কলেজ ছাত্রীকে উক্ত্যক্ত করায় অতিষ্ঠ হয়ে হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্ঠা
মোবারক হোসাইন,ধর্মপাশা(সুনামগঞ্জ) বুধবার দুপুর ০১:৩১, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেধাবী ছাত্রী (১৮) স্থানীয় তিন তরুণের উক্ত্যক্তে অতিষ্ঠ হয়ে হারপিক পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (৭জানুয়ারি) সকাল সাতটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। উক্ত্যক্তের ঘটনায় প্রতিকার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল সোমবার (১১জানুয়ারি) বিকেলে ওই ছাত্রীটির মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনওর ) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ইউএনওর কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও ওই কলেজে ছাত্রী পরিবার জানা গেছে, একাদশ শ্রেনিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রীটি (১৮) কে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে ও প্রাইভেটে আসা যাওয়ার পথে নানাভাবে উক্ত্যক্ত করে আসছিল উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে অনিক (১৮), ধর্মপাশা গ্রামের আলী ইউনুসের ছেলে রিফাত (১৮) ও ধর্মপাশা নতুন পাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে তোরাগ (১৮)। মাস খানেক আগে উক্ত্যক্তে শিকার হওয়া ওই ছাত্রীটির মা ঘটনাটি তার মেয়ের কাছে জানতে পেরে ওই তিন তরুণের সঙ্গে দেখা করে তার মেয়েকে বিরক্ত না করার বলে বলেন। কিন্তু এতে ওই তিন তরুণ ছাত্রীটিকে আরও বেশি করে উক্ত্যক্তে করতে শুরু করে।
সর্বশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর সকাল আটটার দিকে ছাত্রীটি তার নিজ কলেজের সামনের সড়কে গেলে তাকে একা পেয়ে ওই তিন তরুণ ছাত্রীটিকে খারাপ ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ভয় পেয়ে ওই ছাত্রীটি চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে দ্রুত ওই তিন তরুণ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় ছাত্রীটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজেকে সামলাতে না পেরে গত বৃহস্পতিবার (৭জানুয়ারি) সকাল সাতটার দিকে নিজেদের বসত ঘরের টয়লেটে থাকা হারপিক পান করে ফেলে।
বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা ওই ছাত্রীটিকে সঙ্গে সঙ্গে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে ছাত্রীটিকে সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ওইদিনই ছাত্রীটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইদিন ভর্তি থাকার পর চিকিৎসা শেষে গত রোববার ছাত্রীটিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।
অভিযুক্ত অনিক, রিফাত ও তোরাগের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের ধর্মপাশা নতুন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা তোরাগের বাবা আব্দুল হামিদ বলেন, আমার ছেলে কোনো কলেজ ছাত্রীকে উক্ত্যক্ত করার প্রশ্নই আসে না। তবে ঘটনায় অনিক নামে যে ছেলেটার নাম এসেছে সে আমার ছেলের বন্ধু। আমার ছেলে মেয়ে আছে। এই ঘটনার নেপথ্যে যে ঘটনাটি লুকিয়ে আছে তা নিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক হবে না। তবে আমি হলফ করে বলতে পারি অনিকের বন্ধু হওয়ায় আমার ছেলেকে এই ঘটনায় জড়ানো হয়েছে।
ওই ছাত্রীটির বাবা বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমার স্ত্রী সোমবার (১১জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছি। অভিযোগ করার পর গ্রাম্য মাতব্বরেরা বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করার জন্য চেষ্ঠা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন, কলেজ ছাত্রীটিকে উক্ত্যক্ত করার অভিযোগটির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আজ মঙ্গলবার বিকেলে থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে।
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার সন্ধ্য সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোনে বলেন, আমি দাপ্তরিক কাজে সুনামগঞ্জ আছি। এখনো অভিযোগটি আমার হাতে পৌছায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইভটিজিংয়ের ঘটনা গ্রাম্য সালিসে শেষ করার কোনো বিধান আছে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রাম্য সালিসে এসব অপরাধ শেষ করার সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। আরও বলেন,ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনাগুলো গ্রাম্য সালিসে শেষ করার কোনো বিধান নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।