গৌরীপুরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আব্দুল লতিফ
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ বৃহস্পতিবার দুপুর ০৩:৪২, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের তেলিহাটী-উওরপাড়া গ্রামের মৃত নবী হোসেনের ছেলে অসহায় হতদরিদ্র মো: আব্দুল লতিফ (৫০)। এক ছেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে প্রচন্ড শীতের মধ্যে ত্রিফল আর চটের তাঁবু তৈরি করে জীবনযাপন করছেন।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) সকালে গিয়ে জানা যায়, হতদরিদ্র এই পারিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের ভাগ্যে জুটেনি সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা।
প্রায় ০৬ মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায় লতিফের বড় ছেলে শরীফ (১৯)। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করিয়ে কোন উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার পর জানতে পারে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। রিক্সাচালক স্বামীর অভাবের সংসারে সন্তানের ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ ও খাবার জোগান দিতে লতিফের এর স্ত্রী মুর্শিদা (৩৭) বাসা বাড়িতে ঝি এর কাজ নেন।
স্বামী রিক্সা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করতো তা দিয়ে চিকিৎসাসহ পরিবারের খরচ জুটানো কঠিন হয়ে যেতো। এ কারণেই মানুষের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়েও সন্তানের চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেছেন তারা। তবুও অর্থের অভাবে নিজ সন্তানকে বাঁচাতে পারেনি তারা। ছেলের শোকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরার কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে বাড়ীতে ফিরে আসেন। বাড়িতে ফিরে আব্দুল লতিফ কোন কাজ করতে পারছে না। কোনভাবে একবেলা খাবার জুটলেও অন্য বেলায় জুটছে না।
এ বিষয়ে মুর্শিদার সাথে কথা হয়। তিনি আঞ্চলিক ভাষায় এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার বড্ডা ছেলে অসুস্থ অইছিলো কিন্তু ভালামতো চিকিৎসা করাতে পারি নাই টেহার লাইগ্যা, ঢাহা মেডিকেলে চিকিৎসা করাইছি ছাইয়্যা মাইগ্যা, আর কিছু করতে হারি নাই। শেষে চিকিৎসা করাইতে না পাইর্যা ছেলেডা মইর্যাই গেলো, পোলাডারে বাঁচাইতাম পারলাম না। অহন বাড়িতে আইয়্যা এক কুছি (২.৫০) আড়াই শতাংশ)। আমার জামাইয়ের অসুখ থাহে, নিজেরও অসুখ থাহে। অহনতেরি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কিচ্ছু দেই নাই। কেউ আইয়া জিগাইও না। আগে একখান চালা ঘর আছিন ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা হরইরাছে। অহন তিরফল টাংগাইয়া ৫ মাস ধইর্যা এমনে পোলাপাইন লইয়্যা থাকতাছি। টাইন্যা-টুইন্যা কোনরহমে সংসারডা চালাইতে কষ্ট হইতাছে। মানষের কাছে হুনতাছি শেখ হাসিনার সরহারে নাহি ঘর দিতাছে। আমরা যদি এরহম একটা ঘর হাইতাম হোলাহানডিরে লইয়্যা একটু শান্তিতে ঘুমাইতাম। এ বিষয়ে প্রতিবেশীরা জানান, লতিফের কিছুই নাই পুলাপাইন লইয়া খুব বিপদে আছে একটা চট টাংগাইয়া থাকতাছে, যদি সরহারীভাবে একটা ঘর পাইতো আমরা হক্কলেই সবাই খুশি হইতাম।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে আসছি। ওরা ঢাকা ছিলো। ৫ মাস হইছে বাড়িতে আসছে। আমার কাছে এই মুহুর্তে কোন প্রকল্প নাই, তবুও আমি একটি ভাতার কার্ডসহ একটি ঘর ও টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, সরিজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ২য় ধাপে সরকারী ঘর বরাদ্দ ও একটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।