ঢাকা (সকাল ১০:৪৬) শনিবার, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না! Meghna News বিস্ফোরক আইনে প্রধান শিক্ষক শফিক গ্রেফতার Meghna News নাগরপুরে বিডি ক্লিনের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবারো মারা গেছে মাদ্রাসা ছাত্র Meghna News নেপালে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান সোহাগ Meghna News নড়াইল জেলা ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবী মিলনমেলা অনুষ্ঠিত Meghna News বিএনপির সাবেক এমপির’র বিরুদ্ধে হামলা-দখলের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন Meghna News বিআরডিবি’র নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মহিউদ্দিন তালুকদার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে শাশুড়ী হত্যায় অভিযুক্ত টুটুল পলাতক Meghna News গৌরীপুরে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মোৎসব পালিত

যাঁকে ভালবাসা ছাড়া প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock শনিবার রাত ০১:২১, ১ অক্টোবর, ২০২২

ঈমানের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখা, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত। অর্থাৎ একজন মুমিনকে যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয় এবং যা ছাড়া কেউ মুমিন হতে পারে না নবীর প্রতি ভালবাসা অন্যতম। হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।

لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنّاسِ أَجْمَعِينَ.

তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার বাবা, তার সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব। সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৪।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসা একটি মানদ-এই মানদণ্ডের দ্বারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ঈমান যাচাই করে নিতে পারেন। অন্তরে যদি তাঁর প্রতি মহব্বত ও ভালবাসা অনুভব করেন তাহলে আনন্দিত হোন; আল্লাহ তাআলা আপনাকে ঈমানের একটি বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। অন্যথায় নিজের ব্যাপারে সতর্ক হোন; এখনও সতর্ক হওয়ার ও সংশোধন হওয়ার সময় আছে।

মুমিন কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না ভালবেসে পারে? যাঁর মাধ্যমে মানবজাতি পেল ঈমান ও কুরআনের মতো মহাসম্পদ, লাভ করল মুমিন হওয়ার মহাসৌভাগ্য, যিনি আমাদের দেখালেন ইহকাল-পরকালের শান্তির পথ, সেই পথ দেখাতে গিয়ে যাঁর রক্ত ঝরল, দান্দান মোবারক শহীদ হল, এরপরও আল্লাহর দরবারে উম্মতের নাজাত ও হেদায়েত প্রার্থনা করে অশ্রু ঝরালেন তাঁকে তো ভালবাসতেই হবে।

যিনি মানুষকে দিলেন মনুষ্যত্বের পাঠ, মাটির মানুষকে পরিচিত করলেন তার আসমানী মর্যাদার সাথে, তার সামনে উন্মুক্ত করলেন বিশ্বাস ও কর্মের এক উন্নত জগৎ, উন্মোচিত করলেন প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্বাস ও চেতনার, চরিত্র ও নৈতিকতার আকাশসম উচ্চতায় উড্ডয়নের সুপ্ত সম্ভাবনার দুয়ার। এককথায় যিনি মানবকে দেখালেন তার মানব-জন্ম সার্থক হওয়ার পথ তাঁকে তো ভালবাসতেই হবে।

তাঁকে ভালবাসা ছাড়া ও তাঁর অপরিশোধ্য ঋণ স্বীকার করা ছাড়া আমরা সভ্য মানুষ কীভাবে হব?

ঈমান আমাদের সভ্য-সুশীল মানুষ হওয়ার শিক্ষা দান করে। ঈমান আমাদের ঐসকল গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে বলে, যা ছাড়া কেউ সভ্য-সজ্জন হতে পারে না, সর্বাঙ্গসুন্দর হতে পারে না। আর একারণেই ঈমানের শিক্ষা বিস্তারের আজ অতি প্রয়োজন।

ঈমানের শিক্ষায় মানুষ পরিশুদ্ধ হয়, পরিশীলিত হয়। তার চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি, উদ্যম-উদ্দীপনা সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তার যোগ্যতা ও সক্ষমতা তাকে সঠিক গন্তব্যের দিকে পরিচালিত করে।

মানুষের আবেগ-অনুভূতিও তার এক শক্তি। এই শক্তি সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে এর দ্বারা ‘অসাধ্য’ সাধন হতে পারে। অন্যদিকে ভুল ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সমাজকে অবক্ষয়-অরাজকতার নরকে পরিণত করতে পারে।

