জমি দখলের পাঁয়তারা, প্রতিকার চেয়ে মতিলাল সরকারের সংবাদ সম্মেলন
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ শুক্রবার রাত ১১:১২, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভায় পুরোহিত পাড়ায় প্রতিবেশী কর্তৃক জোরপূর্বক জমি দখলের পাঁয়তারার প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসার মতিলাল সরকার। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে স্থানীয় অগ্রদূত নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তিনি ১৯৮৫ সনে গৌরীপুর মৌজার খতিয়ান ৪১৫ জে এল নং ২৫, দাগ নং ১২৫৫ শ্রেণি কান্দা খাতে সাড়ে ৩শতাংশ ও দাগ নং ১২৫৭ শ্রেণি পুকুর খাতে ২শতাংশ একুনে মোট সাড়ে ৫শতাংশ ভূমি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত রঞ্জন উকিল এর নিকট থেকে তৎকালীন সময়ে ক্রয়সূত্রে মালিকানাপ্রাপ্ত হয়ে ভোগ দখল করে আসছেন। যা এসএ রেকর্ডে ১৩৪৬নং খতিয়ানে মতিলাল সরকার দাগ নং ১২৫৫ এর হাল দাগ ২০১৫ জমির পরিমাণ ৩.৩১শতাংশ ও ১২৫৭ দাগের হাল দাগ ২০২৪ জমির পরিমাণ ২শতাংশ ভূমি রেকর্ডীয় মালিক বটে। ২০১৫ দাগের আমার বসতভিটা তার সম্মুখভাগে ২০২২ দাগে সরকারি রাস্তা, তৎসংলগ্ন ২০২৪ দাগের পুকুরে অংশসহ শান্তিপূর্ণ ও আপত্তিহীনভাবে ভোগদখল করে আসছেন তিনি।
তিনি বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা অজিত রঞ্জন উকিলের মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশানগন আমার শান্তিপূর্ণ বসবাসে বিঘ্ন সৃষ্টি করে জমি জোরপূর্বক দখল ও বিক্রির পায়তারা করিতেছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমি আইনের প্রতিশ্রদ্ধাশীল হয়ে গৌরীপুর থানায় ১৮/০৬/২০২০ তারিখে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করি। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন উভয়পক্ষের মাঝে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দু’পক্ষকেই জমির দালিলিক কাগজপত্রসহ থানায় তলব করেন। উভয়পক্ষের সম্মতিতে ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিস্পত্তি করার জন্য থানায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এ বিষয়ে অগ্রদূত নিকেতন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে সালিশ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ০৩/০৭/২০২০ তারিখে সালিশ দরবার অনুষ্ঠিত হয়। সেই সালিশে আমি ও আমার বিবাদীপক্ষের বাবু পুলক রঞ্জন উকিল, বাবু অলক রঞ্জন উকিল, বাবু সুপক রঞ্জন উকিল, সর্ব পিতা- প্রয়াত অজিত রঞ্জন উকিল, সাং পুরোহিতপাড়া, থানা- গৌরীপুর, জেলা- ময়মনসিংহ উপস্থিত ছিলেন। সালিশে গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান, গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহাম্মেদ, ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আলী আহাম্মদ খান পাঠান সেলভী, সাংবাদিক ম. নূরুল ইসলাম, বেগ ফারুক আহাম্মেদসহ স্থানীয় বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই সালিশ দরবারে উপস্থিত ছিলেন। এই সালিশে সিদ্ধান্ত হয় যে, বিরোধপূর্ণ ভূমি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষই সালিশী ভূমিতে কোন কাজ করতে পারবে না। উক্ত সালিশের পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১০জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এ জমি সংক্রান্ত ঘটনা নিষ্পত্তির জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
আমি ও আমার সন্তানরা এ সিদ্ধান্ত মেনে সামাজিক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু বিবাদীপক্ষ ইতিপূর্বে একাধিকবার দখলের পায়তারা চালায়। গত ২০ ডিসেম্বর বিবাদীপক্ষ এ জমি জোরপূর্বক দখলের অপচেষ্টায় কাজের লোক নিয়া অবৈধভাবে টিনের বেড়া দেয়ার পায়তারা চালায়। আমি বাধা দিতে গেলে অলক রঞ্জন উকিল, তার ভাই ও তাদের আত্মীয়-স্বজন আমার উপর আক্রমণ করে। অবৈধভাবে লাগানো টিনের বেড়া আমি ও আমার সন্তান কাজল কুমার সরকার সরাতে গেলে তারা হত্যাসহ নানা হুমকি প্রদর্শন করে। অথচ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সত্য চাপা দিয়ে অবৈধ বেড়া বাধাঁর ছবিকে ‘গৌরীপুর বীরমুক্তিযোদ্ধার স্থাপনায় হামলা ভাংচুর’ আখ্যায়িত করে নিউজ প্রকাশ করে। বর্তমানে তাদের লাগানো টিনের বেড়াটি বিরোধপূর্ণ জমিতে লাগানো আছে। যা তদন্তে বেড়িয়ে আসবে।
গৌরীপুরের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার পরেও আমাদের পরমবৈষ্ণব বাবু অলক রঞ্জন উকিল যে আক্রমণ ও অশালীন আচরণ করেছেন, তা দেখে আমি বিষ্মিত, হতবাক হয়েছি। যিনি ধর্মের লেবাশ পড়ে উনার বাবার সময়ে আমাদের বুঝিয়ে দেয়া সম্পত্তি গ্রাস করার অশুভ পায়তারায় লিপ্ত থাকার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও আমি হতাশ হয়েছি।
তিনি বলেন, আমার সন্তান সজল সরকার পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত আছে, সে কখনও এ ভূমি নিয়ে ঝগড়াবিবাদ করতে আসেনি, অথচ তার বিরুদ্ধেও মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রত্যেকেই তার ক্রয়কৃত জমিটুকু পাওয়ার অধিকার রাখে অথচ আমি ক্রয় করে ভোগ দখলে থাকা জমিতে এখন থাকতে পারছি না। পরমবৈষ্ণব বাবু অলক রঞ্জন উকিলের বাবা বাবু অজিত রঞ্জন উকিল জীবদশায় এ জমি সংক্রান্তে কোন বিরোধ ছিলো না।
এমন পরিস্থিতিতে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন আতঙ্কে দিনযাপন করছি। অথচ আমি সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র অফিসার হিসাবে সুদীর্ঘকাল সুনামের সাথে চাকুরী করে অবসর সময়টুকু সুখেশান্তিতে বসবাস করার জন্য আবাসন তৈরি করি। আজ সেখানেই আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ নয়, সামাজিক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশ উপেক্ষা করে জোরপূর্বকভাবে দখলের পায়তারা চালিয়ে আসছে। আমি এর প্রতিকার চাই।