ঢাকা (রাত ১১:২৬) সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

Join Bangladesh Navy


৩০বছরেও শেষ হয়নি তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock শুক্রবার দুপুর ০৩:২৩, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০

সুনামগঞ্জ জেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ‘‘তাহিরপুর-বাদাঘাট” সড়কের নির্মাণ কাজ গত ৩০বছরেও শেষ হয়নি। অথচ দেশের পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে পরিচিত এই তাহিরপুর। এখানে রয়েছে বালি ও পাথর সমৃদ্ধ যাদুকাটা নদী। আরো রয়েছে বিশ^ নন্দিত দৃষ্টি নন্দন পর্যটন কেন্দ্র টাংগুয়ার হাওর,টেকেরঘাট, বারেকটিলা,শিমুলবাগান ও শাপলার বিল। এছাড়াও রয়েছে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানীর ৩টি শুল্ক স্টেশন। সরকার প্রতিবছর এই তাহিরপুর উপজেলা থেকে আদায় করছে কোটিকোটি টাকা রাজস্ব। তারপরও এই উপজেলাবাসীর দূর্ভোগের শেষ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- জেলার তাহিরপুর উপজেলার মাঝে ‘‘তাহিরপুর-বাদাঘাট’’ সড়কটি হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সড়কটি নির্মাণের নামে প্রতিবছর চলে নানান নাটকীয়তা। সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সড়কের নির্মাণ কাজ না করার কারণে প্রতিবছরই সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা নষ্ট হচ্ছে। আর সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই উপজেলার লক্ষলক্ষ মানুষকে। সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে বর্যাকালে ইঞ্জিনের নৌকায় চলাচল করতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে কাচা ও পাকা ভাংগাচুরা সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে হতে হচ্ছে দূঘটনার শিকার। কিন্তু তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের মোট দৈর্ঘ্য মাত্র সাড়ে ৮ কিলোমিটার। তার মধ্যে তাহিরপুর সদর হতে টাকাটুটিয়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার আরসিসি পাকা সড়ক। যার বেশির ভাগ অংশ ভাংগা। এসড়কের পোছনারঘাট এলাকা হতে পাতারগাঁও গ্রাম হয়ে চকবাজার পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার পুরোটাই মাটির সড়ক। আর এই ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ গত ২ যুগেও শেষ হয়নি। অথচ প্রতিবছর এই ১ কিলোমিটার মাটির সড়কটি নির্মাণ করার জন্য সরকার কর্তৃক লক্ষলক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুধুমাত্র অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে এই ১ কিলোমিটার মাটির সড়কটি বর্তমানে লক্ষলক্ষ মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আর চকবাজার হতে বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত বাকি ৪ কিলোমিটার রয়েছে পাকা সড়ক। এই সড়কটি আংশিক ভাংগা হলেও মানুষ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে সারাবছর যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু এই সড়কের মাঝখানে অবস্থিত পোছনারঘাট হতে চকবাজার পর্যন্ত মাত্র ১ কিলোমিটার মাটির সড়কটি বর্যাকাল আসলেই পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে যায়। এবং এই সড়কের কয়েকটি স্থান পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই বর্যার প্রায় ৩-৪ মাস জীবনের ঝুকি নিয়ে এই ডুবন্ত জায়গা নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে স্থানীয় নেতৃবন্দদের সহযোগীতায় উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে লক্ষলক্ষ টাকার বিনিময়ে ভাংগা সড়কটি লিজ নেয়। এরপর সারাবছর মাটির এই সড়কের উপর চলে টাকা খেলা। কিন্তু এসব অনিয়ম ও দূর্নীতি যেন দেখার কেউ নেই।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন,আব্দুস সালাম,নুর আলী,আশরাফ আলী,আব্দুর রহমান, ইসলাম উদ্দিনসহ আরো অনেক ভোক্তভোগীরা বলেন- তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের সাড়ে ৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাত্র ১ কিলোমিটার মাটির রাস্তা “পোছনারঘাট হতে চকবাজার” পর্যন্ত সঠিক ভাবে নির্মাণ করলেই সারাবছর বিভিন্ন যানবাহন দিয়ে মানুষ যাতায়াত করতে পারত। কিন্তু এলজিইডির সহযোগীতায় সংশ্লিস্ট ঠিকাদাররা অসময়ে রাস্তার নির্মাণ কাজ করার কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির নির্মাণ আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। উজান তাহিরপুর গ্রামের রিক্সাচালক শামসু মিয়া বলেন- আমার শান্তি পরিবহণ নিয়ে খুবই অশান্তির মাঝে আছি শুধুমাত্র সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য। গত ৩০বছর যাবত চলছে এই সড়কের নির্মাণ কাজ। কিন্তু শেষ হবে কবে।

জয়নাল আবেদিন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আলী মর্তুজা,বাদাঘাট বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রাশিদ ভূঁইয়া,কবির ভূঁইয়াসহ আরো অনেকেই বলেন- জনগুরুত্বপূর্ণ ‘‘তাহিরপুর-বাদাঘাট” সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। এই উপজেলাবাসীর অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। তাহিরপুর উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক রমেন্দ্র নারায়ন বৈশাখ,পল্লী চিকিৎসক সুলতান মাহমুদ,যাত্রীবাহী মোটর সাইকেল চালক হান্নান,সুমন মিয়া বলেন- তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে এই উপজেলার লক্ষলক্ষ মানুষ যুগযুগ ধরে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা করছি।

তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল করিব বলেন- তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের বিষয়ে আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পাঠিয়েছি,প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ পেলে শীগ্রই এই সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পর্ণ করা সম্ভব হবে। তাই এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতা কামনা করছেন তাহিরপুর উপজেলার লক্ষলক্ষ অসহায় ভোক্তভোগী জনসাধারণ।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT