নাচোলে ইউএনও ও এসিল্যান্ডের লুটপাটের মামলায় ওসিকে তদন্তের নির্দেশ
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ মঙ্গলবার রাত ১০:৫২, ২৪ মে, ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ইউএনও শরিফ আহম্মেদ এবং এসিল্যান্ড মিথিলা দাসের লুটপাটের ঘটনার মামলায় নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারিক আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
মঙ্গলবার দুপুরে আমলী আদালত নাচোলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবীর এ আদেশ প্রদাণ করেন। আদেশে বলা হয়েছে, বাদীর উচ্ছেদকৃত বাড়ির জমি নিয়ে নাচোল সহকারী জজ আদালতে ২৯/২২ (অ:প্র:) ঘোষণামূলক ডিক্রীর দাবিতে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার কলামে বিবাদী জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এসিল্যান্ড অন্তর্ভূক্ত আছেন। মামলাটি বিচারাধীন।
আর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ১ ও ২নং অভিযুক্তদ্বয় সরকারি কর্মকর্তা। সিআরপিসি ১৯৭ ধারা অনুসারে কোন সরকারী কর্মচারী বা কর্মকর্তা তাহার দায়িত্ব পালন কালে অথবা দায়িত্ব পালনে আসীন বলিয়া বিবেচিত হওয়া কালে কোন অপরাধ সংগঠিত করিয়াছেন বলিয়া অভিযুক্ত হইয়া থাকেন, তখন সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোন আদালত সেই রূপ অপরাধ আমলে আনবেন না।
কিন্তু অত্র নালিশী দরখাস্ত অনুসারে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডসহ অন্যান্য অভিযুক্তকারীরা উক্ত তারিখে যে কার্য সম্পাদন করিয়াছেন বা তাদের দ্বারা যে কার্য সম্পাদন হইয়াছে তা সরকারি কাজের অংশ কিনা সেটা প্রমান সাপেক্ষ।
আবার ৩-৫ ও নালিশী দরখাস্তের গর্ভে ২০/২২ জন অজ্ঞাতনামা আসামীর কথা বলা হয়েছে, যাদের নাম ও ঠিকানা স্পষ্ট না। ৩-৫ অজ্ঞাতনামা আসামীরা কেন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বা তাদের পরিচয় কি, কেন তাদের সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল বা তারা সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কিনা বা সরকারি দায়িত্ব পালনে কেন ইউএনও-এসিল্যান্ড অভিযুক্তদ্বয় তাদের সাথে নিয়েছিলেন তা তদন্ত ছাড়া সঠিকভাবে নিরুপন করা সম্ভব না।
আর সিভিল আদালতে নালিশী জমি নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আদালতের কোন আদেশ ছাড়াই কেন উচ্ছেদের প্রয়োজন হলো সেটাও আদালতের বোধগম্য নয়।
এমতাবস্থায় প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাই আদালত নাচোল থানার ওসিকে সরেজমিন তদন্ত করে আগামি ১৫ জুন বুধবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ মে মঙ্গলবার নাচোল উপজেলার কসবা উজিরপুর হাটে সরকারি জমিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেন নাচোল উপজেলা প্রশাসন। এ সময় ৩০-৪০টি দোকানঘর উচ্ছেদ করা হয়। হাটের পাশেই দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে থাকা আরএস ১৬৬ নম্বর দাগে মামলার বাদী আব্দুর রশিদের বাড়িতেও অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন।
অথচ জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এমনকি আব্দুর রশিদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে বাড়ি থাকলেও ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের নির্দেশে দুটি পাকা ঘর ভেঙে ফেলা হয়। অনেক কাকুতি-মিনতি করেও কোন সুযোগ বা কথা কর্ণপাত করেননি অভিযানে অংশগ্রহণকারী কেউই।
বাড়ি ভাঙার সময় ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে ২০-২২ জন লোক আব্দুর রশিদের বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় ঘরে ঢুকে মামলার আসামী দূরুল, নূরুল ও জেন্টু বাক্সে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এমনকি ঘরের খাট, সোফাসেট, কাঁসার থালি লুট করে নিয়ে যায় তারা।
আব্দুর রশিদের দাবি লুটপাট করা লোকজন ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের বাহিনী। এই কাজে তাদের পুরোপুরি সমর্থন ছিল। দুটি ঘরে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা ছাড়াও আরও অন্তত ৬৩ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট করেছে ওই দস্যুবাহিনী। আর ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের নির্দেশনায় ও উপস্থিতিতে এমন জঘণ্য কর্মকান্ড করা হয়েছে বলে দাবী করেন আব্দুর রশিদ।
আর তাই বিচার পেতে আব্দুর রশিদ গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার আদালতে নাচোল ইউএনও শরিফ আহম্মেদ, এসিল্যান্ড মিথিলা দাস, কসবা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী লতিবের ছেলে মো. দূরুল ও মো. নূরুলসহ একই এলাকার মৃত হেলালের ছেলে মো. জেন্টুর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। (যাহার মামলা নং-সি আর ৮৬/২২ নাচোল)।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান (২) জানান, ১৯ মে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে আদালত মামলাটি গ্রহণ করেন। আর গত রোববার ২২ মে আদেশের দিন ধার্য থাকলে আদালত মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হুমায়ন কবীর মামলাটি তদন্তের জন্য নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)কে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।