ঢাকা (সকাল ৮:৫৯) শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

গৌরীপুরে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শুভ্র হত্যার বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও মামলা দায়ের

<script>” title=”<script>


<script>

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্র হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে সোমবার (২০ অক্টোবর) উত্তাল ছিল গৌরীপুর। ওইদিন সকাল ১১টায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ’র উদ্যোগে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গঁ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।

নিহত স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্র’র কালিপুর দৈনিক বাজারের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মা খালেদা বেগমের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার শ্বশুড়ের বাঁধাই ছবি নিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। বলছেন, শেখ হাসিনা শুভ্রকে কোলে নিয়েছিলেন, কপালে চুমু খেয়ে বড় নেতা হবা’ সেই আর্শীবাদও করেছিলো। আজ আমার ছেলে কোথায়, বারবার ছেলেকে খোঁজছেন, প্রধানমন্ত্রী’র নিকট আঁচল পেতে বিচার চাইছেন, আল্লাহর নিকট ছেলের জন্য ফরিয়াদও করছেন। নিহতের বাবা সিদ্দিকুর রহমান যেন নির্বাক, ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, সন্তানের ছবি দেখে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছেন। আরেক রুমে স্ত্রী তাহমিনা আক্তার চুমকী দু’দিনেও কিছু খায়নি, স্বজনরা বারবার তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন, কথার স্বরও যেন বদলে গেছে, স্বামীর শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।

শুভ্র গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষা সৈনিক ডাঃ এম.এ সোবহানের নাতি। কালিপুর দৈনিক বাজার এলাকার হোমিও চিকিৎসক ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খালেদা বেগমের পুত্র। দু’ছেলের মাঝে শুভ্র ছিলো বড় সন্তান।

উপজেলা সদরের মধ্যবাজার কৃষ্ণচূড়া চত্বরে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা।হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন খান, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আঃ মুন্নাফ, উপজেলা শ্রমীকলীগের সভাপতি আঃ সামাদ, জেলা পরিষদ সদস্য এইচ এম খায়রুল বাসার, পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক আহবায়ক ও শুভ্রর চাচা আশিকুর রহমান বাচ্চু, আরেক চাচা উপজেলা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাদেকুর রহমান সেলিম, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা আক্তার রুবি, সাবেক মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি, গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সাইদুর রহমান, যুবলীগ নেতা আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি, ইউপি চেয়ারম্যান ও গৌরীপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব, গৌরীপুর সরকারী কলেজের সর্বশেষ নির্বাচিত জি.এস মাজহারুল ইসলাম টুটুল, গৌরীপুর পৌরসভার কাউন্সিলার আব্দুল কাদির, উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি সানাউল হক হীরা, মিজানুর রহমান, উপজেলা জাতীয় শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহŸায়ক বিল্লাল হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল ফারুক, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ওয়াশিকুল ইসলাম রবিন, ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম, পাভেল রহমানসহ আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ ও আওয়ামীলীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মী। মানববন্ধনে নিহতের চাচা সাদেকুর রহমান সেলিম বলেন, যারা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আমার ভাতিজা মাসুদুর রহমান শুভ্রকে হত্যা করেছে তারা বিএনপি-জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবী করছি। ভাষাসৈনিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম.এ সোবাহানের নাতিকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকেও হত্যা করেছে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে হত্যাকান্ডের নেপথ্যে জড়িতদের বের করে আইনের আওতায় এনে হত্যাকান্ডের সবোর্চ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। (১৯ অক্টোবর) সোমবার রাতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্র’র ছোট ভাই আবিদুর রহমান প্রান্ত বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

মামলায় ১৪জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৭/৮জনকে আসামী করা হয়েছে। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বোরহান উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যেই উপজেলা বিএনপি (একাংশের) যুগ্ম আহŸায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ, মইলাকান্দা ইউনিয়নের পশ্চিম কাউরাট গ্রামের চান মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া (৩২), ইউনুছ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩২) ও আব্দুল খালেকের ছেলে মজিবুর রহমান (৩০)কে আটক করা হয়েছে।

যেভাবে খুন হয় শুভ্র : গৌরীপুর পৌরসভার পানমহালে পৌর মেয়র প্রার্থী হিসাবে শনিবার (১৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে গণসংযোগ শেষে আব্দুর রহিমের দোকানে কর্মীদের নিয়ে চা খেতে খেতে চলছিলো নির্বাচনী আলাপচারিতা। ঐ চা দোকান ও তার আশ-পাশের দোকানে ছিল ২০/২৫জন, চারপাশে শত শত লোকে-লোকারণ্য ছিলো। হাটের দিন থাকায় দোকানীর সংখ্যাও প্রায় অর্ধশত। শতাধিক বৈদ্যুতিক লাইট জ¦লছে। এমন জনাকীর্ণ স্থানে ২টি সিএনজি দিয়ে ৮/১০জন নামে। সড়ক থেকে চা দোকানের দুরত্ব প্রায় ১০ফুট। সেখানে অতর্কিত-এলোপাতাড়িভাবে হামলা চালায়। কথা বলছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামের হামিদুর রহমান এর পুত্র শামীম আহাম্মেদ। তিনি আরো জানান, উপজেলা বিএনপি’র (একাংশের) যুগ্ম আহŸায়ক ও ১নং মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। হঠাৎ করে দু’জন তাকেও কোপ দিতে আসে। সে সরে যাওয়ায় চায়ের দোকানের খুঁটির বাঁশ কেটে গেছে। পরবর্তীতে চিৎকার দিলে এ দু’জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। অন্যরা মাসুদুর রহমান শুভ্র’র ওপর আক্রমণ চালায়। শুভ্রকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুত্বর আহত হন জাহাঙ্গীর ও আল আমিন। ওরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ওইদিন রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মাসুদুর রহমান শুভ্র মারা যায়। রোববার গৌরীপুর স্টেডিয়ামে জানাযা শেষে পৌর কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।

 

 

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT