শাদাবের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে টিকে থাকল পাকিস্তান
নিজস্ব প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার রাত ০৯:০৬, ৩ নভেম্বর, ২০২২
শাদাব খানের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সিডনিতে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ডিএলএস পদ্ধতিতে ৩৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন আরেক দফা বাঁচিয়ে রাখল পাকিস্তান। গ্রুপ ‘২’-এর লড়াই তাই জমে উঠল আরেকটু। শেষ রাউন্ডের আগে জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস ছাড়া সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বাকি চার দলেরই।
আগে ব্যাট করা পাকিস্তানের স্কোর একসময় ছিল ১৩ ওভারে ৫ উইকেটে ৯৫। সেখান থেকেই তাদের ১৮৫ পর্যন্ত টেনে তোলে শাদাবের ২২ বলে ৫২ এবং ইফতিখার আহমেদের ৩৫ বলে ৫১ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় শুরুতে উইকেট হারালেও টেম্বা বাভুমা ও এইডেন মার্করামের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ভালোভাবেই এগোচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। নিজের প্রথম ওভারে এসেই এরপর জোড়া আঘাত করেন শাদাব। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ডিএলএসে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন লক্ষ্য ছিল ১৪ ওভারে ১৪২, ৩০ বলে তাই প্রয়োজন ছিল ৭২ রান। বিরতির পর প্রথম ১০ বলে ২৫ রান তুললেও এরপর পাকিস্তান পেসারদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, আটকে গেছে ১০৮ রানেই।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান ইনিংসের প্রথম ঝলকটা ছিল মোহাম্মদ হারিসের। গতকালও স্ট্যান্ডবাইয়ে থাকা হারিস সুযোগ পেলেন ফখর জামানের চোটে, এরপর নেমেও গেলেন আজ। তাঁর ১১ বলে ২৮ রানের ইনিংসে হয়তো পাকিস্তানের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের একটু ইঙ্গিত দিয়েছিল, কিন্তু এরপর যা হলো, তাতে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের স্কোর ১৮৫ পর্যন্ত যাবে—সেটি ভাবতে পেরেছিলেন কজন!
পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তান তুলল তাদের টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৪২ রান, তবে হারিয়ে ফেলল ৩ উইকেট। হারিসের আগে-পরে ফিরেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো স্টাম্পে বল ডেকে আনেন রিজওয়ান। বাবর ভুগেছেন আজও, লুঙ্গি এনগিডিকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৫ বলে পাকিস্তান অধিনায়ক করেছেন মাত্র ৬ রান। পাওয়ার প্লের পরপরই আনরিখ নর্কিয়ার স্লোয়ারে মিড অফে ক্যাচ তোলেন শান মাসুদ, ৪৩ রানেই চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের ইনিংসের পুনর্গঠনের কাজটা এরপর ৩৯ বলে ৫২ রানের জুটিতে করেছিলেন ইফতিখার ও মোহাম্মদ নেওয়াজ। বোলিংয়ে বাজে দিন কাটানো কাগিসো রাবাদার পর এনগিডির ওপরও চড়াও হন তাঁরা, বাদ যাননি তাব্রেইজ শামসিও। দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রুটা এনে দেন শামসিই, নেওয়াজকে এলবিডব্লু করে। যদিও ২২ বলে ২৮ রান করা নেওয়াজ রিভিউ নিলেই বেঁচে যেতে পারতেন, বল লেগেছিল তাঁর ব্যাটে।
১৩ ওভারে ৯৫ রান, ৫ উইকেট নেই। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ওয়েইন পারনেলের মাথার ওপর দিয়ে ছয় মারলেন ইফতিখার, এরপর পাকিস্তান চালিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। ইফতিখার ও শাদাবের জুটিতে ৩৬ বলেই ওঠে ৮২ রান। ৩৩ বলে ফিফটি করার পথে এনগিডিকে মিডউইকেট দিয়ে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে লম্বা ১০৬ মিটারের ছয়টি মারেন ইফতিখার। শাদাব ফিফটি পূর্ণ করেন ২০ বলে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের যা দ্বিতীয় দ্রুততম। ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে মারেন ৪টি ছক্কা। বোলিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও ওই সময় খেই হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ৮ বলে অবশ্য ৮ রান তুলতে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান, তবে শেষ ১০ ওভারে তারা তোলে ১১৭ রান।
ব্যাটিংয়ের মোমেন্টাম বোলিংয়েও টেনে আনে পাকিস্তান। শাহিন শাহ আফ্রিদি নতুন বলে উইকেটের দেখা পান আবারও, প্রথম ওভারে তাঁকে ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন কুইন্টন ডি কক। পরের ওভারে আফ্রিদি আঘাত করেন আবার, অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে ব্যাট চালিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে নাসিম শাহর হাতে ধরা পড়েন রাইলি রুশো। সর্বশেষ ৫ ইনিংসে রুশোর এটি তৃতীয় শূন্য (বাকি ২ ইনিংসে সেঞ্চুরি)।
১৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধাতস্থ করেন টেম্বা বাভুমা ও এইডেন মার্করাম, মূল ভূমিকা ছিল বাভুমারই। পাকিস্তান শুরুতে শর্ট বলে আক্রমণের চেষ্টা করেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক সেসবের জবাব দেন ভালোই। হারিস রউফের ওপর চড়াও হন, পাকিস্তান ফাস্ট বোলারের প্রথম ২ ওভারে আসে ৩৭ রান। ৭ ওভার শেষেও ২ উইকেটে ৬৫ রান ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ৯ ওভার শেষে সেটিই পরিণত হলো ৪ উইকেটে ৬৯ রানে।
সপ্তম ওভারে এসে প্রথম বলেই বাভুমাকে ফেরান শাদাব। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দেন বাভুমা, ১৯ বলে ৩৬ রানের ইনিংস ও মার্করামের সঙ্গে ২৭ বলে ৪৯ রানের জুটির পর। ১ বল পরই ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন হাইনরিশ ক্লাসেন। ওই ওভারের পরই বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা, ২ উইকেট হারিয়ে ডিএলএসে পিছিয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা (পার স্কোরের চেয়ে ১৬ রান)। সিডনিতে বৃষ্টিবিঘ্নিত বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৯৯২ সালের সেই স্মৃতি। এবার আর অদ্ভুত কোনো সমীকরণের সামনে পড়তে হয়নি তাদের, তবে সেমিফাইনালে যাওয়ার পথটা আরেকটু জটিল হয়েছে।