ঢাকা (সকাল ১১:৩১) শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং

হয়রানি ও দালালের দৌরাত্ব বন্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে অর্ধশত ক্যামেরা স্থাপন

<script>” title=”<script>


<script>

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন আশপাশে গড়ে উঠা ক্লিনিকের দালালদের মাধ্যমে। যে কোনোভাবে ভুলভাল বুঝিয়ে অপারেশন, পরীক্ষানিরীক্ষাসহ চিকিৎসা করাতে ক্লিনিকে নিয়ে যেতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয় দালালরা। পরে ক্লিনিকে নেয়ার পর ইচ্ছেমতো চলে পরীক্ষানিরীক্ষা চিকিৎসা ব্যয়। এতে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয় প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সরকারি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা।

এমনকি হাসপাতালের ভেতরে প্রকাশ্যে তাদের এই কৌশলী প্রতারণার শিকার হতে হয় রোগীদের। আরও অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের সরকারি ওষুধ চুরিসহ একই ব্যক্তি বিভিন্ন নামে বারবার ওষুধ নেয়ার। তবে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

তবে এখন থেকে হাসপাতালে অনিয়ম অনেকাংশেই কমবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে ৫৩টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। পুরো হাসপাতালের ভেতর বাইরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জেরদার করতেই নেয়া হয়েছে এমন উদ্দ্যোগ। আর তাই তলা বিশিষ্ট হাসপাতালের নতুন ভবনে ৩১ পুরাতন ভবনে লাগানো হয়েছে ২২টি সিসি ক্যামেরা। 

জানা যায়, আগে থেকেই পুরাতন ভবনে ২২টি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে নতুন ভবনে আরও ৩১টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালের বাইরের চারদিক, জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, ফার্মেসি, করিডোর, অপারেশন থিয়েটারসহ পুরো হাসপাতাল এখন ক্যামেরার আওতায়। হাসপাতালে বিভিন্ন অপরাধীদের শনাক্ত করাসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়বে এই ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়।

বিষয়ে সদর উপজেলার হায়াতমোড় গ্রামের কলেজ ছাত্র নুরুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস আগে আমার নানা অসুস্থ হলে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাই। এক পর্যায়ে এক দালাল নারীর নানারকম প্ররোচনায় পড়ে পাশের একটি ক্লিনিকে যাই। সেখানে যাবার আগে ওই মহিলা অল্প খরচেই সব হয়ে যাবে বলেছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষাতে অনেক টাকা খরচ হয়।

তিনি আরও বলেন, পরে জানলাম আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজিসহ যেসব পরীক্ষা করিয়েছিলাম, সেগুলো কম খরচে সরকারি হাসপাতালেই রয়েছে। তার দাবি, এভাবেই হয়রানির শিকার হয় চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। আর তাই বহির্বিভাগের সামনে কয়েক দিক থেকে ক্যামেরা স্থাপনের ফলে এমন হয়রানি কমবে এবং অভিযোগ করলে তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ওই ভুক্তভোগী। 

এদিকে স্থানীয় একটি এনজিওতে চাকরিরত আফসানা খাতুন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান। তিনি জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিজে দেখেছি এক মহিলাকে দুইবার ওষুধ নিতে। পরে হাসপাতালের এক স্টাফ সেই মহিলাকে ধরে ফেলেছিল। সিসি ক্যামেরা থাকলে এসব বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। 

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের। অবস্থা এমন যে মাসের প্রথম ২০ দিনেই শেষ হয়ে যায় এই ওষুধ। এর অন্যতম প্রধান কারণ ওষুধ চুরি একই ব্যক্তির বারবার ওষুধ নিয়ে যাওয়া। তবে হাসপাতালের কে বা কারা ওষুধ চুরি করে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, হাসপাতালে রোগী স্বজনদের মোবাইল, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়। অপরাধী শনাক্তে চুরি ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সিসি ক্যামেরাগুলো। কারণ এতে অপরাধ করে কোনোভাবেই পার পাবে না অপরাধীরা। 

হাসপাতালের সাবেক এক কর্মকর্তা জানালেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা। তিনি জানান, একটি বড় অপরাধ করে একজন আসামি। পরে পুলিশকে সে জানায় অপরাধ সংঘটিত হবার সময় সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এমনকি প্রমাণ হিসেবে অপরাধী হাসপাতালের পুরাতন ভবনের একটি ওয়ার্ডে ভর্তির কাগজপত্র দেখায়।

হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত হবার সময়ে সে হাসপাতালেই ভর্তি ছিল। এমন ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয় হাসপাতালে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। সেখানে দেখা যায়, ছাড়পত্র না নিয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করে অপরাধ করার পর পুনরায় হাসপাতালের বেডে আসে সেই অপরাধী।

হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোশাররফ হোসেন জানান, আমার কাজের ক্ষেত্র এক্সরে ইসিজি বিভাগের সামনেও কয়েক দিন আগে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গার নিরাপত্তা বাড়বে। সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। এখন বারবার আর কেউ ওষুধ নিতে পারবে না। এমনকি কমবে দালালদের দৌরাত্ম্য।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডা. নুরুন্নাহার নাসু বলেন,পুরো হাসপাতাল ভবনে ক্যামেরা স্থাপনের ফলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাড়বে। এমনকি নানা অপরাধ ধরা পড়বে ক্যামেরায়। মাঝেমধ্যে এখানে রোগী তাদের স্বজনদের মোবাইল, টাকাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হারিয়ে যায়।তা উদ্ধারেও অপরাধী শনাক্তে ভূমিকা রাখবে সিসিক্যামেরা।

তিনি আরও বলেন, জেলা হাসপাতালে করোনার টিকা চালু হবার পর মানুষের মাঝে বহির্বিভাগ থেকে ওষুধ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কারণ টিকা দিতে এসে অনেকেই ভাবছেন, এসেছি তখন কিছু ওষুধও নিয়ে যায়। কারণে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি ভিড়ের কারণেই প্রতিদিনই একটু ঝামেলা হয়। তবে আমার কাছে ওষুধ চুরির কোনো তথ্য জানা নাই।

উল্লেখ্য, নতুন ভবনের ৩১টি ক্যামেরা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পুরাতন ভবনের ২২টি ক্যামেরা আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT