চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেলাই মেশিন বিতরণে অনিয়ম!
প্রকৌশলী-ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
এস এম সাখাওয়াত শুক্রবার রাত ১১:৪৮, ৮ নভেম্বর, ২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে সরকারি প্রকল্পের টাকায় সেলাই মেশিন বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল শাখার উপ-পরিচালক, উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভোলাহাট আমলী আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়।
মামলার বাদী ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. শাহনাজ খাতুন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ভোলাহাট উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. আছহাবুর রহমানকে। অন্য দুই আসামি হলেন- স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (উপসচিব) দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও এবং প্রকল্পের ঠিকাদার মো. সাজামুল হক।
মামলা এজাহারে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নারী উন্নয়ন ফোরামের জন্য মোট প্রাপ্ত বরাদ্দের ৩ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়। যার পরিমাণ ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে ২৭টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যথাযথ নিয়ম অনুসারে দরপত্র আহŸানের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদার নির্বাচিত হন। কিন্তু সুবিধাভোগীদের ছবি তুলেই সেলাই মেশিন না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
অভিযোগ করা হয়, ভোলাহাট উপজেলার অন্তত ১১ জন নারীকে সেলাই মেশিন দেয়ার নামে উপজেলায় ডেকে মেশিনগুলো সামনে রেখে স্বাক্ষর নিয়ে ছবি তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। এ ঘটনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ও চাঁপাইনবাগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. শাহনাজ খাতুন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. শাহনাজ খাতুন বলেন, ‘আমার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের নাম-তালিকা নেয়া হলেও এ বিষয়ে আমাকে কিছু না জানিয়ে বিতরণের জন্য উপজেলা পরিষদে মহিলাদের ডাকা হয়। কিন্তু বিতরণের নাম করে সামনে সেলাই মেশিন নিয়ে ছবি তোলার পরই তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডি রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক বরাবর অভিযোগ দিলে তিনি স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (উপসচিব) দেবেন্দ্র নাথ উঁরাওকে তদন্তের নির্দেশ দেন।’
শাহনাজ খাতুন অভিযোগ করেন, ‘তদন্তের নির্দেশ দিলেও কোনো রকম তদন্ত না করেই প্রতিবেদন দাখিল করেন স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (উপসচিব) দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও। তার গাফেলতির কারণেই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি ও প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি। তাই তাকেও এই মামলার আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলী মিলে এই অনিয়ম-দূর্নীতি করায় তারাও এই মামলার প্রধান ও দ্বিতীয় আসামি। আশা করি, আদালতের মাধ্যমে সমাজের অসহায় দরিদ্র খেটে-খাওয়া মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সেলাই মেশিন বিতরণে অনিয়মের সাথে জড়িতরা শাস্তির আওতায় আসবে।’
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আশিক ইকবাল সুজন বলেন, ‘নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নেয়া সেলাই মেশিন বিতরণ প্রকল্পে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগে তিনজনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে আমরা আশাবাদী, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হলে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে।’