ঢাকা (বিকাল ৪:১৩) শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চলে গেলেন আমৃত্যু সমাজতন্ত্রের লড়াকু সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আবুল হাসেম

ওবায়দুর রহমান, উপজেলা প্রতিনিধি, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ ওবায়দুর রহমান, উপজেলা প্রতিনিধি, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ Clock বৃহস্পতিবার দুপুর ০২:২৯, ৬ আগস্ট, ২০২০

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্য ও তারাকান্দা উপজেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আবুল হাসেম ৪ আগষ্ট (মঙ্গলবার) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে দুপুর ২.৫০ মিনিটে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুকালে ৪ ছেলে, ১ মেয়ে ও বহু গুণগ্রাহী এবং রাজনৈতিক সহযোদ্ধা রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর।

১৯৪৭ সালে তারাকান্দা উপজেলার গোপালপুরে জোতদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছাবেদ আলীর দান করা সম্পত্তিতে গোপালপুর স্কুল, মসজিদসহ আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়েছেন।
কমরেড আবুল হাসেম সাধারণ মানুষের কাতারে থেকে আজীবন রাজনীতি করেছেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে আজীবন বহিস্কার করেন। পরে কমরেড মনি সিংহ, কমরেড জ্যোতিষ বোসদের অনুপ্রেরণায় তিনি কৃষক সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে শক্তিশালী কৃষক সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক সমিতি গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ কৃষক সমিতির ময়মনসিংহ জেলার আহŸায়ক, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং সর্বশেষ জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাও ছিলেন।

কমরেড আবুল হাসেম ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকাকে বাঁচাতে ছাত্র ইউনিয়ন-ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছেন।

কৃষক নেতা হিসেবে স্থানীয় আন্দোলন ও জাতীয় কর্মসূচীতে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। জনগণের সাথে রাজনীতি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন সবসময়। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে ‘লবন’ কেলেঙ্কারির আন্দোলনে ১৫ হাজার মানুষকে নেতৃত্ব দিয়ে গোপালপুর থেকে ময়মনসিংহে পায়ে হেঁটে এসেছেন ‘ভ‚খা মিছিল’ নিয়ে।

ভূমি জরিপ কাজের দূর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে গোটা তারাকান্দায় এই অবিচার বন্ধ করেছেন, এ নিয়ে বেশ কয়েকবার জেল কাটতে হয়েছে।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৭৯ সালে গোপালপুর থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাস করলেও মাত্র ৭ ভোটের কারচুপিতে পরাজিত দেখানো হয়। ১৯৭৯ সালে ময়মনসিংহ জেলা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সম্পাদক মন্ডলীর নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে রেলপথ-রাজপথ অবরোধের সময় অক্টোবর থেকে ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৭ মাস জেল কেটেছেন। এছাড়াও
বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের জন্য আরো তিনবার কারাবরণ করতে হয়েছে তাকে। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারাকান্দা- ফুলপুর উপজেলায় কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে কাস্তে মার্কায় নির্বাচন করেছিলেন।

সোমবার (৩ আগষ্ট) জ্বর ও তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ৪ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকালে শরীরের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট
(আইসিইউ) তে স্থানান্তর করা হয়। পরে বেলা ২.৫০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। হাসপাতাল থেকে দ্রæতই তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন সন্ধ্যা ৬ টায় এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গার্ড অব অনার (রাষ্ট্রীয় সম্মাননা) প্রদান করেন। পরে কমিউনিস্ট পার্টির কাস্তে হাতুড়ি খচিত লাল পতাকায় লাশ ঢেকে দিয়ে নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করেন। রাত ১০ টায় নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত করার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রগতি লেখক সংঘ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটসহ বহু সংগঠন ও ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT