মেঘনা নিউজ ডেস্ক মঙ্গলবার সকাল ০৮:৫৫, ১১ জুন, ২০২৪
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার, দাউদকান্দি : পুলিশ। লাতিন ভাষার শব্দ। polita থেকে police শব্দের উদ্ভব। এর সামগ্রিকভাবে অর্থ দাঁড়ায় শহরের নিয়ন্ত্রণ। সোঝা কথায় দেশের আইন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে। পুলিশ বাহিনীর ওপর দেশের নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করার দায়িত্ব দিয়ে থাকে রাষ্ট্র। বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্রের তৃতীয় স্তম্ভ এই পুলিশ।
পুলিশ ছাড়া রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা অবকাঠামো একদম অস্তিত্বহীন।
পুলিশ কর্তৃক গুলি করে পুলিশ খুনের ঘটনা একটা নির্মম বার্তা দেয় জাতির জন্য। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার(৮ জুন) দিবাগত রাত ১২ টার দিকে। হয়তো সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল ; কোনো কিছু বুঝতে পারার আগেই রাজধানীর ডিপ্লোমেটিক জোন বারিধারার ফিলিস্তিন অ্যাম্বাসির সামনে পুলিশ সদস্য মনিরুলকে প্রায় উপর্যুপরি ৩৮ রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পাশে থাকা আরেক পুলিশ সদস্য কাউসার।
এর আগে শুক্রবার( ৭ জুন) খুলনার কয়রায় মোটরসাইকেল আটকেের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার মারামারি ঘটনা ঘটছে। উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডার জেরে একপর্যায়ে উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নিরঞ্জন রায় কয়রা সদরে খাবারের দোকানে এসআই সরদার মো. মাসুম বিল্লাহর মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ঐ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে পুলিশ সদস্য মনিরুলকে খুনের ঘটনা টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। যদিও এই পুলিশ সদস্যকে সরাসরি হত্যায় জড়িত কাউসারকে তার পরিবার মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রকাশ করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে পুলিশ সদস্য কাউসার মানসিক চিকিৎসার জন্য একাধিক বার পাবনার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন।
পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাত-দিন নির্ঘুম থেকে জনগণের পরম বন্ধু হয়ে দুশমন দমনে গুরু দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অতীত ইতিহাস খুব গৌরবের। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম।
পুলিশ আমাদের নাগরিকদের সেবাদাতা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে, কোনো হামলা-মামলা, খুনখারাবির মতো ঘটনা ঘটলে আমরা প্রথমে পুলিশের দ্বারস্থ হই। নিকটস্থ থানায় গিয়ে নাগরিক হিসেবে সহায়তা চাই। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আমাদের সেবা প্রদান করেন।
পুলিশই একমাত্র জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে আইনি সহায়তা দিতে পারি; সে হিসেবে পুলিশ ও জনগণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশতে পারে।
বর্তমান পুলিশের বেশিরভাগ সদস্যই অত্যন্ত দক্ষ, কর্মঠ, নীতিগতভাবে মানবিক। তবুও কিছু পুলিস সদস্য বেপরোয়া। আইনের শাসন নিশ্চিতে তারা উদাসীন। হরহামেশাই অনেক পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশের ফোর্স বিভিন্ন ক্রিমিনাল অপরাধে জড়িয়েও যাচ্ছেন। তা পরিত্রাণে অভিযোগের ভিত্তিতে ডিপার্টমেন্টাল শাস্তিও হচ্ছে।
বর্তমান পুলিশের একটা আদর্শিক স্লোগান আছে, ‘ পুলিশই জনতা; জনতাই পুলিশ ‘। এই প্রতিপাদ্য বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ নিজস্ব বাহিনীর ভাবমূর্তি ইতিবাচক রাখতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আলোর পাশাপাশি আঁধার থাকে। এই পোশাকটি অবশ্যই পবিত্র। দেশ মাতৃকার টানে পুলিশ জীবনবাজি রেখে কাজ করছে।
আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি, পুলিশ তখন জেগে আছে।
এটাই বাংলাদেশ পুলিশের আলো। একজনের দোষ দিয়ে পুরো বাহিনীকে বিচার করলে চলবে না।
দোষ যার, দায় তার। বাংলাদেশ পুলিশে এখনও অনেক গৌরব করার মত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য আছে।
পুলিশের কাজে স্বাধীনতা দিতে হবে, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হয় সেদিকে পুলিশ খেয়াল রাখতে হবে। গোটা দুনিয়ার কথা না হয় নাই বললাম। আমার জানামতে, আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতের পুলিশ বাহিনীকে কখনও রাজনৈতিক নেতা কোনো বিষয়ে প্রভাবিত করেন না।
প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী যদি কাজের স্বাধীনতা পায়, কেউ প্রভাবিত না করে তাহলে এর ফলাফল ভালো হবে।
এই বিষয়ে আইনপ্রণেতাদের যুগোপযোগী ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।
পুলিশও মানুষই। আমরা যেমন বিভিন্ন বিষয়ায়দি নিয়ে চাপে থাকি, পুলিশও বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে খুব চাপে থাকে। তাই পুলিশকে নির্বিঘ্নে চাপমুক্ত ভারমুক্ত করে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দিতে তাদের পরিবারের পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব থাকা দরকার।
দ্বিতীয় কথা হলো— এক সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে মনমালিন্যোর ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক তাই বলে সেটা বড় কোনো অঘটনের সুযোগ তৈরি করতে দেওয়া যাবে না। এসব বিষয়াদি উর্ধ্বতন কর্মকতারা কাউন্সিলিংয়ের মধ্যে সমাধানের পথ বের করতে হবে। সেই সঙ্গে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ে গুরুত্বসহকারে মনিটরিং করা দরকার। সর্বোপরি পুলিশকে পেশাদারিত্বের জায়গায় আরও সংযত ও যত্নবান হতে হবে।
সবশেষে দরকার পুলিশ জনগণের শত্রু হয়ে নয়, পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করুক।
আস্থা তৈরি করার জন্য পুলিশ ও জনগণের মাঝে ভাতৃত্ববোধ সম্পর্ক তৈরি হোক এই প্রত্যাশা।