চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১ বিঘা ফসলী জমি হালচাষ দিয়ে নষ্ট করেছে দূর্বৃত্তরা
এস এম সাখাওয়াত রবিবার দুপুর ০২:০৫, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
কোদাল ও হাত দিয়ে জমির নিচ থেকে আলুর বীজ খুঁজছে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা। অথচ মাত্র ১৫ দিন আগেই এই জমিতে বপন করা হয় আলুর বীজ। প্রায় ৪ বিঘা জমিতে সার, বীজ, শ্রমিক মিলে খরচ হয় আড়াই লক্ষ টাকা কৃষক রজিবুল হকের। আশা ছিল সেখান থেকে ভালো লাভের। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে অস্ত্রধারী দূর্বৃত্তরা শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ট্রাক্টর দিয়ে চোখের সামনেই হালচাষ দেয় আলুর জমিতে। এতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় কৃষক রাজিবুলের। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার দুলাহার এলাকায়।
শুধু আলুর জমিতেই নয়, মাস খানেক আগে বপন করা গম, সরিষা ও ধানের বীজতলা মিলে মোট ১১ বিঘা জমি হালচাষ দিয়ে নষ্ট করে দূর্বৃত্তরা। এতে চরম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ধার ও ঋণ করে চাষাবাদের পর এমন নির্মমতায় শেষ সম্বল হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। এতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি প্রকৃত কৃষকদের।
কৃষকদের দাবি, গত ১০ বছর ধরে তারা এই জমি চাষাবাদ করছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গ্রামের সালাউদ্দিন, রবি, পিন্টু, ইউসুফ, তৈমুরসহ ১৫-২০ জন লোক এসে নিজেদের জমি দাবি করে ফসলের উপর দিয়েই ট্রাক্টর চালিয়ে হালচাষ করে। এ সময় বাধা দিতে গেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে থাকা লোকজন ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আর তাই ভয়ে নিজেদেও চাষকৃত জমিতে নামতেই পারিনি আমরা।
কৃষক রজিবুল হক জানান, শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ করেই ১৫-২০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে আসে। আমরা ফসল বাঁচানোর জন্য তাদেরকে অনেক কাকুতি-মিনতি করি। কিন্তু উল্টো আমাদেরকেই নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেখায়। বাধ্য হয়েই দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আলুর জমিতে হালচাষ দিতে দেখেছি আর কেঁদেছি। পাশাপাশি আমার ধানের বীজতলাও সম্পূর্ণভাবে হালচাষ দিয়ে নষ্ট করেছে তারা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কি করব, কি খাব কিছুই বুঝতে পারছিনা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কেরামত আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে জমিটি ফুরান বা ইজারা নিয়ে চাষবাদ করি। কোনদিন কেউ বাধা দেয়নি বা সমস্যায় পড়িনি। ধান ঘরে তুলে ৬ বিঘা জমিতে বরাবরের মত গম চাষাবাদ করেছিলাম। গাছগুলো জমিতে ৫-৬ ইঞ্চি বড় আকার ধারন করেছিল। কিন্তু সেই গমের ওপর দিয়েই ট্রাক্টর চালিয়ে নষ্ট করলো তারা। তাদেরকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম ফসল উৎপাদন করতে দেন এরপর বসে একটা সমাধান টানা যাবে। এতদিনের আবাদ করা জমিটা আসলে কার। আপনাদের নাকি যাদের জমি আমরা এত বছর ধরে চাষাবাদ করি তাদের। কিন্তু কোন কথাই না শুনে আবাদী জমিগুলো তারা নষ্ট করে দিল। আমি বাসায় যেতে পারছি না। অনেক কষ্টে গড়ে তোলা ফসল চোখের সামনে নষ্ট করলেও আমি রক্ষা করতে পারিনি।
জমির অন্যতম অধিকারী আতাউর রহমান বলেন, গত ১০০ বছর ধরে আমরা এই জমি চাষাবাদ করি। আমার দাদার থেকে বাবা এরপর আমরা পৈতৃক সূত্রে এই জমি পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা জমির মালিকানা দাবি করে ট্রাক্টর দিয়ে কৃষকদের সব ফসল ধ্বংস করে দিয়েছে। গরীব মানুষগুলো এখন কিভাবে তাদের সংসার চালাবে এ ভেবেই কষ্ট পাচ্ছি। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, হালচাল দেয়া ১১ বিঘা জমিতে তিন জন কৃষক ফসল চাষাবাদ করেছিলেন। এনিয়ে শুক্রবার রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।