হাতের কাজের মাধ্যমে নাচোলের মেয়ে শরিফা এখন সফল উদ্দ্যোক্তা
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৬:০৭, ২৫ মার্চ, ২০২১
সময়টা ছিল ২০০৫ সালের দিকের। অনলাইন বিজনেসের হাতেখড়ি হয়েছিল সেই বছরেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে শরিফাতুন্নেসা শরিফার অল্প বয়সে বিয়ে হয়। মমতাময়ী মা হয়ে যান তাড়াতাড়ি। বাচ্চা হবার পর বাচ্চাকে রেখে পড়াশোনা করতে যাবার মতো সাহস বা সাপোর্ট কোনটাই ছিলো না তার। কিন্তু ঘরে এভাবে আর কতদিন বসে থাকা যায়! তাই ঘরে বসেই কিছু করা যায় কিনা এমন চিন্তা থেকেই তিনি খুলে বসেন একটি ফেসবুক পেইজ। মেয়ের নামে সে পেইজের নাম দেন “আয়াত কাঁথা ঘর”।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়ে হওয়ায় নকশিকাঁথার প্রতি ভালোলাগা ও ভালো ধারণা ছিল তার। তাই চিন্তা বেশি না করেই নকশিকাঁথা নিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি। প্রথমে শরিফা তার মায়ের বাক্স থেকে কিছু নকশিকাঁথা বের করে ছবি তুলে ফেসবুকে কয়েকটা পোস্ট দেয়। সেই ছবি দেয়ার প্রায় দেড় মাস পরে একটা কাঁথার অর্ডার আসে। তার পেজের প্রথম কাস্টমার হন সুইডেন প্রবাসি সোনিয়া সিদ্দিক। পরিচিত এক প্রতিবেশী ভাবীকে দিয়ে সে কাঁথা সেলাই করিয়ে নেন। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অল্পস্বল্প করে আরও অর্ডার আসা শুরু হয়। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপগুলোর মাধ্যমে নিজের পরিচিতি বাড়াতে শুরু করেন তিনি। বাড়তে থাকলো তার কাঁথার জন্য কর্মীর সংখ্যা। এখন তার ১৫-১৬ জন কর্মী ফিল্ডে কাজ করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাঁথা দিয়ে শুরু করলেও এখন তার কালেকশনে যশোর, জামালপুরের নকশিকাঁথাও রয়েছে। সে সব জায়গাতেও তার ৫-৬ জন কর্মী কাজ করেন। তার নকশিকাঁথা এখন শুধু দেশেই নয় বরং দেশের গন্ডি পেরিয়ে আমেরিকা, সুইডেন, কাতার, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে তার নকশিকাঁথা যাচ্ছে। আর দেশি পণ্যের সাইট উই থেকে এ পর্যন্ত তার বিক্রয় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে।
আমাদের এই দেশীয় ঐতিহ্য নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে “আয়াত কাঁথা ঘর” এর পণ্য একদিন সবাই চিনবে। শরিফা আশা করেন, সে দিন আর হয়তো বেশি দূরে নয় যখন দেশ বিদেশে ছড়িয়ে যাবে দেশীয় পণ্য। বাড়বে কর্মসংস্থান, বাড়বে দেশীয় পন্যের চাহিদা, বাড়বে এলাকার সম্মান।