অশ্রুসিক্ত নয়নে ছোট ভাইকে শেষ বিদায় জানালেন রাষ্ট্রপতি
মোঃ কামরুজ্জামান সোমবার ১২:০৮, ২০ জুলাই, ২০২০
রায়হান জামান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকার সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছোট ভাই ও সহকারী একান্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাই। করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাজায় অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রোববার (১৯ জুলাই) বাদ আসর মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাড়ি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ও শেষ নামাজে জানাজায় রাষ্ট্রপতি ছাড়াও রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. শামীমুজ্জামান, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ও পরিবারের সদস্যবর্গ অংশ নেন। জানাজা পরিচালনা করেন রাষ্ট্রপতির ছোট ছেলে ব্যরিস্টার রিয়াদ আহমেদ তুষার। এছাড়া দোয়া পরিচালনা করেন কামালপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু তাহের সিদ্দিকী। পরে কামালপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন, মা তমিজা খাতুন, বড় ভাই মো. আবদুল গণি এবং আরেক ছোট ভাই হাজী মো. আবদুর রাজ্জাকের কবরের পাশে প্রিয় ছোট ভাই আবদুল হাইকে সমাহিত করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন অশ্রুসজল। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি শেষ বিদায় জানান প্রিয় ও স্নেহের ছোট ভাইকে। এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাইয়ের লাশ মিঠামইনে আনা হয়। উপজেলা হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার থেকে কফিন নামানোর পর একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই অবস্থিত মুক্তিযাদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ মাঠে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার শোকাহত মানুষ। মাঠের পশ্চিমপার্শ্বে সামিয়ানা টানানো মঞ্চে কফিন রাখার সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রয়াত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন ঢেকে দেয়া হয় লাল-সবুজের পতাকায়। গার্ড অব অনারের মাধ্যমে প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এরপর প্রয়াতের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় পুষ্পস্তবক দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব-উল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পিপি শাহ আজিজুল হক, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ওমান খান প্রমুখ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সাামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ৬৭ বছর বয়সে মারা যাওয়ার সময় তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ২ মেয়ে ও আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে এক মেয়ে চিকিৎসক, এক মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ও একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী।