নৌকার হাল ধরেই অবহেলিত নড়াইলের কাঙ্খিত উন্নয়ন করবে মাশরাফি
মেঘনা নিউজ ডেস্ক সোমবার দুপুর ০৩:০৪, ১২ নভেম্বর, ২০১৮
ইকবাল হাসান,নড়াইল: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে প্রার্থী হতে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নতপত্র কিনেছেন। মনোনয়নতপত্র কেনার পর ভক্তসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন।
অনেকেই মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতার পর মাশরাফির হাত ধরেই নড়াইল জেলার কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটবে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন মাশরাফির নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি । কেউ কেউ বলছেন খেলার মাঠের মাশরাফি আর রাজনীতির মাশরাফি এক নয়।
জানাগেছে, রোববার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন মাশরাফি।
এ বছরের ২৯ মে প্রথম বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম গ্রিন সিগনাল দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ.ফ.ম মোস্তফা কামাল। এদিন ঢাকায় একনেক পরবর্তী এক সভায় তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল থেকে মাশরাফি অংশগ্রহন করতে পারেন। সে একজন ভালো ছেলে। তার জন্য ভোটও প্রার্থনা করেন । এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। তখন থেকেই নড়াইলে মাশরাফির প্রার্থী হবার বিষয়টি মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে মাশরাফিকে দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে আখ্যায়িত করেন এবং মাশরাফির জন্য দোয়া কামনা করেন। তখন থেকে নড়াইলবাসীর মাঝে স্পষ্ট ধারণা চলে
আসে যে, মাশরাফি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।
এরপর থেকে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দলীয় মনোনয়নপত্র কেনায় নড়াইলবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে নড়াইল জেলায় কোন মন্ত্রীত্ব আসেনি। এমনকি কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটেনি এই জেলায়। মাশরাফির হাত ধরে এবার জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটবে বলে নানা শ্রেণীপেশার মানুষ আশায় বুক বাধতে শুরু করেছে।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, চায়ের দোকান থেকে সর্বত্রই এসব বিষয় নিয়েই আলোচনার ঝড় উঠেছে।
ফেসুবুকে তানজির হোসেন নামে একজন লিখেছেন ‘ ভাল মানুষ রাজনীতিতে আসলে রাজনীতির রঙ বদলে যাবে’। সৈয়দ শাহজাদা আলমগীর লিখেছেন, ‘মাশরাফি বিন মুরতাজা-শুধু একটি নাম নয়। তিনি একটি ব্রান্ড, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি দেশ এবং ক্রিকেট দুনিয়ার সম্মান। তাঁর অবস্থান আসমানের তারকাদের মাঝে। তাকে নোংরা ধুলোয় নামিয়ে আনা অথবা তিনি নিজে নামতে চাইলেও সেটা হবে বাংলাদেশ তথা গোটা ক্রিকেট বিশ্বের জন্য বেদনাদায়ক। মাশরাফি বিন মুরতাজা, আপনাকে দলীয়ভাবে নয়, দেশীয়ভাবে বাংলার মানুষ দেখতে চায়’।
গণমাধ্যমকর্মী মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেন, ‘দেশ যখন ভয়ানকভাবে বিভক্ত, এক ক্রিকেটই ছিল সবার অভিন্ন ভালবাসার জায়গা। রাজনীতির বাইরে থেকে এক মাশরাফি একটা কথা বললে সবার মাঝে যে প্রতিক্রিয়া ঘটতো, এখন কি তা হবে? তাই এখনই কেন? কী দরকার ছিল এগুলোর? দেশকেতো তাদের আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিল। সবকিছুকে কেনো আমরা রাজনীতিকীকরণ করে ফেলি? ভলিবল খেলোয়াড় সঞ্জীব সরকার জয় বলেন, ‘ দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত নড়াইলের এবার
উন্নয়নের হাল ধরবেন অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে হয়তো মন্ত্রীত্ব পেতে পারেন। তিনি নড়াইল জেলার অধিনায়ক হয়ে উন্নয়নের মাধ্যমে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের বঞ্চনা দূর করবেন।
নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিলয় রায় বাধন বলেন, মাশরাফিকে নৌকার হাল ধরলে নড়াইল জেলার ভাগ্য খুলবে। জেলার কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে। দলীয় মনোনয়ন কেনায় অধিনায়ক মাশরাফিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে জোরালো ভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে নড়াইল পৌর, উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারন মানুষ মাশরাফির নির্বাচনে অংশগ্রহনের বিষয়ে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, মাশরাফি নির্বাচন করলে আমাদের
বিশ্বাস তিনি এমপি এবং মন্ত্রী হবেন। ফলে অবহেলিত নড়াইলের সার্বিক উন্নয়ন সংঘটিত হবে।
নড়াইল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নড়াইল সম্মিলতি সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুন্ডু বলেন, মাশরাফি একজন সৃজনশীল ও ভালো মানুষ। সে বিভিন্ন সময় সাধারন মানুষের উপকার করে থাকে। তিনি এ আসনে নৌকার মাঝি হলে দল-মত
নির্বিশেষে মানুষের সমর্থন ও ভোট পাবেন।
নড়াইল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, মাশরাফি নড়াইলের গর্বিত সন্তান। তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের সবাই তার পক্ষে থাকবে এবং জয় ছিনিয়ে আনবো।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, ‘দল যাকে মনোনয়ন দিবেন, তার পক্ষেই কাজ করবো’।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলা ও উপজেলার বিএনপি নেতা বলেন, খেলার মাঠের মাশরাফি আর রাজনীতির মাশরাফি এক নয়। মাশরাফি কোন দলের সম্পদ হতে পারে না।
মাশরাফি কোন প্রতিপক্ষ তৈরী করবে এমনটি আশা করিনি।
উল্লেখ্য, মাশরাফি ছোট বেলা থেকে খেলাধুলার পাশাপাশি গরিব ও সাধারন মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা ও সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন। গত ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে মাশরাফির নেতৃত্বে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন নামে সম্পূর্ণ সেচ্ছসেবী
সংগঠন যাত্রা শুরু করে। ইতিমধ্যে এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন সাধারন ও দুস্থ মানুষকে আর্থিক সাহায্য, স্বাস্থ সেবা,কৃষি বীজ বিতরণ, সোলার বিতরণ, শিক্ষা, আইসিটি, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে এবং ব্যাপক
প্রশংসাও কুড়াচ্ছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল পৌরসভা, সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, লোহাগড়া পৌরসভা এবং লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নড়াইল-২ আসন। এ আসনে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫১১ জন।
পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৮৭ ও নারী ভোটার রয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৬২৪ জন। ঘোষিত এই তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর হবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।