ঘরমুখো যাত্রীদের পদেপদে ভোগান্তি
নিজস্ব প্রতিনিধি শুক্রবার বিকেল ০৫:২৮, ৮ জুলাই, ২০২২
আর মাত্র একদিন পরে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। অফিস শেষ করেই ঢাকা ছেড়েছেন অনেকেই। আবার অনেকেই টুকটাক কাজ শেষ করে আজ শুক্রবার (৮ জুলাই) ভোরেই রওনা হয়েছেন। এদিন রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এই সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে বাস কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে।
সকালে ঢাকার মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলো যাত্রী পরিবহনের ব্যস্ত সময় পার করছে। একের পর এক গণপরিবহন যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন রুটের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। যারা আগে টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা বাসের অপেক্ষা করছেন, আর যারা টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি তারা বিকল্প উপায় খুঁজছেন। কেউ কেউ লোকাল বাস কিংবা ট্রাকে চড়েই গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন।
পরিবহনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরেই যাত্রীদের বেশ চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আজ থেকে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেশ বেড়েছে। আগামীকালও বেশ চাপ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হানিফ পরিবহনের গাবতলী বাস স্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করা মো. রনি বলেন, তাদের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি। যাত্রীর চাপ নিয়ে একই ধরনের কথা জানিয়েছেন শ্যামলী, সোহাগ, এনা ও ঈগল পরিবহনসহ অন্তত পাঁচটি পরিবহন সংস্থার কর্মকর্তারা।
এদিকে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি শুক্রবার (৮ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহী, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি রুটে বিদ্যমান ভাড়া থেকে গন্তব্য-ভেদে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অনুরূপভাবে ঢাকা-কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি প্রতিটি রুটেই ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এই চিত্র অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সবগুলো পরিবহনের কাউন্টার থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে ঈদের যাত্রী চাপ কতটা বেড়েছে দিন শেষে বোঝা যাবে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি ঠিক নয়।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে, বাড়ানো হচ্ছে গাড়ির সংখ্যাও। বিশেষ করে ঈদযাত্রী সড়কপথে এবার পদ্মা সেতু পার হয়ে বাড়িতে বেশি যাচ্ছেন, যোগ করেন তিনি।
এদিকে, সকাল থেকে যাত্রীদের উপচেপড়া চাপ থাকায় অনেককেই বাস কাউন্টারে আসতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাজধানীর সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক গণপরিবহন না পাওয়ায় অনেকে বিকল্প যানবাহনে করে বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। এজন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তাদের। টার্মিনালের আশপাশের সড়কগুলোতে দূরপাল্লার যানবাহন ও কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের কারণে দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। এতেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঘরমুখো মানুষকে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
গণপরিবহন সংকটে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলগুলো। গাবতলী বাস টার্মিনালে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামছিলেন কয়েকজন যাত্রী, কথা হয় তাদের সঙ্গে।
এদের মধ্যে বাগেরহাটের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান শাওন জানান, তিনি উত্তরা থেকে এসেছেন। তারা দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে সিএনজি অটোরিকশায় আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সিএনজি আজ কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করছে। বাধ্য হয়ে তারা কয়েকজন মিলে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে টার্মিনালে এলেন।