স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রায়পুরে নির্মিত হচ্ছে ‘বধ্যভূমি স্মৃতি স্তম্ভ’
এইচএম দিদার,দাউদকান্দি,কুমিল্লা রবিবার সন্ধ্যা ০৬:৪৩, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১
১৯৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দাউদকান্দির স্বাধীনতাকামী ও হিন্দু ধর্মের লোকজনদের ধরে নিয়ে রায়পুর কাঠের পুলের নিকট হত্যা করে পাশের ডোবায় ফেলে রাখে। তারপর থেকেই ওই স্থানটি বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও এতোদিন এই বধ্যভূমিতে কোনো স্মৃতিচিহ্ন ছিলো না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এবার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বানিয়াপাড়া দরবার শরীফের পুর্বপাশে রায়পুর গ্রামের মাঝামাঝি স্থান হতে একটি রাস্তা উত্তরপশ্চিম দিকে চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হলেই একটি খালের উপর রয়েছে রায়পুর সেতু। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কাঁঠের পুল ছিল এটি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিবাহিনীর সহযোগী সন্দেহে নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে উপজেলার জিংলাতলি ইউনিয়নের রায়পুর কাঁঠের পুলের উপর এনে গুলি করে হত্যার পর লাশ খালের পানিতে ফেলে দিত। আবার অনেককে হত্যার পর পুলের দক্ষিণ পাশে গর্ত করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে বলেও জানান এলাকার ষাটোর্ধ এরশাদ মিয়া ও সামসুল হক। দীর্ঘদিন অরক্ষিত বধ্যভূমিটি স্মৃতিস্তম্ভতে রূপ নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ ফিরে এসেছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দরা জানান, ১৯৭১ সালের ২৩শে মে রবিবার সংঘটিত গণহত্যায় রায়পুর গ্রামের যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন, রায়পুর গ্রামের রাম মানিক্য দেবনাথের ছেলে শহিদ ডা. পান্ডব দেবনাথ, বলরাম সরকারের ছেলে শহিদ শীতল চন্দ্র সরকার, কেবলা সাহার ছেলে শহিদ পান্ডব সাহা, পান্ডব সাহার স্ত্রী বিদেশিনি শাহা, রাজা রাম সরকারের ছেলে শহিদ ফেলান সরকার, জয় চন্দ্র সরকারের ছেলে শহিদ শরৎ চন্দ্র সরকার, লাল মোহন বণিকের ছেলে শহিদ সুধীর বণিক, নরেন্দ্র দেবনাথের স্ত্রী শহিদ কামিনী সুন্দরী দেবনাথ, রমেশ চন্দ্র সরকারের ছেলে শহিদ উমেশ সরকার, রাম দয়াল দেবনাথের ছেলে শহিদ অনাথ দেবনাথ এছাড়া আদমপুর গ্রামের শহিদ অনুকূল সরকার এবং বরুড়া উপজেলার রামমোহন গ্রামের শহিদ নুরু মিয়া।
স্থানীয় বাসিন্দা কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য অমূল্য চন্দ্র বনিক বলেন, স্বাধীনতার পরে রায়পুর বধ্যভূমিতে গণহত্যার কোন স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি। দীর্ঘদিন বধ্যভুমিটি অবহেলিত ছিলো। এখন বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকা বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ ফিরেছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ নির্মাণাধীন এ স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে আসছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম খান বলেন,”স্থানীয় জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে দুই শতক জায়গা ক্রয় করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ থেকে ২৬ লাখ টাকা খরচ হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কাজটি শেষ হওয়ার পর সঠিক ব্যয়টা নির্ধারণ করা যাবে। আর মাননীয় এমপি মহোদয় ও উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় বিষয়টি অবগত আছেন।
১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ উদ্ভোধন করা হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।