অভিযুক্ত অমুক্তিযোদ্ধা সুজায়েতের বিরুদ্ধে সংবাদ সন্মেলন করেছে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার দুপুর ০৩:২০, ২১ এপ্রিল, ২০২১
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার রনাঙ্গনের জীবিত ভারতীয় তালিকা ভুক্ত কোম্পানী কমান্ডার, প্লাটুন কমান্ডার, সেকশন কমান্ডার ও সাবেক উপজেলা কমান্ডারদের পক্ষে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের আয়োজনে নাগরপুর উপজেলা প্রেস ক্লাবে ১৪ এপ্রিল বুধবার এক সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে অভিযুক্ত অমুক্তিযোদ্ধা সুজায়েতের বিরুদ্ধে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এসব কথা বলেন।
’’প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,টাঙ্গাইল জেলাধীন নাগরপুর উপজেলার, ভারতীয় তালিকাভুক্ত ও মুক্তিবার্তা লাল, প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বসম্মত বিবরণের পক্ষে, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক উপজেলা কমান্ডার মো: মোকাদ্দেস আলী, ভারতীয় তালিকা নং ৭৭৭৬, মুক্তিবার্তা লাল ০১১৮০৬০০৯২ বেসাময়িক গেজেট নং-৩৪৭৯ লিখিত বক্তব্য পাঠ করিতেছি। সকল প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সংগ্রামী সালাম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
প্রতারণা:- মো. সুজায়েত হোসেন প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে ভারতের যুব ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ইং সনের মহান বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বরের পরে প্রায় ৪/৫ হাজার যুবকের সাথে দেশে ফিরে আসে।
ওখান থেকে ফিরে আসা সুজায়েত সহ প্রায় ২০০ জন নিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকীর সাথে সেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগদান করে, কাগমারী কলেজে অবস্থান নেয়। জাতীর জনকের ১৯৭২ইং জানুয়ারী মাসের শেষদিকের এক ঘোষণায় সকল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের দেশগড়ার স্বার্থে নিজ নিজ কাজে ফিরে যেতে বলেন। এরই মাধ্যমে সেচ্ছাসেবক ক্যাম্পও বিলুপ্ত হয়ে যায়। উক্ত সুজায়েত হোসেন ও তার দল জালিয়াতী, প্রতারণা, অবৈধ ও বে-আইনীভাবে জেনারেল এম এ জি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদ গ্রহন করে, সুজায়েত কাদেরীয়া বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করে। বিগত ২০০৪-০৫ সালে যাচাই বাছাই কালে তাহার সংগীরা, সুজায়েত কে কোম্পানীর কমন্ডার হিসাবে দাবি করে।
কাদেরীয়া বাহিনীর তাদের কোম্পানী কমান্ডারদের নামের তালিকা প্রকাশের পর, খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সুজায়েতের নাম কাদেরীয়া বাহিনীতে না থাকায়, সে প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত হয়। উল্লেখ্য, তাদের কোন প্রকার যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নেই, তাদের নামে কোন অস্ত্র ইস্যু নেই এবং যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করেনি। জাতীর জনক ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধীনায়ক বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গায় ও মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতির প্রজ্ঞাপনের নীতি মালা মোতাবেক তাহারা মুক্তিযোদ্ধা নহে।
জালিয়াতি: উক্ত সুজায়েত হোসেন, সাবেক এমপি মরহুম খন্দকার আব্দুল বাতেনের ছত্রছায়ায় থেকে নিজেকে ও তাহার আত্নীয়স্বজন সহ অনেকেই অর্থের বিনিময়ে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকা ভুক্ত করে। গত ১৬/০২/২০২১ইং স্বারক নং-১২৭ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নাগরপুরের একটি দাপ্তরিক পত্র কৌশলে হস্থগত করে, নিজ প্রভাব খাটিয়ে উক্ত পত্রটি হাতে হাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে দেবার কথা বলে। পরে, সে উক্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রালয়ে, ইউএনও প্রেরিত পত্রে হাতে লেখা অতিরিক্ত ৩৪ জনের নামের তালিকা, ঐ দাপ্তরিক টাইপকৃত পত্রে কলম দিয়ে ওভার রাইটিং করে বারতি সংখ্যা বসিয়ে ইউএনও স্বাক্ষরিত পত্রের সাথে যাচাই বাচাইয়ের জন্য অনাকাংখিত তালিকা প্রেরণ করে।
এছাড়াও ইউএন ও সিফাত-ই-জাহান স্বাক্ষরিত পত্রে তাহার অনুমতির বাইরে মোট ১৬৮ জনের নামের তালিকা দাখিল করে সুজায়েত। উল্লেখ্য, ইউএনও মুলত প্রেরণ করে ছিলেন ১২৯ জনের নামের তালিকা। অতিরিক্ত নাম, তালিকা ও সংখ্যাগুলো অভার রাইটিং করে হাতে লেখা, যাহা দাপ্তরিক কাজ বলে গন্য নয়। সুজায়েত হোসেন, মাননীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর স্বাক্ষর, সীল জাল করেছে, বলে আমরা বিশ্বাস করি। মাননীয় মন্ত্রীমহাদয় বিষয়টি জানতে পেরেও, জালকারী/জালকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য মহাপরিচালক জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে নির্দেশ প্রদান করেন।
র্দূনীতি: উক্ত সুজায়েত হোসেনের র্দূনীতির কথা লিখে শেষ করা যাবে না। বিগত ২০০০-০৩সালে জাসদ রাজনীতির সুবাদে আওয়ামি লীগের পরাজিত এমপি প্রার্থী খন্দকার আব্দুল বাতেন সাহেবের ছত্রছায়ায়, উপজেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার পদে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একের পর এক প্রতারণা জালিয়াতি সহ অবৈধ ভাবে বিভিন্ন খাত থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা পয়সার মালিক হতে থাকে। উল্লেখ্য, এসব ক্ষমতার অপব্যবহার করে সহদর নাবলক ছোট ভাই, ভগ্নিপতি সহ অসংখ্য ব্যক্তিকে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মুক্তি বার্তায় তালিকা ভুক্তি করে। ঐ সময় সে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ৩৫০ জন এর স্থলে ৭১৫ জনকে মুক্তিবার্তায় তালিকা ভূক্ত করে। ফলে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে অ-মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে যায়।
এছাড়াও ২০০৯-২০১৯ সাল পর্যন্ত, এমপি খন্দকার আব্দুল বাতেন সাহেবের এবং অন্যান্যদের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে বরাদ্দকৃত টি আর, কাবিখা, অর্থ, ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রাংশ, মেরামত ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, এলইডি টেলিভিশন, সৌর বিদ্যুাৎ প্রকলেল্পর সমুদয় টাকাই সে আত্বসাত করেছে। এছাড়াও সে অবৈধ উর্পাজিত টাকায়, ঢাকায় ২টি ফ্লাট বাড়ি, নাগরপুর উপজেলার বাবনাপাড়া গ্রামে বিলাস বহুল ১টি ৩ তলা সু-বিশাল বাড়ি, সলিমাবাদ ইউনিয়নে তেবাড়িয়া গ্রামে পাকা বাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নিজ নামে দোকান সহ নামে বেনামে গড়েছে কোটি, কোটি টাকার সম্পদ।
রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিস্বাধন: নিজে অ-মুক্তিযোদ্ধা হয়ে, শত শত অ-মুক্তিযোদ্ধাদের টাকার বিনিময়ে জালিয়াতি পূর্বক, তালিকাভুক্ত করে দেশের সূর্য্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদার হানি করেছে এবং রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুন্ন করে রাষ্ট্রের অপরিসীম আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস এদের কারণে বিকৃত হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার: সে নিজে অ-মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্বেও, গোপনে নিজ সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি বানিয়ে, গণতন্ত্র হত্যা করেছে।
প্রিয় জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইয়েরা: আমরা আপনাদের মাধ্যমে এ সকল অভিযোগ সমূহের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাদের দ্বারা সুষ্ঠু তদন্তের আবেদন জানাচ্ছি।