কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা নমুনা সংগ্রহে নিয়ম বর্হিভূতভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনা পরীক্ষা করতে আসা ব্যক্তিদের অভিযোগ, মাইকিং করে বিনামূল্যে করোনা টেস্টের কথা বললেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলেও জানান তারা। হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার নামে টাকা নেয়া হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায়, মানুষজনের করোনা উপসর্গ থাকলেও, তা পরীক্ষা করতে অনিহা দেখা গেছে। এতে করে এ উপজেলায় দ্রুত করোনা ভাইরাস বিস্তারের আশংকা করছেন অনেকে।
কুড়িগ্রাম উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা।এ জেলায় উলিপুর উপজেলার অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস।বর্তমানে কঠোর লকডাউনে মধ্যবিত্ত ও নিস্ন আয়ের পেশাজীবিদের আয়-উপার্জন নেই বললেই চলে।অভাব,দুঃখ, কষ্ট ও রোগ বালাইয়ের মধ্যে দিয়ে সংগ্রাম করে দিনাতিপাত করছেন তারা।
বর্তমান এ উপজেলায় করোনার প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিটি বাড়িতে করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি, হাচি, কাশির রোগী রয়েছে। যার ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভীতি সবার মনে কাজ করছে। সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি সকল অফিস বন্ধ থাকায় এলাকায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পেশাজীবিদের রোজগার নেই বললেই চলে।অনেক মানুষের তো টাকা দিয়ে করোনা টেস্টের সামর্থ্য নেই।যারা পরিবারের খবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে তারা কিভাবে করোনা টেস্ট করবে?
এখন শুধু যাদের ফি দেয়ার সামর্থ্য আছে তারাই করোনা নমুনা পরীক্ষা করছেন।আর যাদের সংসার চলছে না তারা টাকা ফি দিয়ে করোনার উপসর্গ থাকলেও টেস্ট করাচ্ছে না।ফলে উপজেলার করোনার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা।যার কারণে জেলার ৯ টি উপজেলার মধ্যে উলিপুর উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন সর্বোচ্চ হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে (২৪ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই) এ উপজেলায় ২৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা গেছে ২ জন।সূত্রটি আরো জানায়, চলতি (জুলাই) মাসে করোনা পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হওয়ার কথা। কিন্ত উলিপুর হাসপাতালে সকল বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করোনা পরীক্ষা করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে ইচ্ছামত ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে করোনা পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। সাধারণত সরকারি টাকা গ্রহণ করতে হলে রশিদ দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নমুনাদাতাদের কাউকে কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি।ফলে করোনা পরীক্ষার নামে টাকা আদায় করায় জনমনে মিশ্রি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা পরীক্ষা করতে আসা দলদলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ সরকার জানান, টাকা নিলেও কিছু করার নেই। এদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই, যা চাইবে তাই দিতে হবে। এক হাজার টাকা চাইলেও তা দিতে বাধ্য আমরা।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বাইজিদ ও আতাউর রহমান তাদের খালা এবং দাদির করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে আসেন। তাদের কাছেও ১০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
করোনা উপসর্গ না থাকলেও ধামশ্রেণী কাশিয়াগাড়ি এলাকার দুই বন্ধু মাজেদুল এবং মামুন মিয়া করেনা পরীক্ষা করতে আসলে তাদের কাছ থেকেও ২০০ করে টাকা নেয়া হয় বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা রেজাউল ইসলাম ও তাজুল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তারা টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডাঃ ইয়াছির আরাফাত বলেন, নতুন যোগদান করেছি, করোনা পরীক্ষার জন্য টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন,আমি নিজেই এখন করোনা পজেটিভ হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি।আমি ঘোষণা দিয়ে এসেছি ফ্রিতে করোনা পরীক্ষা করা হবে।আমার অনুপস্থিতিতে কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকে উপযুক্ত প্রমাণাদি পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, জুলাই মাসে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা করার কথা। তবে করোনা পরীক্ষার নামে টাকা নেয়ার খবর শুনে তাৎক্ষনিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সাথে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।