ঢাকা (বিকাল ৪:১০) বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ ইং

আলীকদমে রহস্যময় আলী সুড়ঙ্গ

<script>” title=”<script>


<script>

বান্দরবানের আলীকদমে গুহা আলীর সুড়ঙ্গ নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। আলীকদম নাম নিয়ে যেমন নানা কথা, উপকথা আর অভিমত চালু আছে, তেমনি রহস্যময় এই গুহা নিয়েও মজার মজার সব গল্প আর কিংবদন্তি পাওয়া যায়।

এলাকাবাসীর কাছে এই রহস্ যগুহার নাম আলীর সুরম। সরকারি নথিপত্রে এটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে পুরাকীর্তি হিসেবে। শুধু যে সুড়ঙ্গটার নাম আলীর নামে তা কিন্তু নয়, যে পাথুরে পাহাড়ে এই গুহার অবস্থান তার নামও আলীর পাহাড়। আর উপজেলার নাম আলীকদম। এই আলীকদম আলীর পাহাড় আর আলীর গুহা একসূত্রে গাঁথা বলে ধারণা করা যায়। তবে কখন কিভাবে দুর্গম পাহাড়ে এমন অদ্ভূত সুন্দর গুহা তৈরি হলো তা নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য বা নথি পাওয়া যায় না।

বহুল প্রচলিত ধারণা হলো, আলোহক্যডং থেকে আলীকদম নামটির জন্ম। যার অর্থ পাহাড় আর নদীর মধ্যবর্তী স্থান। বান্দরবানের রাজা বোমাং সার্কেল চিফ এর নথিপত্রে ও পাকিস্তান আমলের মানচিত্রে আলোহক্যডং নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো মানচিত্রেও (Ensea Det Bengalla) পর্তুগীজ পণ্ডিত জোয়াও জে বারোজ (Jao De Barros) আলোহক্যডং নামটি ব্যবহার করেছেন।

আরকানি ভাষায় অনেক পাহাড় ও জায়গার নামে ডং, থং বা দং উপসর্গ জুড়ে আছে। সম্ভবত: ডং মানেই পাহাড়। তাই ধারণা করা হয়, তাজিংডং ও কেউক্রাডং পাহাড়ের মতোই আলোহক্যডং একটি পাহাড়ের নাম, যা কালক্রমে আলীকদম নাম নিয়েছে। অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙামাটির প্রথম জেলা প্রশাসক ক্যাপ্টেন টিএইচ লুইন এর মতে, ALLEY KINGDOM থেকে ALIKADAM নাম হয়েছে। তার মতে,  ALLEY অর্থ দমন, আর KINGDOM অর্থ রাজ্য। বাংলায় মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁ এখানে ক্ষুদ্র এক রাজ্য শক্তিকে করায়ত্ব বা দমন করেন। তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পাননি আমলে এ অঞ্চলের নাম হয় ALLEY KINGDOM বা দমন করা রাজ্য। যা পরবর্তীতে আলীকদম নামে টিকে থাকে।

নবম শতাব্দী থেকে আরাকানি শাসনে থাকা আলীকদম  পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে বাংলার সুলতান জালালউদ্দিনের করায়ত্ব হয়। ১৭৫৬ সালে মুঘলরা এ অঞ্চল জয় করলে আরাকানি শাসনের কফিন শেষ পেরেক ঠোকার কাজটি হয়ে যায়। আরাকান রাজ কং হ্লা প্রুকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে স্ব-পরিবারে

পার্বত্য অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে অনেক আগে। আরকানি ইতিহাসে বলা হচ্ছে, শাসন পরিচালনার ফায়দা তুলছে ১৮ জন আরকানি রাজা মুসলিম উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। এদের মধ্যে ১৪৩৪-১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ অঞ্চল শাসন করেন রাজা মাং খারি। তার মুসলিম উপধি ছিল আলী খান। ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্য্ন্ত রাজত্ব পরিচালনাকারী রাজা থাজাথা’র মুসলিম উপাধি ছিল আলী শাহ্। এ দুই নামের প্রভাবে আলীকদম নামটি এসে থাকতে পারে। অপর এক ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, আরবীতে কদম অর্থ পা। প্রয়োগ ভেদে যার অর্থ পদাচারণাও হতে পারে। আলী নামের কেউ একজন কোনো এক সময় এ অঞ্চলে পা রেখে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার নামের সঙ্গে কদম শব্দটি যুক্ত হয়ে আলীকদম নামটির জন্ম। তবে এমনও ধারণা প্রচলিত যে, হযরত শাহজালাল এর নেতৃত্বে ৩৬০ আউলিয়া ধর্মপ্রচারের জন্য সিলেট অঞ্চলে এলে তাদের একটি অংশ পার্বত্য এলাকায় আসেন, যাদের কারো নামের আলী উপাধি থেকে আলীকদম নামের জন্ম।

আলীকদমের অবস্থান বান্দরবান থেকে ১১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে। পাহাড়ের পর পাহাড়ী রাস্তা পাড়ি দিয়ে আলী সুড়ঙ্গে যেতে হয়। থানচি থেকে আলীকদমে সম্প্রতি ডিম পাহাড়ের ওপর দিয়ে নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা দিয়ে এখানে যাওয়া যায়। এ রাস্তার মাথায় পানবাজার এলাকা থেকে পূর্ব দিকে মাতামুহুরি নদীর তীরে আলীর পাহাড়ের অবস্থান।  আলীকদম শহর থেকে যার দূরত্ব ৪ কিলোমিটার মাত্র। বর্তমানে যাতায়াতের সুবিধার্তে তৈন খালের উপর দিয়ে একটি ব্রিজ ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT