রাজপথের কর্মসূচিতে চাঙা নেতাকর্মীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার রাত ০৮:৩২, ২ নভেম্বর, ২০২২
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলন সামনে রেখে মাঠে গড়িয়েছে রাজনীতি। রাজপথের কর্মসূচিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীনরা।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে মাঠেই জবাব দিতে চান তারা। তবে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়াকে পালটা কর্মসূচি মানতে নারাজ দলটি। এদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আগে থেকেই রাজপথে বিএনপি। চলছে বিভাগীয় গণসমাবেশ। এসব কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ায় বিএনপিরই লাভ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নভেম্বর-ডিসেম্বরজুড়ে নানা পরিকল্পনা মাঠের জবাব মাঠেই দেবে আ.লীগ পালটাপালটি কর্মসূচি মানতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা হাসিবুল হাসান মাঠের রাজনীতির জবাব বিএনপিকে মাঠেই দিতে চায় আওয়ামী লীগ। তাদের আন্দোলন বা সভা-সমাবেশের বিপরীতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা ক্ষমতাসীনদের। এ লক্ষ্যে দল ও সহযোগীদের সম্মেলন, দিবসভিত্তিক কর্মসূচি এবং নির্বাচনি সভা-সমাবেশে বড় জনসমাগমের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন নেতারা। ইতোমধ্যে ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন, এর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা এবং সহযোগীদের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে বড় শোডাউনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি বিএনপির সমাবেশের জবাবও তারা দিতে চায়। তবে এখনই সরাসরি পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পক্ষে নয় হাইকমান্ড। দলটির নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হচ্ছে ‘উসকানিতে’ পা না দিতে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এগুলো তাদের দলীয় কর্মসূচি। এগুলোকে বিএনপির পালটা কর্মসূচি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এ মুহূর্তে আমাদের অনেক ধৈর্য ধরেই এগোতে হচ্ছে। একে দুর্বলতা ভাবার কারণ নেই। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় সম্মেলন করব। এর আগে আমাদের জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের সম্মেলন করছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করছি। আমরা জনসভাও করব। তবে এটাকে পালটা কর্মসূচি হিসাবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। আর মাত্র ১৪ মাস পরে জাতীয় নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের উন্নয়ন-অর্জন ও পরিকল্পনা নিয়ে জনগণের কাছে যাব। ফলে পালটা নয়, আমরা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাব।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি এখন অনেক কথাই বলছে। নির্বাচনে যাব না। সরকার উৎখাত করবে। নির্বাচন হতে দেবে না। নির্বাচন ঠেকিয়ে দেব। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচনই হলো একমাত্র পথ। তিনি আরও বলেন, বিএনপি চায় পরিস্থিতি অশান্ত করে ফায়দা লুটতে। কিন্তু আমরা ফাঁদে পা দিতে চাই না। তবে তারা যদি মানুষের ওপর হামলা করে, অতীতের মতো জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে, তখন আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। জনগণকে নিয়ে খেলতে চাইলে, তাদের ফাঁদে ফেলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইলে, সেটা কি আমরা মেনে নেব? সহ্য করব? জনস্বার্থেই আমাদের তাদের রুখতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে বিপুল মানুষের উপস্থিতিও দেখা গেছে। নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে এই উত্তাপ আরও বাড়বে। বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। চলমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সব দলকে নির্বাচনে আনতে মাঠে কিছুটা সহনীয় পরিস্থিতি রাখার চেষ্টা থাকলেও ক্ষমতাসীনরা একেবারে বসে থাকতে রাজি নয়। তারাও পরিকল্পনা নিয়ে মাঠের কর্মসূচি বাড়াতে চায়। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বড় জনসমাবেশও করেছে দলটি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরজুড়ে দলীয় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপিকে মাঠেই জবাব দিতে চায় তারা।
