নিজস্ব প্রতিনিধি বুধবার রাত ০২:৩৯, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
রাজশাহী থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথের শতবর্ষী রেললাইনগুলো যেন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। তিন দিনের মাথায় আবারও সাড়ে আটশ যাত্রী নিয়ে রক্ষা পেল বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় রেললাইন ভাঙা দেখতে পেয়ে লাল গামছা টাঙিয়ে ট্রেনটিকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেন স্থানীয় দুই কৃষক।
দুই কৃষকের বুদ্ধিমত্তায় অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেন। এর দুই দিন আগে গত শনিবার একই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে পার্বতীপুর থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন।
রাজশাহী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিতে সাড়ে আটশ যাত্রী ছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় জিয়াউর রহমান ও হাবলু মিয়া নামে স্থানীয় দুই কৃষক রেললাইন দিয়ে কৃষিকাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় তারা লাইনের এক অংশে ভাঙা দেখতে পান। ঠিক ওই সময়ই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেসের আওয়াজ তাদের কানে ভেসে আসে।
এ ছাড়া সকালে রেললাইন দিয়ে অনেক ট্রেন চলাচল করে। এজন্য তারা তাৎক্ষণিকভাবে বুদ্ধি করে লাইনের মাঝখানে নিজেদের লাল গামছা টানিয়ে দেন। লাল কাপড় দেখে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি থেমে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রেললাইন মেরামত করার পর ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত শনিবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলসেতুর পাশে প্রায় ৯ ইঞ্চি রেললাইন ভাঙা দেখে অস্থায়ী গেটম্যান লালকাপড় টানিয়ে উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এতে রক্ষা পায় প্রায় তিন শতাধিক যাত্রী। রাজশাহী-আব্দুলপুর রুটের চারঘাট ও বাঘা উপজেলা এলাকার রেললাইনের ত্রুটির কারণে মাঝেমধ্যেই এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ট্রেন চালকদের। এতে ট্রেন যাত্রীরা চরম উৎকণ্ঠা মধ্যে থাকেন।
স্থানীয়রা জানায়, ওই এলাকায় মাঝেমধ্যেই রেললাইন ভাঙার মতো ঘটনা ঘটেছে। ভাগ্যগুণে যাত্রীরা বেঁচে গেলেও যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
চারঘাটের স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলার রেললাইনগুলো ব্রিটিশ আমলে তৈরি। শতবর্ষী এই লাইনে সারা দিনে ৩২ বার ট্রেন চলাচল করে। অনেক সময় রেললাইনে বেশি চাপ পড়ায় লাইনগুলোর বিভিন্ন স্থান ভেঙে যাওয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ছে। বড় ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে রেললাইনগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
রাজশাহী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (আইএন) আবু জাফর বলেন, ‘এ এলাকার লাইনগুলো অনেক পুরোনো। স্টিলের ও কাঠের স্লিপারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। কংক্রিটের স্লিপার হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। আমরা নতুন লাইন স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে বাস্তবায়ন করা হবে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, গরমের সময়ের চেয়ে শীতকালে লাইন ফাটলের ঘটনা পাঁচ-ছয় গুণ বেশি ঘটে। আজকের ফাটল ধরা ওই স্থানে স্টিলের স্লিপার ছিল। ওই স্লিপার চুরি হয়ে যাওয়ায় সেখানে কাঠের স্লিপার লাগানো হয়েছিল। কিন্তু দুই স্লিপারের মধ্যে ফাঁক বেশি ছিল। এ জন্য ট্রেন চলাচলের সময় চাপ লেগে লাইন ফেটে গিয়েছিল। লাইন ফাটলের খবর পেয়ে হেঁটে মিস্ত্রিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাইনের পাশে ফিসপ্লেট লাগিয়ে দিয়েছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, স্থানীয় দুই ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ঢাকাগামী বনলতা এক্সপ্রেস। লাইন মেরামত করার পর বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, ফাটল ধরা ওই লাইনের বয়স ৪৯ বছর। ওই রুটে ১৯৪৩ সালের কেনা লাইনও রয়েছে বলে জানা গেছে।