গৌরীপুরে সোনালী ধানে ছেয়ে গেছে সবুজের প্রান্তর
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ শুক্রবার দুপুর ০৩:২৫, ২৩ এপ্রিল, ২০২১
সবুজের মাঠে সোনালী ধানের শীষ। ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। এবার বোরো মৌসুমে বেশি ফলনের পাশাপাশি দামও বেশ পাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যান্য বছর যেখানে কাঁচা ধান বিক্রি হতো ৪শ/৫শ টাকা মণ, এবার তা বিক্রি করছেন সাড়ে ৮শ/৯শ টাকায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাহলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শেষে শুকিয়ে গোলায় তুলবে কৃষকরা। নিজেদের চাহিদামতো রেখে অবশিষ্ট ধান বিক্রি করেছেন কৃষকরা। তারপরো কৃষকদের অপূর্ণ কষ্ট রয়ে গেছে, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচন্ড তাপদাহে তোড় অবস্থায় গরম বাতাসে বেশ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে ফসলের, নয়তো এবার লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।
গৌরীপুর ইউনিয়নের গাভীশিমুল গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ১০০ শতক (১ একর) জমির একটি প্লটের ধান শ্রমিক দিয়ে কাটাচ্ছেন তিনি। ১২ জন শ্রমিকের একটি দল ৪শ টাকায় রোজে কাটছে। ১০০ শতক বা ১০ কাঠা জমি কাটতে খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। ধান রোপন, সার ও সেচে আরও খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, এ জমিতে কাঠাপ্রতি গড়ে ৬ মণ করে ধান পেয়েছেন। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ৬০ মণ ধানের দাম ৪৮ হাজার টাকার বেশি। এ ধান শুকিয়ে বিক্রি করলে মণপ্রতি ১১/১২শ টাকা মূল্য পাওয়া যাবে। গরম বাতাসে কিছুটা ক্ষতি না হলে তিনি প্রতি কাঠায় ৭ মণ ধান পেতেন।
মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট গ্রামের কৃষক আবুল হাসিম জানান, ৮০ শতক জমির প্লটে প্রতি কাঠা (১০ শতক) জমিতে চুক্তিতে ৭শ টাকা করে কাটছেন ৮ জন শ্রমিক, এতে খরচ পড়ছে ৫ হাজার ৬শ টাকা। এই জমির কাঠা প্রতি ৬ মণ করে ধান পেয়েছেন। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ধানের দাম প্রায় ৩৯ হাজার টাকা বেশি।
তিনি আরো জানান, বিগত মৌসুমগুলোতে ধানের দাম কম থাকাতে উৎপাদনে লোকসান গুণতে হতো। এই মৌসুমে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে মনে হচ্ছে লোকসান হবে না। ধানের তোড় বের হওয়ার সময়ে গরম বাতাস না হলে এবার বাম্পার ফলন হতো।
গাভীশিমুল গ্রামের কৃষি শ্রমিক মামুন মিয়া বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বেশি থাকায় দৈনিক হাজিরা হিসেবে ৪শ টাকায় আমাদের সংসার চলে না। করোনার জন্য আমরা এবার বাইরেও ধান কাটতে যেতে পারছি না।
গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, উপজেলায় এ মৌসুমে ২০ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। তন্মধ্যে হাইব্রিড ৫ হাজার ৪০ ও উফশী ১৫ হাজার ৬৭৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৮৭ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। হঠাৎ ঝড়ো গরম হাওয়ায় ১২৫ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায়, ৩৯০ মেট্রিক টন ধান কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।