ঢাকা (রাত ১:১২) শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
শিরোনাম

ফের উত্তাল ধর্মপাশার সুনই জলমহাল,চার লাখ টাকার মাছ লুট



সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের মনাই নদী প্রকাশিত সুনই জলমহালটি থেকে কয়েকজন মৎস্যজীবীকে মারধর করে প্রায় চার লাখ টাকা মুল্যের মাছ লুটে নিয়ে গেছে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনের অনুসারীরা।

গতকাল( ২৭ফেব্রুয়ারি) শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে চেয়ারম্যানের অনুসারীরা সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গত ৭জানুয়ারি রাত আটটার দিকে ওই জলমহালটির খলাঘরে হামলা,অগ্নিসংযোগ ও সমিতির সদস্যদের মারধর এবং সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য শ্যামচারণ বর্মণ (৬৫)কে গলা কেটে হত্যা করে।

উপজেলা প্রশাসন,ধর্মপাশা থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের মনাই নদী প্রকাশিত সুনই জলমহালটি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন। ১৪২২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৪২৭ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ওই জলমহালটি ছয় বছরের জন্য ইজারা পায় উপজেলার সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। ওই সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ যথারীতি জলমহালটির ইজারামুল্য পরিশোধ করে প্রায় পাঁচ মাস আগে জলমহালটির পাড়ে সমিতির সদস্যদের বসবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য পাঁচটি খলাঘর তৈরি করেন। তাঁরা সেখানে জলমহালটি রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করেন।

অপরদিকে একই সমিতিটির সভাপতি দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনের অনুসারী সুবল বর্মণ ওই জলমহালটির ১৪২৭ বঙ্গাব্দের ইজারামুল্য সরকারি কোষাগারে জমা দেন।সুবল বর্মণও তিনটি খলাঘর তৈরি করে প্রায় চার মাস আগে ১৫/২০জন লোক নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন এবং জলমহালটি রক্ষণাবেক্ষণ করেন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারীরা গত ৭জানুয়ারি রাত আটটার দিকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জলমহালটির ইজারাদার চন্দন বর্মণদের খলাঘরে হামলা চালিয়ে একটি খলাঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় সেখানে থাকা মৎস্যজীবীদের ১৫-২০মণ জাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ১৫-২০জন্য সদস্য আহত হন। এতে বাধা দিলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য শ্যমাচরণ বর্মণ( ৬৫)কে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় ৯জানুয়ারি স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন ও তাঁর আপন ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনসহ ৬৩ জনকে আসামি করে ধর্মপাশা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নিহত শ্যামাচরণ বর্মণের ছেলে চন্দন বর্মণ। কিন্ত অভিযোগটিতে সাংসদের নাম থাকায় পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করেনি।

পুলিশের দাবি, অভিযোগটিতে কিছু ভুল সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে নিহতের ছেলে চন্দন বর্মণ ও তার লোকজন ওসির  কাছ থেকে আভিযোগটি নিয়ে গিয়ে আর থানায় জমা দেননি। পরে এ ঘটনায় ধর্মপাশা থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ১০জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ৬০-৬৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন।

এ অবস্থায় চন্দন বর্মণ গত ১৪ জানুয়ারি সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৬৩ জনকে আসামি করে ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন। কিন্ত আদালতের বিচারক একই ঘটনা নিয়ে থানায় করা মামলাটির প্রতিবেদন পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদালতে দায়ের করা মামলাটি স্থগিত থাকার নির্দেশ দেন।

এ ঘটনায় থানায় হওয়া মামলাটি গত ২ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

গতকাল শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রোকনের শতাধিক অনুসারী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই জলমহালটিতে যায় এবং জলমহালটি ইজারাদারের পক্ষের তিনটি নৌকায় থাকা প্রায় চার লাখ টাকা মুল্যের মাছ তারা লুটে নিয়ে যায়। এতে বাধা দিলে সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ৮-১০জন সদস্যকে কিল ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করা হয়।

সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহসভাপতি মনীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, গত ৭ জানুয়ারি রাতে আমাদের জলমহালে যারা হামলা,অগ্নিসংযোগ ,মারধর ও  আমার ভাইকে হত্যা করেছিল তাদের বেশির ভাগ আসামিসহ শতাধিক মানুষজন শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের জলমহালটিতে ঢুকে পড়ে। এ সময় আমাদের জলমহালের একটি কাটা (জড়ো করে মাছ আহরণের স্থান) ভেঙে তিনটি নৌকার মধ্যে রাখা প্রায় চার লাখ টাকার লুটে নিয়ে যায়। এতে বাধা দেওয়ায় আমাদের সমিতির ৮-১০জন সদস্যকে কিলঘুষি ও লাথি মেরে আহত করা হয়েছে। এই তিনটি নৌকার সব মাছ উপজেলা চেয়ারম্যান রোকনের অনুসারীরা নিয়ে গেছে। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানিয়েছি। এ নিয়ে থানায় রোববার লিখিত অভিযোগ করা হবে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদ( ইউপি) চেয়ারম্যান মো.ফেরদৌসুর রহমান বলেন, ওই জলমহালটিতে সুবল বর্মণদেরও তিনটি খলাঘর রয়েছে। ওই খলাঘরের টিন খুলে নিয়ে যাচ্ছে খবর পেযে ১৫-২০জন লোক সেখানে গিয়েছিল।মৎস্য লুটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিপদে ফেলার জন্য তাকে জড়িয়ে এ ধরণের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ওই জলমহালটিতে গিয়ে কাউকে পাইনি। জলমহালটি থেকে মাছ লুট করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মো.মুনতাসির হাসান সাংবাদিকদের বলেন,ওই জলমহালটি নিয়ে উচ্চ আদালতে পৃথক দুটি মামলা ছিল।উচ্চ আদালত থেকে সুবল বর্মণের মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে। জলমহালটিতে সংঘবদ্ধ লোকজন যাচ্ছে এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানার ওসির সঙ্গে আমি কথা বলেছি।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT