ঢাকা (রাত ৪:৩০) সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমার অভাব পূরণ করবে কে ?নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতের স্ত্রীর বিলাপ

আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা Clock রবিবার রাত ১১:২৮, ৯ জানুয়ারী, ২০২২

উপজেলা সদর বোনারপাড়া-জুমারবাড়ী সড়ক। এই সড়কের দুরুত্ব উপজেলা পরিষদ থেকে ১৪ কিঃমিঃ। দু’পাশেই বাড়ি-ঘর, দোকানপাট রয়েছে। কিছু স্থানে ফাঁকাও রয়েছে। সব সময় সড়কে যানবাহন ও মানুষের আনাগোনা বিরাজমান। ঈদ বা অন্য কোন দিনের মতো উৎসাহ উদ্দিপনার কমতি নাই। সর্বত্রই চলছে ভোটের আনন্দ। এই ভোটের আনন্দ ভাগ করতে অনেকেই দূর দূরান্ত থেকে ভোট দেয়ার জন্য ভোট কেন্দ্রে আসছেন।

দিনটি ছিল ৫ জানুয়ারী। দেশের অন্য স্থানের মতই এখানেও ছিল ভোটের দিন। যে যার মতো ভোট দেয়ার জন্য হাসি মুখে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। কে জানে ওই দিন এমন ঘটনা ঘটবে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকে মূহ্যমান এলাকার মানুষজন। কারো মুখে আর সেই হাসি নেই। চোখে মুখে শুধু শোকের ছাপ।

এমনি করে একটু দূরে গিয়ে দেখা গেলো নিহত তাহেরের বৃদ্ধ পিতা, অবুঝ দুই শিশু সন্তান ও তার স্ত্রীকে। বাড়ির সামনেই দাঁড়াতেই নিহত তাহেরের বাবা বুক চাপরে হাউমাউ করে কেদে কেদে বলছে আমার ছেলেকে কেন খুন করা হলো? আমি এর বিচার চাই। অবুঝ দুই শিশু পারভেজ ও নিরব বাবা নিহত হওয়ার শোক বুঝতেই পারছে না যে তাদের বাবা আর নেই। একটু পাশেই নিহতের স্ত্রী নাদরীন বেগম। সে কি বলবে তার ভাষা খুজে পাচ্ছে না। চোখের জলে ছলছল চোখে শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে বলছে, আমার স্বামী ভোটের দিন খুন হওয়ার পর থেকেই নিরুপায় হয়ে পড়েছি। আমার স্বামীকে হারিয়ে আমি এখন দিশেহারা। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। গত ৪ দিন ধরে পাড়া প্রতিবেশিদের চালে দুই সন্তান ও শশুরকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। আমার অভাব কে পূরণ করবে? কিভাবে শিশু ছেলেদের মানুষ করবো? আমার স্বামী খুন হওয়ার আগে বলে গিয়েছিল, ভোট দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো, তোমরা চিন্তা করবো না।

এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছিল গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের জুমারবাড়ী আদর্শ কলেজ ভোট কেন্দ্রে। এই ঘটনাটি ঘটে ভোট চলাকালিন সময় বিকাল সাড়ে তিনটায়। মানুষের হইহুল্লরে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ওই ভোট কেন্দ্রটি। মূহুত্বের মধ্যেই প্রশাসন ঘিরে ফেলে চারদিক। ততক্ষনে নিহতের খুনিরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় উপজেলার মামুদপুর গ্রামের ওমর আলীর ছেলে তাহের ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভোট কেন্দ্রের পাশে ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় ওৎপেতে থাকা প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থী রাসেল মাহমুদ ও তার সঙ্গীরা নির্মমভাবে অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। মূহুত্বের মধ্যেই আত্মচিৎকারে লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার করলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। উক্ত ঘটনার কথা চারদিকে ছড়িয়ে পরলে খুনিরা ততক্ষনাত পালিয়ে যায়। পরে সাঘাটা থানা পুলিশ নিহত তাহেরের লাশ উদ্ধার করে গাইবান্ধা মর্গে প্রেরন করেন।

এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাতে মেম্বার প্রার্থী রাসেল মাহমুদসহ আসামি করা হয়েছে ৩০জনকে। এছাড়াও অজ্ঞাত ২০-২৫জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার ৫দিন অতিবাহিত হলেও কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি সাঘাটা থানা পুলিশ। পুলিশের অভিযান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সুজন জানান, ভোট কেন্দ্রে ভোট চলাকালে ওৎপেতে থেকে নিহত তাহেরকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ভোট কেন্দ্রের মাঠে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয়।

এব্যাপারে সাঘাটা থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় খুনিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT