে তাদের গালাগালি করে। এই লঞ্চ ঘাটের দুইশ গজের মধ্যে ১ নম্বর পুলিশ ফাড়ি। এলাকার লোকজনের দাবি প্রতিদিন অথবা দুই একদিনের ফাকে সকাল ১২টা থেকে ২ টা পর্যন্ত যদি দুইজন পুলিশ ফাড়ি ধেকে এসে ঘাটে টহল দেয়। তাহলে এসব সন্ত্রাসীরা আর ঘাট এলাকায় এসে অপকর্ম করতে সাহস পাবে না।
এদিকে ঘটনার পর থেকে গাঢাকা দিয়েছে ওসব যুবকরা। তাদের বাড়ীতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।
লঞ্চঘাট সংলগ্ন ১নং পুলিশ ফাড়ি ইনচার্জ এসআই মনির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর পর সদর থানা থেকে অফিসার ও ফোর্স এসেছিলো। এ ব্যাপারে খেয়ামাঝি থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আশা রাখি মামলা রেকর্ড হলে আসামীরা দ্রুত গ্রেফতার হবে।’
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার থানায় ছিলাম না। সাইদুল মাল নামে কেউ অভিযোগ দিয়েছে কিনা, সেটা আমার জানা নেই। যদি অভিযোগ দিয়ে থাকে, তদন্ত করে মামলা নেয়া হবে।’