ইসলামের শিক্ষার যথার্থতা যে, ইসলাম মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঠিক ক্ষেত্র নির্দেশ করেছে। কোথায় ব্যবহৃত হবে অনুরাগ-ভালবাসার শক্তি, আর কোথায় বিরাগ-বিদ্বেষের শক্তি কুরআন-সুন্নাহয় তার পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনার সারনির্যাস নিমক্তো হাদীসটি।

مَنْ أَحَبّ لِلهِ، وَأَبْغَضَ لِلهِ، وَأَعْطَى لِلهِ، وَمَنَعَ لِلهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيمَانَ.

যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ পোষণ করে, আল্লাহর জন্য দেয়, আর আল্লাহর জন্য দেয়া থেকে বিরত থাকে তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৮১

এই হাদীস শরীফ আমাদের জানাচ্ছে যে, কর্মের ক্ষেত্রে যেমন আমাদের স্বাধীন-স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি নেই আবেগ-অনুভূতি ও অনুরাগ-বিরাগের ক্ষেত্রেও। মুমিনের ভালবাসাও হবে আল্লাহর জন্য, বিদ্বেষও আল্লাহর জন্য। আর তাহলেই বিদ্বেষ-ভালবাসার মতো দুটি মানবীয় বৃত্তিও হয়ে যাবে ঈমানের পূর্ণতার উপায়।

চিন্তাশীল যে কেউ শান্ত মনে চিন্তা-ভাবনা করলে ইসলামের এই শিক্ষার যথার্থতা উপলব্ধি করতে পারবেন। আজকের মানব-সমাজের অবক্ষয়-অনৈতিকতার এক বড় অংশই কি নয় মানবের অনুরাগ-বৃত্তির বিপথগামিতার ফল? তেমনি সমাজের হানাহানি, জুলুম-অবিচারেরও এক বড় অংশ কি নয় মানবের অসংযত ‘বিদ্বেষের’ কুফল? কাজেই মানবস্বভাবের এই দুই বৃত্তিকে অবশ্যই লাগাম পরাতে হবে। একে স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে ফেরাতে হবে এবং সঠিক ও যথার্থ ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম আমাদেরকে এই শিক্ষা দান করে।

আল্লাহর জন্য যে ভালবাসা তার মধ্যে পবিত্রতম ও গভীরতম ভালবাসা হচ্ছে তাঁর রাসূল খাতামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসা। মানবের প্রতি মানবের এর চেয়ে পবিত্র ও যথার্থ ভালবাসা আর হতেই পারে না। তিনি মুমিনের কাছে তার বাবার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মানের, আপন সন্তানের চেয়েও বেশি আপনার, জগতের সকল পছন্দের মানুষের চেয়েও বেশি পছন্দের। মুমিন-হৃদয়ের এই নির্মল শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও অন্তরঙ্গতার প্রকাশ ঘটবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে, সকল অঙ্গনে। চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি, কর্ম ও প্রেরণা, উদ্যম ও উদ্দীপনা সকল ক্ষেত্রে।

এই পবিত্র-ভালবাসার প্রকাশ ঘটবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন সাধনা দ্বীন ও শরীয়তের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন, সমর্পণ ও ভালবাসার মাধ্যমে। সুন্নাহ ও শরীয়তের পঠন-পাঠন, অনুসরণ-অনুশীলন, বিস্তার ও সংরক্ষণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মুমিন নিজেকে অগ্রণী ও অগ্রগামী করবে। আর তা করবে হৃদয়ের গভীরের সেই পবিত্র-ভালবাসা থেকে। কে না বুঝবে যে, দ্বীন ও শরীয়তের অনুসরণের মধ্য দিয়েই আমরা পেতে পারি সুন্দর জীবন ও কল্যাণ সমাজ?

আর তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসা হচ্ছে জীবন গঠন ও সমাজ গঠনেরও অতি বড় উপায়। সুস্থ-সুন্দর জীবন গঠনে এবং শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে এর কোনো বিকল্প নেই।

তাই আসুন, আমাদের ঈমানকে মজবুত করি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের জীবন ও জগৎকে আলোকিত করি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন আমীন।


লেখকঃ-হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT