ঢাকা (বিকাল ৩:০৫) শুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News নেপালে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান সোহাগ Meghna News নড়াইল জেলা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত Meghna News বিআরডিবি’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মহিউদ্দিন তালুকদার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে শাশুড়ী হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল পলাতক Meghna News গৌরীপুরে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মোৎসব পালিত Meghna News সিলেট টিটিসি থেকে ২২ বছর পর বদলী : মালিক হলেন লাল লাখ টাকার! Meghna News গৌরীপুরে হুমায়ূন আহমেদের নামে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবী ভক্তদের Meghna News সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বালু বোঝাই ট্রাক্টরের ধাক্কায় শিশু নিহত, চালক আটক Meghna News ভোলার চরফ্যাশনে মোটরসাইকেল-নসিমন সংঘর্ষে দুই বন্ধু নিহত

হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock মঙ্গলবার রাত ১১:৩৯, ১০ মার্চ, ২০২০

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বাঁচো। কেননা, হিংসা মানুষের নেক আমলকে এমনভাবে ধ্বংস করে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে দেয়। (আবু দাউদ)
মানব চরিত্রে যেসব খারাপ অভ্যাস আছে, তারমধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষ খুবই ক্ষতিকারক।
আজ আমি হিংসা সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরলাম পাঠকের কাছে।
ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, দ্বন্দ্ব ও কলহ-বিবাদ মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় ও দুর্বিষহ করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা-বাসনাকে আরবিতে ‘হাসাদ’ বা হিংসা বলা হয়।
ইসলাম অন্যের প্রতি হিংসা করা বা প্রতিহিংসা পরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের স্থলে সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যা দিয়েছেন, সেজন্য কি তারা তাদের ঈর্ষা করে? (সূরা নিসা, আয়াত: ৫৪)
হিংসা একটি ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধি। মানুষের হীন মন-মানসিকতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, সম্পদের মোহ, পদমর্যাদার লোভ-লালসা থেকে হিংসা-বিদ্বেষের উৎপত্তি ও বিকাশ হয়।
হিংসা-বিদ্বেষ মুমিনের নেক আমল ও প্রতিদানকে এবং নেক আমলের প্রতি তার আগ্রহী মনকে নীরবে ধ্বংস করে দেয়।
মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, শঠতা-কপটতা, অশান্তি, হানাহানি ইত্যাদি সামাজিক অনাচারের পথ পরিহার করে পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে এবং ইসলামের পরিশীলিত জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ হবে, এটিই দিন-ইসলামের মূলকথা।
হিংসা ও ঈর্ষা মানুষকে কত অধঃপতনে নিয়ে যায়, তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। ঈর্ষা ও হিংসা প্রায় একই রকম আবেগ, তবে হিংসাকে বলা হয় ঈর্ষার চরম বহিঃপ্রকাশ।
ঈর্ষাকাতরতা হিংসার পর্যায়ে চলে গেলে আক্রোশবশত মানুষ হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। হিংসুক ব্যক্তি অন্যের ভালো কিছু সহ্য করতে পারে না, কাউকে কোনো উন্নতি বা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দেখলে অন্তরে জ্বালা অনুভব করে। এহেন অশোভন আচরণ সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী।
হিংসুক ব্যক্তি যখন হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত থাকে, তখন তাকে পরিত্যাগ করা অবশ্য কর্তব্য। এ জন্য হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য পবিত্র কোরআনে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, ‘আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই, যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক, আয়াত: ৫)
দৈনন্দিন জীবনে হিংসার বহুবিধ কারণ যেমন পারস্পরিক ঈর্ষাপরায়ণতা, পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা, দাম্ভিকতা, নিজের অসৎ উদ্দেশ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা, নেতৃত্ব বা ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা, অনুগত লোকদের যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে যাওয়া এবং কোনো সুযোগ-সুবিধা হাসিল হওয়া, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নীচুতা বা কার্পণ্য প্রভৃতি বিদ্যমান।
নানা কারণে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির প্রতি হিংসা প্রকাশ করে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বেঁচে থাকবে, কেননা এরূপ ধারণা জঘন্যতম মিথ্যা। আর কারও দোষ অনুসন্ধান করবে না, কারও গোপনীয় বিষয় অন্বেষণ করবে না, একে অন্যকে ধোঁকা দেবে না, পরস্পর হিংসা করবে না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করবে না, পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, বরং তোমরা সবাই এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোনো কারণে কারও প্রতি শত্রুভাবাপন্নতা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ধরে রাখার নাম বিদ্বেষ। একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার বিষয়টি বদভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে পারস্পরিক বিদ্বেষ পোষণ করা হারাম।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘তিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না, তার মধ্যে একজন হচ্ছে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি।
হিংসা-বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি সম্বন্ধে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলগুলো পেশ করা হয় এবং সকল মুমিন বান্দার গুনাহখাতা মাফ করে দেওয়া হয়; কিন্তু যাদের পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুশমনি আছে, তাদের ক্ষমা করা হয় না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন: তাদের ছেড়ে দাও, যেন তারা ফিরে আসে অর্থাৎ মিলে যায়। (মুসলিম)
বিশ্বাসী মানুষের চরিত্র গঠনে হিংসা-বিদ্বেষ বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে মানুষে-মানুষে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, হানাহানি ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উদ্ভব ঘটে।
ইমানদারদের মন থেকে সব ধরনের হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সমাজের সবার সঙ্গে শান্তিতে মিলেমিশে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে মুণ্ডনকারী (ধ্বংসকারী) রোগ ঘৃণা ও হিংসা তোমাদের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে আসছে। আমি চুল মুণ্ডনের কথা বলছি না, বরং তা হলো দ্বীনের মুণ্ডনকারী।’ (তিরমিজি ও আহমাদ)।
পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে পৃথিবীর সকল সৃষ্টির সেবা ও কল্যাণ কামনা করাই হলো ইসলামের প্রকৃত অনুশীলন। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষেরা এর প্রকাশ ঘটিয়ে প্রকৃতপক্ষে ইসলামেরই ক্ষতি করছে।
হিংসা ও বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে বাহুবল প্রয়োগ কেবল হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা ও শত্রুতাকেই বৃদ্ধি করে এবং সামাজ জীবনে শান্তি ফিরে আসতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই কোনো কিছু নিয়ে ঈর্ষা, হিংসা বা বিদ্বেষ করা উচিত নয়।
নিজের যা কিছু আছে, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অন্যের দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে হিংসার আগুনে জ্বলেপুড়ে নিজের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। সুতরাং আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হলে ইসলামকে জীবনে ধারণ করে চলা মানুষদের অবশ্যই সর্বাবস্থায় হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সুন্দর মন নিয়ে সৎভাবে পরিশীলিত জীবন যাপন করা একান্ত অপরিহার্য।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সুন্দর মন নিয়ে সৎভাবে পরিশীলিত জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।



শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT