ভোলায় লকডাউনে দূচিন্তায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ম আয়ের মানুষ
কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা শনিবার রাত ১১:০৪, ১০ জুলাই, ২০২১
দেশব্যাপী করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রণে চলছে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুম। এই বর্ষা আর লকডাউনের কারণে চরম বিপাকে এবং দূচিন্তায় পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ম আয়ের মানুষগুলো। তারা এখন নিজ পরিবারের জন্য কিভাবে খাবার যোগার করবেন বা সংসার চালাবেন এ নিয়ে দূচিন্তায় রয়েছেন।
শনিবার (১০জুলাই) একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কঠোর বিধি-নিষেধে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। তাদের প্রতিমাসে দোকান ভাড়া, বাসা ভাড়া, গুদাম ভাড়া, স্টাফদের বেতন, বিদ্যূৎ বিল ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে দূচিন্তায় রয়েছেন।
এদিকে যারা দিন আনে দিন খায় রিক্সা চালক,ভ্যান চালক, দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে যারা কাজ করে যেমন রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, শ্রমিক শ্রেণীর লোকজন কাজ করতে না পেরে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূচিন্তায় পরেছেন। অনেক দৈনিক তিন বেলার পরিবর্তে এক বা দুইবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অনেক আবার ধার দেনা কেউবা সুদের উপর টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন বলে জানান।
বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার মোড়ে কিংবা বাজারের পাশে ফুটপাতে বসে জুতা, তালা-চাবি মেরামত কিংবা ছাতার কারিগররা। একদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি আবার অন্যদিকে কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে সাধারণ মানুষের আনাগোনা নেই। আর মানুষ যদি না থাকে তাহলে তাদের কি হবে, কিভাবে চলবে সংসার এমনটাই বললেন তারা।
ভোলার চরফ্যাশনে শশীভূষণ গ্রামের জুতার কারিগর হরলাল শশীভূষণ বাজারের ফুটপাতের পাশে বসেন। কিন্তু মানুষজন না থাকায় খুব কষ্টে আছেন। স্বপন জানায়, লকডাউন চলার কারণে কোনও কাজ নেই। আমার পরিবারে দু’জন সদস্য। সবাই আমার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই বসে আছি, কিছু আয় হয় সে আশায়।
শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জগদিস জানায়, লোকজন না থাকলে আমার কিভাবে আয় হবে। জেলার সব জায়গার জুতার কারিগরদের একই অবস্থা।
ছাতা কারিগর মোঃ ছলেমান বলেন, বর্ষা মৌসুম চলছে। তারপরও কোনও কাজ নেই। লকডাউনের কারণে মানুষজন বের হয় না। এতে কাজ নাই। আমরা এবার সাহায্য সহযোগিতাও পায়নি। সংসার কি ভাবে চালাবো দূচিন্তায় আছি।
রিকশা চালক বাকের বলেন, আমার সংসারে ৭জন সদস্য রয়েছে। আমি রিক্সা না চালাতে পারলে তারা না খেয়ে থাকতে হবে। তাই সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। আমার সংসারে ৭ জন সদস্য রয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে রাস্তায় লোকজন কম থাকায় আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। আমি সরকারী কোন সহযোগিতা পাই নাই।
অটো বোরাক চালক সবুজ মিয়া বলেন, ৫/৬ দিন ধরে বসে ছিলাম বাসায় বাজার নেই। বোরাক চালাতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই পেটের দায়ে ভয়ে ভয়ে বোরাক নিয়ে বের হয়েছি।
আরফুজা খাতুন নামের এক মহিলা বলেন, আমি খাবারের হোটেলসহ ডেকোরেটরে কাজ কাম করে খাই। কিন্তু এখন কাজকাম সব বন্ধ। কী করে যে চলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার ছেলেটাও বেকার হয়ে গেছে। সামনে দিন কিভাবে কাটবে ভেবে সারারাত ঘুমাতে পারছি না।
শশীভূষণ বাজারে সড়কের পাশে চা দোকানী এনায়েত চৌধুরী জানান,কঠোর লকডাউনের কারণে এতদিন দোকান বন্ধ ছিল, জীবন-জীবিকার তাগিতে দোকান খুলে বসলাম তাও বেচা-বিক্রি তেমন একটা নেই।
এদিকে কঠোর বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে ভোলা জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাপিড আ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব), বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসার ব্যাটেলিয়নের সদস্যদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।