দলীয় সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তার আগে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি শতাধিক জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। ইতোমধ্যে অন্তত ১৪টি জেলা সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সম্মেলনের আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনও করবে ক্ষমতাসীনরা। এসব কর্মসূচিতে বড় ধরনের শোডাউন দেওয়ার পরিকল্পানা রয়েছে হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সশরীরে বড় জনসমাবেশে খুব একটা যোগ দিতে পারেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন থেকে তিনি দলের কর্মসূচিতে আরও বেশি সময় দেবেন। সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় রেখে জেলায় জেলায় জনসভা ও সমাবেশ করবেন তিনি। জেলা পর্যায়ে সফরের পাশাপাশি দুটি করে জেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকে গণভবনে ডেকে কথা শুনবেন তৃণমূল নেতাদের।
জানা যায়, ১১ নভেম্বর রাজধানীতে ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে স্মরণকালের যুব সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে যুবলীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলে যুবলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই সমাবেশের প্রস্তুতিও শুরু করেছে যুবলীগ। গঠন করেছে বিভিন্ন উপকমিটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এছাড়া ২৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ বড় জনসমাবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব কর্মসূচিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে বিএনপিকে মোকাবিলায় মাঠের কর্মসূচিতে নামলেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এটা তাদের কোনো পালটা কর্মসূচি নয়। এগুলো তাদের দলীয় কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির বেশির ভাগই পূর্বনির্ধারিত বলেও দাবি করছেন। নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি রয়েছে। ফলে এখনই সরাসরি বিএনপি পালটা কর্মসূচি দেবে না তারা। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। সরকারের ওপর চাপও বাড়বে। তাছাড়া বিএনপিও সেটাকে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করবে। আবার একেবারে বসে থাকলেও অন্যরা এটাকে দুর্বলতা ভাবতে পারে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও ভুল বার্তা যেতে পারে। ফলে নিজেদের মাঠের কর্মসূচি দিয়েই বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চায় তারা।
রোববার দলীয় সভাপতি ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার কারণে নেত্রী বেশকিছু দিন ধরে বাইরে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। তিনি (শেখ হাসিনা) কিছুদিন ধরে বলছিলেন বাইরে জনসভা করবেন। প্রথমে দু-তিনটি জেলা নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, এগুলোয় সমাবেশ করবেন। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলায়ও করবেন। গণভবনে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে পালটাপালটি কোনো কর্মসূচিতে যাবে না।
এছাড়া নভেম্বর-ডিসেম্বরজুড়ে বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নিয়েও মাঠে সক্রিয় থাকবে আওয়ামী লীগ। ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস রয়েছে। এরপর ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেন দিবস, ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ২৭ ডিসেম্বর ডা. মিলন দিবস, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস রয়েছে। এর বাইরেও ডিসেম্বরে প্রতিদিন রাজধানীসহ সারা দেশে লাগাতার কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া গণসমাবেশে বাধায় লাভ বিএনপির আরও উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে নেতাকর্মীরা হাবিবুর রহমান খান বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহণ বন্ধ ও নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ায় রাজনৈতিকভাবে বিএনপিরই লাভ হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীন দলের বাধার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের জেদ তৈরি হয়েছে। বাধাকে অগ্রাহ্য করে সমাবেশ সফল করতে তারা আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। তাদের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে। বাধা দেওয়া না হলে অন্যান্য কর্মসূচির মতো এটাও গতানুগতিভাবেই পালিত হতো। কিন্তু এখন দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নজর থাকছে সমাবেশ ঘিরে। গণমাধ্যমগুলো সমাবেশের দু-একদিন আগে থেকেই তৎপর। এসব খবর বিএনপির প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলাও করে প্রচার করছে। পাশাপাশি মাঠের বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও অবহিত করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের কল্যাণে তারা নিজেরাও বিষয়গুলো দেখছে। এতে সরকারের ওপর একধরনের চাপ তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, বিএনপি প্রচারের সুযোগ পাচ্ছে সরকারবিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। এসব সমাবেশে বাধা দেওয়ায় দলটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে সক্ষম হচ্ছে।
এসব প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপির সমাবেশ করার সম্পূর্ণ সাংবিধানিক অধিকার আছে। কিন্তু যেখানেই সমাবেশ ডাকা হয় সেখানেই যানবাহন ধর্মঘট হচ্ছে। সরকার বলছে এ ধর্মঘটে তাদের হাত নেই। কিন্তু দেশের মানুষ এতটা বোকা নয়। সমাবেশের নামে যদি জ্বালাও-পোড়ায় করে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার ফলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের ভাবমূর্তি বিপন্ন হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের ওপর হামলাসহ বেশ কিছু দাবিতে বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগ দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ইতোমধ্যে চারটি বিভাগে গণসমাবেশ শেষ করেছে দলটি। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের গণসমাবেশে ঘোষণা দিয়ে পরিবহণ বন্ধ করা হয়নি। তবে সমাবেশের আগের রাত থেকে অঘোষিতভাবে বন্ধ ছিল পরিবহণ। এ ছাড়া এসব কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়। কয়েক জায়গায় ঘটে হামলার ঘটনাও। ২২ অক্টোবর খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয় গণপরিবহণ। বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায় ক্ষমতাসীনরা। সবশেষ রংপুরেও একই ঘটনা ঘটে। তবে ৫ নভেম্বর বরিশাল বিভাগের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে শুধু বাস নয়, থ্রি-হুইলারও বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বন্ধ রাখা হবে লঞ্চও। দুদলের নেতাকর্মীর মধ্যে চলছে পালটাপালটি শোডাউন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা উত্তেজনা বিরাজ করছে বরিশাল ও আশপাশের জেলায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ। সরকারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া না হলে এ নিয়ে ততটা আলোচনাই হতো না। স্বাভাবিক কর্মসূচির মতোই তা পালিত হতো। গণমাধ্যমে এ নিয়ে এতটা হইচই হতো না। কিন্তু পরিবহণ বন্ধ ও ক্ষমতাসীনদের বাধার কারণে রাজনীতিতে আলোচনার মূল কেন্দ্রে চলে আসে কর্মসূচিটি। গণমাধ্যমগুলোও তা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। প্রতিটি গণসমাবেশে ঢাকা থেকে পাঠানো হয় বিশেষ টিম। সমাবেশের দুদিন আগে থেকেই তা জাতীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার ও প্রকাশ হতে থাকে। উত্তেজনার কারণে সবার নজরও থাকে ওই সমাবেশের দিকে। টিভি টকশোতে স্থান পায় বিএনপির গণসমাবেশ। এতে বলতে গেলে লাভই হচ্ছে বিএনপির। বিভাগীয় গণসমাবেশ ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশের পর সারা দেশে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। সমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি সবার মধ্যেই ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে দলটি তাদের শক্তি জানান দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্ত এসব কর্মসূচিতে বাধা না দিলে গণমাধ্যমে তা এতোটা ফলাও করে প্রচার ও প্রকার হতো না। তাদের মতে, বাধা দেওয়ায় সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ানোর একটা প্রতিযোগিতা চলছে। এ কারণে তারা কোনো বাধাই আমলে নিচ্ছে না। যেকোনো মূল্যে সমাবেশে অংশ নিতে হবে এটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিয়ে সরকারের কোনো লাভ হচ্ছে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। গণসমাবেশে বাধার ফলে বিএনপির হয়তো কিছুটা লাভই হচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনগণ। আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, বিরোধীদের সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়ার চিত্র তথ্য-প্রমাণসহ কূটনীতিকদের অবহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষ হওয়ার পর বাধা দেওয়ার নানা চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। সেই প্রতিবেদন ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দেওয়া হবে। তথ্য-প্রমাণসহ বাধার অভিযোগ পাওয়ার পর তারা সরকারকে এ ব্যাপারে চাপ দিতে পারবে। যাতে ক্ষমতাসীন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুটা হলেও চাপে থাকবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষও জেগে উঠেছে। বিএনপির গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছে। সমাবেশে উপস্থিতি দেখে সরকারের মধ্যে একধরনের ভয় সৃষ্টি হয়েছে। সেই ভয় থেকেই তারা সমাবেশ পণ্ডে নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোনো লাভ হচ্ছে না। বিএনপিকেই আরও এগিয়ে দিচ্ছে।