এস এম সাখাওয়াত মঙ্গলবার সকাল ১০:৪৫, ১ অক্টোবর, ২০২৪
অপারেশন ঈগল হান্টের নামে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে স্বামী মৃত আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবু মরিচকে হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে নিহতের স্ত্রী মামলার আবেদন করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আবু নিহতের দীর্ঘ ৮ বছর পর স্ত্রী মোসা. সুমাইয়া খাতুন (৩০) এর পক্ষে শিবগঞ্জ থানায় মামলাটি দাখিল করেন তার ভাই সানাউল্লাহ সুলভ। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দাখিলকৃত মামলার আবেদনে প্রধান আসামী করা হয়েছে অপারেশন ঈগল হান্টের আভিযানিক দলের উপ-পরিদর্শক সাব্বির আলম চৌধুরীকে।
শিবগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল আলম, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন, কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সাবেক প্রধান মুনিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীসহ মোট ১৮ জনকে আসামী করা হয়।
মামলার আবেদন সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার গভীর রাতে পুলিশ, র্যাব, কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট ও সোয়াট টিমের যৌথবাহিনীর দল জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় মসলা ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুর বাড়ি ঘেরাও করে গোলাগুলি আরম্ভ করে। এ সময় ঘুম ভেঙ্গে বাড়ি থেকে বের হবার চেষ্টা করলেও বাড়ির বাইরে থেকে মুল ফটক বন্ধ থাকায় আবু, তার স্ত্রী সুমাইয়া ও ৩ শিশু সন্তান বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। এ সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় পুরো বাড়ি ভুতুরে অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরদিন একই কায়দায় আবারো গোলাগুলি আরম্ভ হওয়ায় টানা ৩ দিন পুরো পরিবারটি না খেয়ে ঘরের এককোনে পড়ে ছিলেন। এদিকে তৃতীয় দিন গোলাগুলির একপর্যায়ে বাড়িতে প্রধান আসামীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশ করে মসলা ব্যবসায়ী আবুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে তার মরদেহ জঙ্গি হিসেবে দাবী করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সেই সাথে নিহতের স্ত্রী সুমাইয়াকে আটক করে নিয়ে যায়। আহত সুমাইয়া দেড় মাস চিকিৎসা শেষে জেলে এবং ২ বছর পর জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এর ২ দিন পর ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে ২টি হেলিকপ্টারে করে ৩টি বস্তাবন্দি মরদেহ আবুর বাড়ি নিয়ে গিয়ে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে মরদেহ ৩টির সাথে বিস্ফোরক বোমের দেহগুলোতে বিস্ফোরিত হলে সেগুলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মামলার আবেদনকারী সুমাইয়ার ভাই সানাউল্লাহ সুলভ দাবী করেন, তার ভগ্নিপতি বা দুলাভাই বিএনপির কট্টর সমর্থক হওয়ায় তাকে হত্যার পর মরদেহ গুলোতে আবারো বিস্ফোরন ঘটিয়ে মরদেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
গুম হওয়া বিএনপি কর্মী রেজাউল ও নিহত মিজানুরের ভাই সেতাউর রহমান জানান, শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে তার দুই ভাইকে হত্যা ও গুম করে জঙ্গি নাটক সাজিয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক ওবায়েদ পাঠান বলেন, আওয়ামীলীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র বিএনপি রাজপথে সোচ্চার থাকায় জঙ্গি নাটকে বেশি মারা গেছে এ জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য এই মামলা করা হচ্ছে। আশা করি এর সুষ্ঠু বিচার পাবে তার পরিবার।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, মামলার আবেদন পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে মামলা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় সকল আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।