প্রতিবিপ্লব আওয়ামী লীগকে আরও ডুবাতে পারে, মহাসংকটে পড়তে পারে হাসিনা
মেঘনা নিউজ ডেস্ক মঙ্গলবার সন্ধ্যা ০৬:০৫, ১৩ আগস্ট, ২০২৪
আওয়ামী লীগের এই মুহুর্তে খুব কঠিন ও বিপর্যস্ত অবস্থা। দেশ ছেড়ে লেজ গুটিয়ে স্বৈরাচার তকমা নিয়ে পালিয়েন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৩৬ জুলাই (৫ আগষ্ট) ক্ষমতা ছেড়ে আশ্রয় নেন ভারতের নয়াদিল্লিতে।
এতে আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী হতভম্ব হয়ে বিপদে পড়েছেন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বাঘা-বাঘা মন্ত্রী এমপি নেতাকর্মী পালিয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ নেতাকর্মীর মনোবল ভেঙে গেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে একই কায়দায় নব্বই দশকে স্বৈরাচার খেতাব নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই দেশের ইতিহাসে তিনি আর দ্বিতীয়বার ক্ষমতার স্বাদ পাননি। তবে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সেই পথে দীর্ঘকাল অপেক্ষায় থাকতে হবে ক্ষমতার হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার জন্য ;
আর তা না হলেও অন্তত এক যুগ অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি ঐশ্বরিকভাবে অলৌকিক কিছু ঘটে সে হিসেবেটা ভিন্ন।
অতীতে বিএনপির অনেক ভুল ছিল, সেই ভুল বা রাজনৈতিক গাইডলাইন থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষা নেয় নি, নিলে এই ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের তোপের মুখে শেষ হতে হতো না আওয়ামী লীগকে। এখন যাবার বেলায় আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা একটি গাইডলাইন রেখে গেছেন। এখানে লেখা আছে কোনো শাসকগোষ্ঠী কী কী করলে ক্ষমতাচ্যুত হতে হবে।
বিপ্লব : রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিরুদ্ধে লাখোকোটি পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যখন পাখনা মেলে তখন লাখো কোটি জনতা রাস্তায় নেমে স্বেচ্ছাচারীকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করাই হলো বিপ্লব। আর এরসাথে যারা জড়িত তারা বিপ্লবী।
প্রতিবিপ্লব: বিপ্লব ঘটে জনরোষ থেকে। জনরোষে যখন বিপ্লব ঘটে তখন ক্ষমতাচ্যুত দলের পিঠের পেছনে আর দেয়াল থাকে না। এর মানে এখন আওয়ামী লীগের হেলান দিয়ে দাঁড়ানোরও সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার দিল্লিতে অবস্থান একটু ভাবার বিষয়। তিনি যদি বিকল্প কিছু করার চেষ্টা করেন এই মুহূর্তে তার দলীয় নেতাকর্মীরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তার প্রতিবিপ্লবের চিন্তা মাথায় আসা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। এমনিতেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঠেকাতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ছিল শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার টার্মকার্ড। নিজের সিদ্ধান্তে নিজেই বোমেরাং।
আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে কিছু করতে চাইলে, তাদের ধৈর্য ধরার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দিয়ে শেষ টার্মকার্ডটি ব্যবহার করে কাজে লাগাতে চাইছে আওয়ামী লীগে। এতে কিছু অসাধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যবহার হচ্ছে। ভারতের মিডিয়া দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইমেজ নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে। এতেও আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের তাবেদারগোষ্ঠী ভারতের কিছু দালাল মিডিয়া সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
দ্য ইকোনমিস্ট রিপোর্টের বরাতে শেখ হাসিনা বলেছেন তাকে আমেরিকা ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। এ কথার সঙ্গে আমি একমত। কারণ তিনি আমেরিকাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের মাধ্যমে দম্ভ করে কথা বলতেন তার প্রতিশোধ আমেরিকা দেরিতে হলেও ঠিকই নিয়েছেন। আর আমেরিকা সময় নিয়েই খেলে। শেখ হাসিনার কথায় যদি বলি, আপনার ক্ষমতা আমেরিকা যদি নিয়ে থাকে তাহলে এতো সহজে এই প্রভাবশালী পরাশক্তির দেশ আপনাকে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসাবে না। তাই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রতি আমার প্রেসক্রিপশন ভারতের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে হত্যার খেলা বন্ধ করুন। আপনাদের আগামীর ভালো চাইলে সকল অতীতের সকল গ্লানি মুছে ফেলে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ও ছাত্র-জনতার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করুন।
আপাতত শেখ হাসিনার দেশে না আসাটাই উত্তম। আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে সিএমএম কোর্টে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তাই সহসাই দেশে আসলে গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হতে হবে বিচারের মুখোমুখি।
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার
কবি ও সাংবাদিক