ঢাকা (দুপুর ১:০৮) বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News সিলেট টিটিসি থেকে ২২ বছর পর বদলী : মালিক হলেন লাল লাখ টাকার! Meghna News গৌরীপুরে হুমায়ূন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী ভক্তদের Meghna News সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বালু বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় শিশু নিহত, চালক আটক Meghna News ভোলার চরফ্যাশনে মোটরসাইকেল-নসিমন সংঘর্ষে দুই বন্ধু নিহত Meghna News যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে ভাই-ভাতিজাকে কুপিয়ে যখম Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ৮ কোটি টাকার ভারতীয় অলংকারসহ আটক-১ Meghna News দক্ষিণ সুরমা আলমপুর ফায়ার সার্ভিসের বাসায় বাসায় অগ্নি-নির্বাপনী-মহড়া Meghna News সিলেটের গোলাপগঞ্জ লক্ষণাবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার Meghna News দাউদকান্দিতে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু

পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী Clock সোমবার বেলা ১২:৫২, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

দুনিয়া ও আখিরাত তথা উভয় জাহানের সব ধরনের কল্যাণ লাভ করার এবং পরকালের সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া নিয়ে আজকের আমার আলোচনা-

ইহকালীন কল্যাণের মধ্যে জাগতিক সব বিষয় শামিল রয়েছে। যেমন মানসিক শান্তি, সুপ্রশস্ত নিবাস, উত্তম ও সুদর্শন জীবনসাথী, জীবিকার প্রাচুর্য, উপকারী ইলম ও সুখকর প্রশংসা ইত্যাদি।

পরকালের কল্যাণের মধ্যে রয়েছে সব রকম ভীতিকর বিষয় থেকে মুক্তি, হিসেব সহজ হওয়া এবং আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পুরস্কার জান্নাত লাভ করা। জাহান্নাম থেকে নাজাতের প্রার্থনায় রয়েছে যেসব কাজ দ্বারা জাহান্নামে অগ্নিদগ্ধ হতে হবে, সেসব গোনাহ, পাপ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকে দুনিয়ায় বেঁচে থাকার সামর্থ্য লাভ করা।

পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়াটি সর্বদা পাঠ করতেন।

পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া-

বাংলা উচ্চারণ:

‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। (সূরা বাকারা : ২০১)।

দোয়ার ফজিলত:

বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত কাতাদা (রহ.) সাহাবি হজরত আনাস (রা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, নবীজী (সা.) কোন দোয়া বেশি করতেন? উত্তরে আনাস (রা.) উপরোক্ত দোয়ার কথা জানালেন। তাই আনাস (রা.) নিজেও যখন দোয়া করতেন তখনই দোয়াতে উক্ত আয়াতকে প্রার্থনারূপে পাঠ করতেন। এমনকী কেউ তার কাছে দোয়া চাইলে তিনি তাকে এ দোয়া দিতেন।

একদা তিনি মন্তব্য করেন, আল্লাহ তায়ালা এ দোয়াতে দুনিয়া ও আখেরাতের সব কল্যাণ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা একত্রিত করে দিয়েছেন।

একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এক রোগী দেখতে গেলেন। তিনি দেখলেন, রোগী একেবারে হাড্ডিসার হয়ে গেছে। নবী (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আল্লাহর কাছে কি কোনো প্রার্থনা করেছিলে? সে নিবেদন করল, হ্যাঁ। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, হে আল্লাহ! আমার পরকালের শাস্তি আপনি আমাকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। নবী (সা.) আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা কি কারো আছে? তুমি এখন থেকে এ দোয়া করতে থাক, রাব্বানা আতিনা…।’ দেখা গেল, এ দোয়ার বরকতে আল্লাহ তায়ালা তাকে আরোগ্য দান করলেন।

অন্য আরেক বর্ণনায় আছে, নবী (সা.) রুকনে ইয়ামানি (কাবা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ) ও রুকনে আসওয়াদের (কাবা শরিফের দক্ষিণ কোণ) মাঝে উপরোক্ত দোয়া করতেন। তাই হজ ও ওমরার তাওয়াফকালে এ দোয়া পড়তে থাকা সুন্নত।

হাসানা শব্দের ব্যাখ্যা:

বর্ণিত দোয়ার গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় অংশ হলো ‘হাসানা’ শব্দটি। বাংলায় এর অর্থ—সুখ, কল্যাণ, মঙ্গল ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা; হাসানা শব্দকে দুনিয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন আবার আখেরাতের জন্যও ব্যবহার করেছেন। দুনিয়ার হাসানাকে ব্যাখ্যা করতে যেয়ে হজরত আলী (রা.) বলেছেন, নেককার স্ত্রী। ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, নেককার সন্তান ও জনপ্রিয়তা। হজরত কাতাদা (রহ.) বলেছেন, সুস্বাস্থ্য ও পর্যাপ্ত রিজিক। হজরত হাসান (রহ.) বলেছেন, দ্বীনী জ্ঞান ও ইবাদতের তওফিক। সুদ্দি (রহ.) বলেছেন, উপকারী সম্পদ। হজরত জাফর (রা.) বলেছেন, বুজুর্গদের সান্নিধ্য। আল্লামা আলুসি (রহ.) উপরোক্ত ব্যাখ্যাগুলো উদ্ধৃতি করার পর মন্তব্য করেছেন, ‘আসলে হাসানা একটি ব্যপক শব্দ। কল্যাণ ও সুখের নির্দিষ্ট একটি দিক বা উপকরণ এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ সুখ ও কল্যাণ এখানে উদ্দেশ্য হবে। আমাদের পূর্বসূরি মুফাসসিররা হাসানার ব্যাখ্যা নির্দিষ্ট করার জন্য উপরোক্ত মতগুলো পেশ করেননি। বরং তারা সহজে বুঝার জন্য উদাহরণ দিয়েছেন মাত্র।’

মোট কথা, দুনিয়ার হাসানা ও আখেরাতের হাসানা বলতে বুঝায়, মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবনের সব প্রয়োজন পূরণ হওয়া এবং উভয় জীবনে সুখ, শান্তি ও আরাম-আয়েশে থাকা।

দোয়ার শিক্ষা: জীবনের উদ্দেশ্য বিবেচনাতে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত। যথা-

(১) কিছু মানুষ দুনিয়াকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করে। দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তি, সম্পদ, সম্মান, প্রতিপত্তি ইত্যাদি তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তারা যা কিছু করে সব কিছু দুনিয়ার স্বার্থে করে। এমনকী তারা যদি নামাজ পড়ে, হজ করে, জিকির করে, তাসবিহ পাঠ করে, মোনাজাত করে তবে এগুলোও দুনিয়ার জন্যই করে। যদি শোনে এ তাসবিহ পড়লে ধন বাড়বে তারা আগ্রহের সঙ্গে তা আমল করে। কিন্তু যদি শোনে এ তাসবিহ পড়লে আল্লাহ রাজি হবেন বা জাহান্নাম থেকে বাঁচা যাবে তবে এ আমল করতে তারা কোনো আগ্রহবোধ করেন না।

(২) কিছু মানুষ দুনিয়ার সুখ চায় আবার আখেরাতের সুখও চায়। দুনিয়ার জন্যও তারা মেহনত করে আবার আখেরাতের জন্যও মেহনত করে। তবে আখেরাতের জীবন ও সুখ তাদের কাছে প্রধান বিষয়। যদি আখেরাত ঠিক রাখতে যেয়ে কখনো দুনিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে তারা দুনিয়ার ক্ষতি মেনে নিয়ে হলেও আখেরাত ঠিক রাখে। তারা দুনিয়ার সুখের জন্য আখেরাত ধ্বংস করতে রাজি না। হ্যাঁ, আখেরাত ঠিক রেখে দুনিয়ার যতটুকু সুখ, শান্তি লাভ সম্ভব ততটুকুর জন্য তারা আগ্রহী থাকে।

(৩) কিছু মানুষ দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও প্রয়োজনকে অস্বীকার করে। দুনিয়ার জন্য কিছু করতে তারা রাজি না। এমনকী দুনিয়ার সুখের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করাকেও তারা মন্দ দৃষ্টিতে দেখে। আল্লাহর কাছে দুনিয়ার কোনো কিছু চাওয়াকে তারা তাকওয়া ও বুজুর্গির পরিপন্থী মনে করে।

পবিত্র কোরআনে কারিমের উপরোক্ত দোয়া ওপরে বর্ণিত প্রান্তিক দু’শ্রেণি থেকে পৃথক হয়ে দুই নম্বরে বর্ণিত মধ্যপন্থী হওয়ার শিক্ষা দেয়। এ দোয়া ওপরে বর্ণিত দু’ধরণের সঙ্কীর্ণ চিন্তা থেকে বের হয়ে এসে দুই নম্বরে বর্ণিত মুক্তচিন্তা লালনের শিক্ষা দেয়।

জাগতিক সুখকে একমাত্র লক্ষ্য স্থির করা বা তাকে প্রাধান্য দেয়া হবে মানব জীবনের সবচেয়ে চরম ভুল সিদ্ধান্ত। শুধু দুনিয়া লাভের বাসনা ও আকাঙ্ক্ষার নিন্দা করে সূরা বাকারার ২০০ নন্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা এমনটি করবে আখেরাতে তারা কিছুই পাবে না।’

আবার দুনিয়াকে একেবারে অস্বীকার করা, দুনিয়ার প্রয়োজনকে অস্বীকার করা ইত্যাদি কাজ হবে নবীদের সুন্নত ছেড়ে দেয়ার নামান্তর। কেননা, নবীরা আল্লাহর কাছে সন্তান প্রার্থনা করেছেন, বিয়ে করেছেন, হালাল উপার্জনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

যারা আখেরাতের জীবনের সুখ-শান্তিকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার প্রয়োজন পূরণের জন্য হালাল উপায় অবলম্বন করবে এবং উভয় জগতের সব প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, ‘তারা (দুনিয়া-আখেরাতে) তাদের আমলের বিনিময় পাবে।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত ২০২)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT