পুলিশের মহানুভবতায় বোবা ছেলেটি ফিরে পেল পরিবার
নিজস্ব প্রতিনিধি মঙ্গলবার রাত ০৯:৪০, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯
নওগাঁ প্রতিনিধি: পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নিখোঁজ হওয়া এক বাকপ্রতিবন্ধী যুবক খুঁজে পেল তার অভিভাবকদের। সোমবার রাত ৯টায় আনুষ্ঠানিক ভাবে বাকপ্রতিবন্ধী রুবেল হোসেন (২৫) কে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা। এ উপলক্ষে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। রুবেল হোসেনের বাড়ি নীলফামারি জেলার সদর উপজেলার কচুকাটা উত্তরপাড়া গ্রামের সাবেক শিক্ষক তৈয়ব আলর ছেলে।
জানাগেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর জেলার সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের সরলী গ্রামে বাকপ্রতিবন্ধী রুবেল হোসেন ঘুরাঘুরি করছিলেন। স্থানীয়রা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও কোন সদুত্তর পাইনি। এতে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধে। পরে থানা পুলিশে বিষয়টি অবগত করা হয়। তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মুখবধীর বলে সনাক্ত করা হয়। তার কাছে তিনটা মোবাইল ফোন থাকলেও তা ছিল অকেজো। সে শুধু নিজের নাম লিখতে পারলেও কোন কিছু বলতে বা লিখতে পারতো না। মানবিক দিক বিবেচনা করে সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই বিষয়টি পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া বিপিএমকে অবহিত করেন। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য এবং লোকটির নাম ঠিকানা ও অভিভাবককে খুঁজে বের করার জন্য সহকারী পুলিশ সুপার (সাপাহার সার্কেল) এবং ওসিকে নির্দেশনা প্রদান করেন। ওসি স্থানীয় সাংবাদিক ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে ছেলেটির পরিচয় জানার চেষ্টা করে। ঘটনার পর থেকে রুবেল হোসেন থানাতেই থাকা ও খাওয়া দাওয়া করত। রুবেল হোসেনের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় থানার কম্পিউটার অপারেটর কনস্টেল তৌহিদকে। কনস্টেল তৌহিদ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে এবং তার আচরণ দেখে তৌহিদ বুঝতে পারে ছেলেটির বাড়ি উত্তরবঙ্গের কোথাও হবে। সেই সূত্র ধরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন থানার মিসিং জিডি পর্যালোচনা শুরু করে সাপাহার থানা। পরবর্তীতে জানা যায় ছেলেটির বাড়ি নীলফামারী জেলায়। ছেলেটির বাড়ি ঠিকানা জোগাড় করে বাবা মাকে জানানো হলে তারা ছুটে আসেন আদরের সন্তানটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ছেলেটিকে (রুবেল) তার বাবা-মার জিম্মায় দিয়ে দেন এবং রুবেলের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য করার আশ্বাস প্রদান করেন। শীতের তীব্রতাকে হার মানিয়ে হারানো সন্তানকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে সান্তাহার থেকে ট্রেনে করে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওয়ানা দেন।
রুবেলের বাবা তৈয়ব আলী বলেন, গত ২০ দিন আগে এক বিকেলে বাবা-ছেলে এক সাথেই ছিলাম। সেদিন তার হাত খরচের জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম। তারপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সর্বশেষ নীলফামারি
বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয়রা তাকে দেখেছিল বলে জানা যায়। এবার দিয়ে চার বার বাড়ি থেকে ভুল করে বাহিরে চলে আসে। চার ছেলেমেয়ের মধ্যে রুবেল হোসেন সবার ছোট। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোন সুফল পাওয়া যায়নি। ছেলেটা মুখবধীর হলেও মানষিক ভারসাম্যহীন। এ নিয়ে সে চতুর্থবারের মত বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন বলে জানান তার বাবা।
সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ছেলেটিকে থানায় নিয়ে আসি। এনে দেখি সে মুখবধীর কিছু বলতে পারছেনা শুধু নিজের নামটা লিখতে পারছিল পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায় আমরা বিভিন্ন উপায়ে তার পরিবারের সন্ধ্যান জানার চেষ্টা করি এবং আমরা তাতে সক্ষম হয়েছি এবং তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।
নওগাঁ পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা সফলতা পেয়েছি। ছেলেটার অনেক বড় বিপদ হতে পারতো। সে বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরেছি। তবে তার কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগীতা করব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ফারজানা হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সুরাইয়া খাতুন, সাপাহার সার্কেল বিনয় কুমার, সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সোহরাওয়ার্দী হোসেন সহ জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।