কুড়িগ্রামে পুলিশ হেফাজত থেকে পালানো আসামী, শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আটক
মোঃ কামরুজ্জামান শনিবার বিকেল ০৪:৩০, ৯ মে, ২০২০
সাজাদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী থানায় বিজিবি কর্তৃক আটক মাদক মামলার আসামী পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়ার ৮ ঘন্টার ব্যবধানে পু্লিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানের নির্দেশনায় কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এক শ্বাসরুদ্ধ কর অভিযান পরিচালনা করে ঐ আসামীকে আটক করার কথা জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৮ মে) নাগেশ্বরীতে বিজিবি কর্তৃক কুড়িগ্রাম শহরের দাদামোড় চৌধূরী পাড়ার মৃত ঈসমাঈল হোসেনের পুত্র হামিদুল ইসলাম ওরফে আলমুর মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় আটক হয়। নিয়মানুযায়ী নাগেশ্বরী থানায় মাদক মামলা রজু করে আসামী হস্তান্তর করা হয়। অতঃপর নাগেশ্বরী থানা আটক আসামীকে কুড়িগ্রাম জেল হাজতে প্রেরনের উদ্দেশ্যে মামলার কাগজপত্র সহ ২ জন পুলিশ কনষ্টেবল কে দায়িত্ব দিয়ে ওই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে ইজি বাইকে করে পাঠানো হয়। কুড়িগ্রাম জেল হাজতে যাওয়ার পথে কুড়িগ্রাম শহরের পুরাতন ঈদগাহ মাঠের সামনে পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামী হামিদুল ইসলাম ২০ কিঃমিঃ এর যাত্রাপথে সুযোগ বুঝে কৌশলে বন্ধন খুলে অটো থেকে লাফ দিয়ে দৌড়ে আবাসিক এলাকার ভিতর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ হেফাজতে আসামীর পলায়ন বিষয়টি নাগেশ্বরী থানা অফিসার ইনচার্জ রওশন কবীর তৎক্ষণাৎ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম’র নজরে নিয়ে আসেন। জেলা পুলিশ কুড়িগ্রামের সুযোগ্য ও দক্ষ পুলিশ সুপার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে ঐ পলাতক আসামীকে গ্রেফতারে একটি টিম গঠন করে তড়িৎ পদক্ষেপ নেন বলে নাগেশ্বরী থানা অফিসার ইনচার্জ রওশন কবীর জানান। পলাতক আসামী হামিদুল ইসলাম ওরফে আলমুর ৮ ঘন্টার পুলিশী অভিযানে আটক হওয়ার পর সদর থানা সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সুপার এ অভিযানে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাফুজার রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করে আসামী গ্রেফতারে সফল হন। কুড়িগ্রাম সদর থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান এ প্রতিবেদক কে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বলেন, এ ঘটনার পর মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয় আমাকে এ অভিযানের দায়িত্ব অর্পণ করলে স্যারের নির্দেশনায় ও পরামর্শে অভিযানের গোপনীয়তা রক্ষা করে, শহরের সকল প্রবেশ ও বহির্গমন পথে নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়। পলাতক আসামীর অতীত রেকর্ড সহ পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করে সেখানকার একটি ক্লু কে সামনে রেখে শ্বাসরুদ্ধকর এক কৌশলী অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশনা দেন এসপি মহিবুল ইসলাম । একের পর এক প্রচেষ্ঠা ও ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ওয়ার্ক করে অবশেষে রাত মাগে ১০টার দিকে কুড়িগ্রাম ধরলা সেতুর পশ্চিম প্রান্তের মাটিকাটা মোড় এলাকায় পুলিশের পাতানো জালে আসামী আটক হয়। নাগেশ্বরী থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা পলাতক এই ধুরন্ধর আসামী এখন সদর থানার হেফাজতে রয়েছে বলে জানা যায়। এ অভিযানে নাগেশ্বরী থানা অফিসার ইনচার্জ রওশন কবীর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাফুজার রহমানের নেতৃত্বে সদর থানার একটি চৌকস টিম ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ওয়ার্ক করে পলাতক আসামী আটকে সফল হন । কুড়িগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মাহফুজার রহমান বলেন, এ অভিযান আমাদের সুযোগ্য এসপি স্যারের নির্দেশনায় পরিচালিত হওয়ায় আমরা সকলে আত্মবিশ্বাসি ছিলাম ফলে সফলতা এসেছে। উল্লেখ্য, এ অভিযানে পলাতক আসামীর আপন ভাই আজিজুল বেশ কয়েকটি মামলার আসামী এমন তথ্যে নিশ্চিত হয়ে পুলিশ কৌশলে তাকে নিয়ন্ত্রনে নেয়। প্রায় ১০ এর অধিক মামলায় জামিনে থাকা আসামী পুলিশ হেফাজত থেকে পলাতক হামিদুলের ভাই আজিজুল কে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে সতর্কতার সাথে গোপন হানা দিয়ে পুলিশের জালে আসামীকে আটকানো হয় বলে জানা গেছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জানান, আসামী আটকের পর জেল হাজতে প্রেরণ পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। এ ঘটনায় পুলিশি দায়িত্বে অবহেলায় ইতিমধ্যে দুই পুলিশ কনষ্টেবল কে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং আসামী প্রেরনের সময় নাগেশ্বরী থানার ডিউটি অফিসার কেও দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কর্তব্যরত সকল পুলিশ সদস্যদের এরকম অনাকাংখিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা সহ পুলিশ সদস্যদের কর্মমুল্যায়ন করে তাদের আরো সচেতন ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম।