বিষ মেরে সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু, নিঃশেষ হচ্ছে মৌমাছি
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বৃহস্পতিবার বিকেল ০৫:২৬, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
মার্কেটের তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার কার্নিসে মৌমাছির চাক বসেছে। ছয় মাসের মাঝারি চাকে অধিক মধু পেতে মধু সংগ্রহ করে না মার্কেট কমিটি। তাই কিছুদিন পরপরই নাইট গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে মৌচাক ভেঙে নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। তবে এবার শুধু মধুই নিয়ে যায়নি তারা। মৌচাকে বিষ মেরে চুরি করেছে মধু। দূর্বৃত্তদের এমন নিষ্ঠুরতায় মারা গেছে মৌমাছিরা।
দূর্বৃত্তদের এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনের ভবনের কার্নিসে থাকা মৌমাছিদের। গত ৮-৯ দিন আগে গভীর রাতে বিষ মেরে মধু চুরির ফলে প্রতিদিন কয়েকশ করে মৌমাছির প্রাণ যাচ্ছে। আর তাই মৌমাছির মতো প্রাণীর সাথে এমন নিষ্ঠুর আচরণের জন্য দোষীদেও চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবী করেছেন স্থানীয়রা।
ভবনটি সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের গ্রাম্য চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত সমবায় সমিতির। সমিতির একজন সদস্য গ্রাম্য চিকিৎসক তোহরুল ইসলামের ফার্মেসী রয়েছে মৌচাকটির নিচেই। তিনি বলেন কে বা কারা ভেঙেছে জানি না। কিন্তু মৌচাক ভেঙে দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে উড়ে আসা মৌমাছিগুলো মৌচাকে বসলেই মারা যাচ্ছে আর ঝরে ঝরে নিচে পড়ছে। মার্কেট কমিটি মৌচাক ভাঙতে দেয় না। তাই রাতের অন্ধকারে চুরি করে মধু ভেঙে নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা।
মৌচাকের সামনে থাকা হোটেলের শ্রমিক মাহিদুর রহমান জানান, গ্রাম্য এলাকা বলে সাধারণত রাত ৯-১০টার মধ্যে হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। মৌচাক ভাঙার দিন রাতে বাসায় যাবার সময় সবকিছু ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু পরের দিন সকালে এসে দেখি কে বা কারা মৌচাক ভেঙে নিয়েছে। এর আগেও কয়েকবার এভাবে রাতের অন্ধকারে মধু চুরি করে নিয়েছিলো কেও। কিন্তু এবার মধু চুরি করেছে তো বটেই মৌচাকো কিছুটা ভেঙ্গে দিয়েছে। আর মধু চুরির পর থেকে মৌমাছিগুলো ওই ভাঙ্গা মৌচাকে গিয়ে বসলেই মরছে। মনে হয় সেখানে বিষ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা ষাটোর্ধ তৌহিদুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে একটা কাজে এসেছিলাম। এরপর দেখি হাজার হাজার মৌমাছি মৌচাকের নিচে মরে পড়ে আছে। পরে জানতে পারলাম বিষ মেরে কেউ মধু ভেঙ্গে নেয়ার কারনে এভাবে অবলা জীব মৌমাছিগুলো মরছে। যে বা যারা এমন জঘণ্য কাজ করেছে তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। এমন ঘৃণিত অপরাধীদের আল্লাহ ক্ষমা করবে না। মৌমাছিগুলো গত কয়েকদিন থেকে ছটপট করতে করতে মরছে।
কলেজ ছাত্র নাসির আহমেদ বলেন, দু-এক মিনিট পর পর একটি করে মৌমাছি মৌচাক থেকে ঝড়ে পড়ছে। নিচে পড়ার পরেও তারা জীবিত রয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ বেঁচে থাকার পর ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। মৌমাছিগুলোর ছটপট দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে কি পরিমাণ কষ্টে তাদেও মৃত্যু হচ্ছে। আগুনের ধোঁয়া দিলেই মৌচাক থেকে মৌমাছি পালিয়ে যায়। মধু সংগ্রহ শেষ হলে পুনরায় মৌমাছিরা এসে মৌচাক গঠন করে। তাই বিষ স্প্রে করে মেরে ফেলার কোন প্রয়োজনই নেই। কাজটা খুব অন্যায় হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এমন জঘন্য কাজের পর অপরাধীদের খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করেছেন তারা। দূর্বৃত্তদেরকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যাতে এমন কাজ ভবিষ্যতে আর কেউ না করে।
এ বিষয়ে পলশা উত্তর পাড়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হযরত আস্তারুল বিন আব্দুস সামাদ জানান, আল্লাহর রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ মারার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মৌমাছি একটি অত্যন্ত উপকারী পতঙ্গ। মৌমাছি ফুলের নির্যাস হতে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধু উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ উপাদান। এই মধু আমরা বিভিন্ন উপকারী কাজে খাদ্য বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করি। তাই এভাবে বিষ দিয়ে মৌমাছি মেরে মধু সংগ্রহ ইসলামের দৃষ্টিতে বড় ধরনের অপরাধ। এটি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হুকুম অমান্য করার শামিল। আর তাই এই কাজের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।