বিএনপির গণসমাবেশ: রংপুরের স্বস্তি থাকছে না বরিশালে
নিজস্ব প্রতিনিধি মঙ্গলবার সকাল ০৯:২৬, ১ নভেম্বর, ২০২২
রংপুরে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ঘাঁটিতে শান্তিপূর্ণ বড় সমাবেশ করেও তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সময় পাচ্ছে না বিএনপি। বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে পরিবহন ধর্মঘটের দুশ্চিন্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতাদের মধ্যে বিরোধ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার অতীতের ভূমিকা।
আগামী ৫ নভেম্বরের সমাবেশের এক দিন আগেই বরিশালে বাস চলাচল বন্ধ হচ্ছে। বন্ধ হচ্ছে তিন চাকার সব যানও।
রংপুরের সমাবেশে আশপাশের এলাকার লোক আসার বড় মাধ্যম ছিল এই তিন চাকার যান। বরিশালের যোগাযোগের অন্যতম বাহন লঞ্চও বন্ধ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বরিশাল সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বলা যায়।
এত শঙ্কা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে শর্ত সাপেক্ষে গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে উদ্যানে নির্মিত মঞ্চ ব্যবহার করতে পারবে না তারা। ওই মঞ্চের ২০০ ফুট জায়গা খালি রাখতে হবে। শর্ত মেনে উত্তর-দক্ষিণমুখী মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করেছে দলটি।
গত শনিবার রংপুরে বড় সমাবেশ করে বেশ খুশি বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, সেখানে সংগঠনের ভিত অতটা শক্ত না হলেও দলের জনসমর্থন বেড়েছে। জাতীয় পার্টির কর্মী-সমর্থকরা দিন দিন বিএনপির দিকে ঝুঁকছেন। এখন জাপার দুর্গে তাঁরা নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করার দিকে নজর দিচ্ছেন।
তবে বরিশাল বিএনপির নেতারা মনে করেন, বরিশালে কয়েকটি কারণে রংপুরের মতো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ না-ও হতে পারে। এর কারণ স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার ‘আগ্রাসী’ মনোভাব ও তাঁদের অতীত কর্মকাণ্ড, সরকারি দলের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের সখ্য, আর নদীপ্রধান এলাকা হওয়ায় পথে বাধা পেরোনো সহজ না হওয়া। রংপুর ও খুলনায় আগে এসে আবাসিক হোটেলে ছিলেন বিএনপির কর্মীরা। কিন্তু বরিশালে এ ক্ষেত্রে সমস্যা দেখছেন বিএনপির নেতারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বরিশালের আবাসিক হোটেলগুলো অগ্রিম বুকিং নিচ্ছে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে যেভাবে বিএনপির সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হচ্ছে, তাতে সরকারের ভিত নড়ে গেছে। তা না হলে সরকার সমাবেশ বানচাল করতে এভাবে মরিয়া হয়ে উঠত না। তিনি বলেন, বরিশালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা কাজে আসবে না। নেতাকর্মীরা বাধার বাঁধ ভেঙে সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেনই।
সিএনজি-ইজি বাইকও চলবে না
বাসের পর এবার বরিশালে আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর আলফা, সিএনজি ও ইজি বাইকও চলবে না। রাতে নির্বিঘ্নে যান চলাচলের অনুমতির দাবিতে শ্রমিক ও মালিক সমিতি গতকাল এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
বরিশাল জেলা আলফা, সিএনজি ও ইজি বাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, তাঁদের সংগঠনের আওতায় বরিশাল জেলায় তিন হাজার তিন চাকার যানবাহন রয়েছে। ৪ ও ৫ নভেম্বর ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
বিকল্প পথে আসবেন নেতাকর্মীরা
বাস, থ্রি হুইলার ধর্মঘটের পর নৌযান চলাচলও বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাই নেতাকর্মীরা দুই দিন আগেই বরিশালে এসে অবস্থান নেবেন। যাঁরা আসতে পারবেন না তাঁদের জন্য ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও বেশ কিছু স্পিড বোট ভাড়া করা হচ্ছে। ভোলা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর এ তথ্য জানান।
বিএনপি বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের মতে, এই বিভাগের দুর্গম জেলা ভোলা। অন্য পাঁচটি জেলার লোকজন কোনো যানবাহন না থাকলেও হেঁটে সমাবেশে আসবে।
ঐক্যবদ্ধ বরিশালের প্রত্যাশা
বরিশাল মহানগর কমিটি থেকে বাদ পড়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার ও তাঁর অনুসারীরা বেশ ক্ষুব্ধ। জেলা কমিটি নিয়েও আছে নানা জটিলতা। এখন সমাবেশ সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে বিবদমান গ্রুপগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জামায়াত নেতারা ব্যক্তিগতভাবে অংশ নেবেন
সমাবেশে অংশ নিতে বিএনপির স্থানীয় নেতারা বরিশালে তাঁদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে জামায়াত দলগতভাবে নয়, যে যার মতো করে সমাবেশে অংশ নেবে বলে জানা গেছে। জামায়াতে ইসলামী বরিশাল মহানগরের মুখপাত্র মো. শাহে আলম বলেন, দলগতভাবে সমাবেশে যোগদানের সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি ও জামায়াতের আন্দোলনের লক্ষ্য এক।