বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অফিসের সময় ও কর্মদিবস কমানোর কথা চিন্তা করছে সরকার
নিজস্ব প্রতিনিধি শুক্রবার রাত ০২:৪৩, ৮ জুলাই, ২০২২
বাড়ছে গরম, চলছে লোডশেডিং। বহুদিন এমন লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়নি মানুষকে। হঠাৎই এমন অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। সেপ্টেম্বরের আগে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এমন অবস্থায় দেশে বিদ্যুত সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের রুটিন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বৃহস্পতিবার তার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ‘অফিসের সময় ও কর্মদিবস কমানোর চিন্তা চলছে’ বলে জানিয়েছেন। লকডাউনের মতো হোম অফিস চালুর আভাসও দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সবাইকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানিয়ে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, পিক আওয়ারে দুই হাজার মেগাওয়াট চাহিদা কমানো গেলে লোডশেডিংয়ের চাপ নাও থাকতে পারে। তবে, গ্রাম ও শহরে লোডশেডিং বণ্টনে ন্যায্যতা আনা কঠিন। গ্রামের মানুষকে ভুগতে হবে বেশি।
তৌফিক-ই-ইলাহী আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমাতে অফিস সময়ও কমিয়ে আনার কথা ভাবছে সরকার। আবারও চালু হতে পারে হোম অফিস।
বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, এখন একটা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সবাইকেই সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে৷ সাত দিনের মধ্যে প্রত্যেক বিতরণ সংস্থাকে অ্যাপস ডেভেলপ করতে বলা হয়েছে৷ সবাই মেনে চললে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হবে না৷
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দৈনন্দিন প্রয়োজন হবে৷ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে, এই চাহিদা ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব৷ সেপ্টেম্বরের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে তেল ও গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, গত ছয় থেকে সাত মাস ধরে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারে কিনতাম, সেটা এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। সেটা সব সময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেদের অর্থ দিয়ে ভর্তুকি দিয়ে আসছি। তবে, এখন মনে হয় আমাদের দামের সমন্বয় করতে। বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুতের পাওয়ার প্লান্ট গ্যাস দিয়ে চলে। আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন দিনদিন বাড়ছে, আবার কমছেও। যেটা আমরা বাড়াচ্ছি, যে খনিগুলো থেকে গ্যাস পাচ্ছি, সেটা খুব স্বল্প পরিমাণে। কিন্তু, কমছে খুব।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল এবং গ্যাসের দামে প্রচণ্ডভাবে প্রভাব ফেলেছে জানিয়ে নসরুল হামিদ তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে পরামর্শ দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়ার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন পুরো বিশ্বেরই নাভিশ্বাস অবস্থা। এ অবস্থায় আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালিয়ে রাখা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই, বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের শিডিউল করে দিতে বলা হয়েছে।