ঢাকা (রাত ১১:১০) রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News গণ হত্যার বিচারের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমা পড়েছে ১০৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৩ Meghna News সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে সিনিয়র নার্সিং অফিসার নজরুল ইসলাম বাবুলের বিদায় সংবর্ধনা Meghna News মেঘনা উপজেলা শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদে চলছে সদস্য সংগ্রহ Meghna News দাউদকান্দিতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা Meghna News সাবেক এমপির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ মৎস্যজীবীদের Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দায় প্রাণ গেলো যুবকের Meghna News বন্যার্তদের মাঝে ময়মনসিংহ রোভার স্কাউটের ত্রাণ বিতরণ Meghna News আজ সাবেক উপমন্ত্রী নূরুল আমিন খান পাঠানের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী Meghna News গৌরীপুরে উদীচীর উদ্যোগে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন

ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ সম্পদ

ইসলাম ধর্ম ২২৬০ বার পঠিত

মেঘনা নিউজ ডেস্ক প্রতিবেদকঃ মেঘনা নিউজ ডেস্ক Clock প্রকাশের সময়ঃ রবিবার সকাল ০৯:৫৩, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বস্তুগত, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ-এসবই মানুষের চাহিদার অংশ। যারা বস্তুগত সম্পদ ও বস্তুগত আনন্দ বা তৃপ্তি থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে মহান আল্লাহ তাদের তিরস্কার করেছেন। এ প্রসঙ্গে সূরা আরাফের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: আপনি (রাসূল-সা.) বলুনঃ আল্লাহ সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন পবিত্র খাদ্রবস্তুগুলোকে-সেগুলোকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটি বা খাসভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।
অন্যদিকে যারা বস্তুগত সম্পদকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে চান তাদেরকেও যেমন ইসলাম সমর্থন করে না তেমনি যারা এ ধরণের সম্পদের প্রতি মোহগ্রস্ত ইসলাম তাদেরকেও বিভ্রান্ত বলে মনে করে। সূরা আলে ইমরানের ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত সোনা-রূপা, চিহ্নিত বা বাছাইকৃত ঘোড়া, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ-সামগ্রী। আল্লাহর কাছেই রয়েছে উত্তম আশ্রয়।
অন্য কথায় পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে ছয়টি বস্তুগত সম্পদের দিকেই রয়েছে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ। এ ৬টি সম্পদ হল, নারী, সন্তান, নগদ অর্থ বা সোনা-রূপা প্রভৃতি, উন্নত প্রজাতির ঘোড়া বা আধুনিক যুগের প্রেক্ষাপটে গাড়ি, গৃহপালিত পশু এবং ক্ষেত-খামার বা কৃষি-পণ্য। কিন্তু কোরআন এটাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, এসব সম্পদই মানব-জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, বরং এসব সম্পদ হচ্ছে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের জন্য মাধ্যম মাত্র। তাফসিরে নমূনার ভাষ্য অনুযায়ী আসলে আল্লাহ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য যাতে তারা শিক্ষা নেয় এবং আত্মগঠন ও পরিশুদ্ধির মাধ্যমে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। দুর্নীতি ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য আল্লাহ এসব সম্পদ মানুষকে দান করেননি। তাই এটা স্পষ্ট বস্তুগত সম্পদের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ আকর্ষণই ইসলামের কাম্য। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত আকর্ষণ বা পুরোপুরি বর্জন-এসব চরমপন্থার বিরোধিতা করে ইসলাম। স্বচ্ছল জীবন-যাপনের জন্য প্রচেষ্টা চালানোর পক্ষে কথা বলে এ পবিত্র ধর্ম।
কিন্তু ইসলাম দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অগ্রাহ্য করে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ জমাতে বা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে নিষেধ করে। এখন প্রশ্ন হল, অস্থায়ী সম্পদ বা বস্তুগত সম্পদ কি মানুষের জন্য প্রকৃত সুখ ও শান্তির পাথেয় তথা প্রকৃত সঞ্চয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? কাফের বা অবিশ্বাসীরা বস্তুগত সম্পদকেই জীবনের সবচেয়ে কাঙ্খিত বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে। কোরআন তাদের এ ধারণার অসারতা তুলে ধরেছে। অবিশ্বাসীরা মনে করে মানুষের বাহ্যিক সুন্দর চেহারা বা অবয়ব, দামি পোশাক, সম্পদ ও অর্থ-কড়ি প্রভৃতি ক্ষণস্থায়ী বা অস্থায়ী বিষয়গুলোই সবচেয়ে জরুরি সম্পদ। অথচ মানুষের জন্য সবচেয়ে জরুরি ও প্রকৃত স্থায়ী সম্পদ হল সৎ চরিত্র এবং সৎ গুণাবলী তথা প্রকৃত মানুষ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন। মানুষের এ সম্পদই অমূল্য বা কেনা-বেচার সাধ্যাতীত। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  আবির্ভাবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল সুন্দর ও উন্নত নৈতিক গুণের প্রসার ঘটানো। তিনি নিজেই বলেছেন: “নৈতিক গুণাবলীকে পরিপূর্ণতা দেয়ার উদ্দেশ্যেই আমাকে রাসুল হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।”
কোরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়” (আল আলা-১৩)। অথবা যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করল সে-ই সফল হল এবং যে নিজেকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ হয় (আশ-শামস ৮-৯) । অন্য সব প্রাণীর সাথে মানুষের পার্থক্য হল মানুষকে প্রাণপন চেষ্টায় মানুষ হতে হয়, কেবল জ্ঞানই ভাল মানুষ হওয়ার মানদণ্ড নয়। তাই মুসলিম জ্ঞানী-গুণীদের মধ্যে প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী হল: ‘জ্ঞানী হওয়া সহজ, কিন্তু মানুষ হওয়া কঠিন’। পরিশুদ্ধ ও পবিত্র অন্তর ছাড়া মানুষ পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। সৎ গুণগুলোকে ফুলে -ফলে বিকশিত করাই মানুষের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সাধনার মূল লক্ষ্য। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সৎকর্মশীল ও সদাচারীদের ব্যাপক প্রশংসা দেখা যায়। যেমন, সূরা আল ফোরকানের ৬৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,  রহমানের খাস বান্দা তো তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকরা যখন তাঁদের সাথে (অশালীন ভাষায়) কথা বলে বা সম্বোধন করে, তখন তাঁরা (মহানুভবতা ও ক্ষমাশীলতা নিয়ে) বলেন, তোমাদের সালাম বা তোমরা শান্তিতে থাক।
ন্যায়কামী, সৎ মানুষ ও সদাচারী হওয়ার আরেকটি সুবিধা হল তাঁরা মানুষের শ্রদ্ধা পান এবং তাঁরা মানুষের মন জয় করেন। আর যাদের নৈতিক চরিত্র দূর্বল বা যারা নীতিহীন তারা ঈমানহীন মানুষের মতই অন্যের অধিকার পদদলিত করে। যেমন, এ ধরণের মানুষ অন্যকে দেয়া ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে। সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বিশ্বনবী (সা.)কে বলেছেন, আল্লাহর রহমতেই আপনি মানুষের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, কিন্তু আপনি যদি রাগী ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতো।
বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে যার মূল কথা হল, মানুষের ব্যবহারই তার আসল পরিচয় তথা ভেতরের স্বরূপ ফুটিয়ে তোলে। তাই এটা স্পষ্ট চরিত্র বা নৈতিকতাই হল মানুষের জন্য সবচেয়ে দামী ও স্থায়ী সম্পদ। এ সম্পদের সাথে বস্তুগত সম্পদের কোনো তুলনাই হয় না। অন্য সব কিছু হারিয়ে গেলেও বা সদগুণে বিভূষিত মানুষেরা মানবজাতির হৃদয়ে স্থায়িত্ব লাভ করেন। এখন কথা হল, সৎ গুণাবলী কিভাবে অর্জন করা যায়? খোদাভীতি বা আল্লাহর ভয় এবং ইসলামী শিক্ষা ও বিধানের অনুসরণ সৎ গুণাবলী অর্জনের অন্যতম পন্থা। বেশি বেশি সৎ কাজ ও সদাচারণ মানুষের খারাপ স্বভাবকে দমিয়ে রাখে ও ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়।
কোনো কোনো মানুষ ঘরের বাইরে অন্যদের সাথে ভাল আচরণ করলেও ঘরে এসে স্ত্রী-পুত্র এবং পরিবার পরিজনের সাথে রুক্ষ্ম ও অশোভনীয় আচরণ করে। এ ধরণের মানুষকে ভাল মানুষ বলা যায় না। প্রকৃত চরিত্রবান ও সদাচারী তাকে বলা যায় যে সব সময়ই ন্যায়-বিচার বজায় রাখেন এবং সবার সাথেই ভদ্র আচরণ করেন। মহাপুরুষদের জীবনী পড়ে এবং তাদের কর্মপন্থা অনুসরণ করেও আমরা সদগুণের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করতে পারি।
মৃত্যুর পর আমাদের আবার পুণরুত্থান হবে, তখন ইহজীবনের প্রতিটি কাজের জন্য হিসেব দিতে হবে, বিশেষ করে খারাপ বা অন্যায় কাজগুলোর জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে, সে কথা সবারই মনে রাখা উচিত।
আমাদের ভাবা উচিত, কবরের আযাবসহ পরকালের বা নরকের শাস্তি এত তীব্র ও দীর্ঘ যে তা সহ্য করার ক্ষমতা কোনো মানুষেরই নেই।তাই আমাদের উচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে চলে শ্রেষ্ঠ নৈতিক গুণগুলো অর্জনের চেষ্টা করা, ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শয় আদর্শিত হওয়া।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শয় আদর্শিত হওয়ার তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখকঃ বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।



শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT