বইয়ের যত্ন নেবেন যেভাবে
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার বিকেল ০৫:২৭, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’ তবে বইয়ের ঠিকঠাক সংরক্ষণ আর যত্ন না করলে পছন্দের বইগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে বই কিনে দেউলিয়া হওয়া তখন আর অসম্ভব হবে না। বই কিনে দেউলিয়া হতে না চাইলে বইয়ের যত্ন নিতে হবে বাড়ির বারান্দায় লাগানো গাছটির মত, প্রিয় পোষা প্রাণীটির মত।
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবকিছুই এখন ইন্টারনেট কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সকাল হলেই সাইকেলে বেল বাজিয়ে এখন আর সব বাড়িতে সংবাদপত্র দিয়ে যায় না বিক্রেতা, খবর শুনতে এখন আর টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। জনে জনে মোবাইল ফোন হাতে আসায় সবই এখন সোশাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। কিন্তু অন্যান্য অভ্যাসের মত বাঙ্গালির বই পড়ার অভ্যাসটি এখনো ফোনের পিডিএফে পরিবর্তিত হয়ে যায়নি। এখনো বইপ্রেমীরা নতুন বইয়ের গন্ধে বিমোহিত হয়, কাগজের ঘষঘষে শব্দটা না শুনলে যেন উপন্যাসের চরিত্ররা কথা বলে না। তাই তো প্রিয় বইয়ের যত্ন নিতে দিতে হবে কিছুটা সময় আর মনোযোগ। না হলে বইয়ের ভেতরের গল্পগুলো কথা বলবে কেমন করে?
বই রাখুন বইয়ের তাকে
যারা বই পড়তে ভালবাসেন, তারা বই সংগ্রহ করতেও ভালবাসেন। বইয়ের বিশাল সংগ্রহ যাতে পোকায় না কাটে কিংবা চুরি হয়ে না যায় সেজন্য বই রাখার আলাদা শেলফ বানিয়ে নিলে ভালো হয়। সবচেয়ে ভালো হয়, বইয়ের তাকে যদি কাচের দরজা দেওয়া হয়। এতে করে বাইরে থেকে বইগুলো দেখা যাবে এবং ধুলাবালি ঢুকতে পারবে না। তালা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এতে করে যে কেউ চাইলেই বই নিয়ে নিতে পারবে না, শিশুদের হাত থেকেও নিরাপদ থাকবে।
ধরণ অনুযায়ী বই গোছান
বই বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। মোটা দাগে বইকে দুই ভাগে ফেলা যায় যেমন- ফিকশন, নন ফিকশন। ফিকশনের মাঝেও আছে আলাদা আলাদা ধরন। বুকশেলফে বই গোছানোর সময় উপন্যাসের বইগুলো আলাদা রাখুন, গল্পের বই আলাদা তাকে, প্রবন্ধ বইগুলো অন্য তাকে। আবার লেখকের ভিত্তিতেও বই গোছাতে পারেন।
বইকে রাখুন পোকামাকড় হতে দূরে
বইয়ের সঙ্গে যেন পোকামাকড়ের আজন্ম শত্রুতা। সুযোগ পেলেই বইয়ের পাতাগুলো কাটতে বসাই তাদের কাজ। কেউ কেউ আবার বইয়ের পাতায় বাচ্চা ফুটিয়ে ফেলে। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বইকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিটি তাকে ন্যাপথলিন বল রেখে দিতে হবে এবং চিকন নিমপাতার ডাল বইয়ের পৃষ্ঠার মাঝে ঢুকিয়ে রাখতে হবে। এ ছাড়া শুকনো ল্যাভেন্ডারের ফুল দিয়ে ছোট ছোট পুটলি বানিয়ে শেলফের কোণায় রেখে দিতে পারেন। এটা বইকে পোকা কাটা থেকে দূরে রাখবে।
ধুলোবালি ঝেড়ে ফেলুন
বুকশেলফে সুরক্ষিত থাকলেও কদিন পর পর বইয়ের তাকে ধুলো জমে যায়, অনেকসময় ঘুণেও ধরে। এক্ষেত্রে বইয়ের ধুলো পরিষ্কার করতে হবে কিছুদিন পর পর। এতে বুকশেলফ আর বই দুটোই ভালো থাকবে। কাজটি নিয়মিত করতে হবে এমন কোনো কথা নেই কিংবা সব বই একসঙ্গে পরিষ্কার করারও প্রয়োজন নেই। ধীরে ধীরে মাসে দুইবার ধুলো ঝাড়লেই চলবে। মনে রাখতে হবে, কেবল পরিচ্ছন্ন করলে চলবে না, সঙ্গে থাকবে যত্নও।
রোদ রাখতে হবে বই
কিছুদিন পরপর আলমারিতে পাট করে রাখা প্রিয় শাড়িগুলো আমরা অনেকেই রোদে শুকাতে দেই। রোদে মেলে দিই মায়ের হাতের টকমিষ্টি আচারের বৈয়ামও। ভালবাসা মিশে থাকা প্রতিটি জিনিসই যেন রোদের তাপে আরও প্রাণ পায়। তাই তো মাঝে মাঝে প্রিয় বইগুলোকে ভালো রাখতে রোদ পোহাতে দিতে হবে। এতে করে বইয়ের স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটা কেটে যাবে। গাছ যেমন সূর্যের আলো ছাড়া বাঁচে না তেমনি সূর্যের আলোতে বইও বেশিদিন বাঁচতে পারে।
বুকমার্ক ব্যবহার
যে জায়গাটায় বই পড়া থামাতে হয়েছে, সেখানে অনেকেই পৃষ্ঠা ভাঁজ করে চিহ্নিত করে রাখেন। এতে বইয়ের ক্ষতি হয়। বইয়ের পৃষ্ঠা চিহ্নিত করতে বুকমার্ক ব্যবহার করুন। এটি হাতেও কাগজ দিয়ে তৈরি করা যায়, বাজারেও আজকাল নান্দনিক বুকমার্ক কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রোটেকটিভ কভার ব্যবহার
বইয়ে ব্যবহারের জন্য প্রোটেকটিভ কভার কিনতে পাওয়া যায়, বই পড়ার সময় এটি লাগিয়ে নিলে বইয়ের ক্ষতি হয় না। সাধারণত আমরা বিভিন্ন আরামদায়ক উপায়ে শুয়ে-বসে বই পড়তে চাই, বিশেষত গল্পের বই। এতে নিজের আরাম হলেও বইয়ের মলাটের বারবার নাড়াচাড়ার কারণে এটি নরম হয়ে যেতে পারে। বই বেশি দিন ভালো রাখতে চাইলে প্রোটেকটিভ কভার লাগিয়ে রাখতে পারেন। তাতে ধুলা-ময়লাও ভেতরে ঢুকতে পারবে না।
খাবারদাবার থেকে দূরে রাখুন
আজকাল মানুষ বই পড়ার চেয়ে ‘বই পড়ছে’ এমন বার্তা দিতেই বেশি ভালবাসে। তাই তো ‘খোলা বই আর পাশে রাখা চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠা চা’ এর ছবি ফেসবুক জুড়ে ঘুরতে দেখা যায়। কিন্তু বইয়ের পাশে খাবারের কিছু রাখা ঠিক নয়। এতে খাবার লেগে বইয়ে দাগ হয়ে যেতে পারে। এমনকি ভেজা হাতে বই স্পর্শ করাও উচিত নয় এতে বইয়ের অক্ষরগুলো ছড়িয়ে যেতে পারে কিংবা পৃষ্ঠা কুঁচকে যেতে পারে।