ঢাকা (সন্ধ্যা ৭:১৪) রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Join Bangladesh Navy


মনু ও ধলাই নদী থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock রবিবার রাত ১০:৪৮, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

মোঃ জাকির হোসেনঃ জেলা প্রতিনিধি,মৌলভীবাজার:  মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদী থেকে অবাধে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বলগেট মেশিন দিয়ে নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করছেন। এমনকি ব্রিজের একদম নিকটবর্তী জায়গা  থেকেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদী,ও নদীর বেঁড়িবাঁধ ও নদী এলাকা। সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এবিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানালেও প্রশাসন নিরব। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। ভূমি কর্মকর্তাও বলছেন কামালপুর এলাকায় কোনও বালু মহাল লিজ নেই। অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসক বলছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার মনু ও ধলাই নদীর বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এ রূপ অপরিকল্পিতভাবে বলগেট মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ও পাড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরের গ্রামগুলো। সরকারি লিজ নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এমন ভূয়া তথ্য দিয়ে দিনের পর দিন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার৩ নং কামালপুর ইউনিয়ন ও ৫ নং আখাইলকুড়া ইউনিয়নের  বেশ কয়েকটি এলাকায় বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে একটি চক্র। এমনকি নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ কেটে বড় বড় পাইপের সাহায্যে প্রকাশ্যেই বালু স্তুপ করে বিক্রি করা হচ্ছে।যাতে অতিষ্ঠ নদীভাঙনের হুমকিতে পরা তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। কোনও কোনও এলাকায় লিজ নেয়া দাগের মধ্য থেকে অন্য দাগে বালু উত্তোলন করাতে বাড়িঘর, বাঁধ রক্ষার পাথরের ব্লক, বেঁড়িবাঁধ ও ব্রীজ হুমকির মধ্যে পড়েছে। এলাকাবাসী প্রতিবাঁধ করলে পড়তে হচ্ছে হুমকিতে। বালু উত্তোলনের সরকারি নিয়ম থাকলেও সেটিকে কোন তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। বরং ইজারা না নিয়েই চলছে এই হরিলুট। এতে সরকার হারাচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব।

স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, মেশিনের শব্দে তাদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।সেলু বেগম বলেন, বালুর পানিতে তার ঘর ডুবে যায়, পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে আছেন। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। বালু উত্তোলন কারীরা প্রভাবশালী থাকায় তাদের কাছে গেলে তারা আরো উল্টো ধামকি দিয়ে বলেন, ৫ বছরের জন্য জায়গাটি তারা কিনে নিয়েছেন, তাদের কিছু করার নেই।বালু লুটের চক্র ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় স্থানীয় অনেকে মুখ খুলতে নারাজ। অনেককেই আবার হুমকি দেয়া হয়েছে।এরকম মনু নদীর অনেক স্পটেই অবৈধ ভাবে চলছে বালু উত্তোলন। অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে নতুন ব্রীজ সেতুটিও এলাকাবাসিরা বলেন, আমাদের এলাকায় লিজ না নিয়েও বালু উত্তোলনের ফলে ঘরবাড়ি, নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ ও ব্রিজ গুলো হুমকিতে রয়েছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। বৃষ্ঠির দিনে বন্যা কবলিত হয়ে জনগণের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আশিক মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বারবার কর্তৃপক্ষকে বলার পরও কোনও সুরাহা হচ্ছেনা।অভিযুক্ত মো: খসরু মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কাগজ আছে কিন্ত তিনি তা দেখাতে পারেননি। তিনি আরও বলেন ব্যবসাতে প্রতিপক্ষ থাকে যারা লিজ পায়নি তারাই মিথ্যা অভিযোগ করছে।
সৈয়দ মহসিন পারভেজ, সভাপতি পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম, মৌলভীবাজার বলেন এখনি প্রদক্ষেপ নিয়ে প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে তারা আন্দোলন গড়ে তুলবেন। তিনি আরও বলেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও প্রতিবেশি হুমকির মুখে পড়ছে। মো: মেসবাহ্ উদ্দিন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কামালপুর, আখাইলকুড়া, কনকপুর(নানকার) বাসুদেবশ্রী বলেন, কামালপুরে ও আখাইলকুড়া ইউনিয়নে  কোনও বালু মহাল লিজ নেই। রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থ, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেন, বারবার চিঠি দিলেও তারা আমলে নিচ্ছেনা, তদন্ত করে আবারও চিঠি দেয়া হবে। সামাজিক আন্দোলনের কথাও বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভেঙ্গে গিয়ে বন্যার সময় মানুষের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতে পারে। নাজিয়া শিরীন, জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার বলেন, খোজ নিয়ে যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হবে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝুঁকিতে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবাদীদের দাবী অতিসত্তর এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে জনগণের জান-মাল রক্ষা করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবে।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT