চাঁপাইনবাবগঞ্জে নির্বাচনের আগের রাতে ছুরিকাঘাতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ মঙ্গলবার রাত ০১:৩৪, ৩০ নভেম্বর, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের আগের রাতে ছুরিকাঘাতে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মো. মোখলেসুর রহমানের নির্বাচনী ক্যাম্প বটতলাহাট এলাকার জোসনারা ফাউন্ডেশন শিশু পার্কের সামনেই সোমবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর এ ঘটনায় আরও দুই যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিহত যুবক পৌর এলাকার নামোশংকরবাটি মাউড়িপাড়া এলাকার হযরত আলীর ছেলে মো.আজিম (২১)। আর আহতরা হলেন- পৌর এলাকার নতুনহাট মন্ডলপাড়া এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে আব্দুল আলিম (১৬) ও বড়িপাড়া মহল্লার আব্দুস সাত্তারের ছেলে ইমন (১৮)।
নিহতের স্বজন ও আহতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জোসনারা ফাউন্ডেশন শিশু পার্কের সামনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আজিমকে কে বা কারা ছুরিকাঘাত করে। সংঘর্ষে আব্দুল আলিম ও ইমনকেও রড-ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। ঘটনার পর তাদেরকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে আজিমের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার আসিফ রহমান বলেন, হাসপাতালে নেয়ার পূর্বেই আজিমের মৃত্যু হয়েছে। তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং এর কারনেই তার মৃত্যু হয়েছে। আর আহতদের একজনকে কাঁধে ও পিঠে ছুরি ও শক্ত বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত নতুনহাট মন্ডলপাড়া এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে আব্দুল আলিম নামোশংকরবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানায়, এশার নামাজের পরে ঘটনাটি ঘটে। পার্ক থেকে বের হয়ে বাড়ি যাবার পথে দেখতে পায় দুই গ্রুপের মারামারি চলছে। ইট-পাটকেল ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কে বা কারা আমার উপর হামলা চালায়। এতে আমার হাত ভেঙ্গে গেছে। আহত আব্দুল আলিম নিজেকে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী শামসুলের সমর্থক বলে দাবি করে।
এদিকে নিহতের ফুফাতো ভাই রুবেল বলেন, আমার ফুফু ফোন করে জানান, কে বা কারা আজিমকে ছুরি মেরেছে। হাসপাতালে এসে দেখি সে মারা গেছে। সে নৌকা প্রতিকের মোখলেসুর রহমানের সমর্থক এবং নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করে এসেছে।
এসব বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান পৌর নির্বাচনে এর কোন সম্পর্ক নাই উল্লেখ করে গভীর রাত সাড়ে ১২টায় জানান, মোবাইলফোন আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় এক যুবকের মৃত্যু হয়। এলাকার আশেপাশে বিভিন্ন পক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ৩০ নভেম্বও মঙ্গলবার পৌর নির্বাচনের সাথে এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। আর তাই সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) অনুষ্ঠেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ৪ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মো. মোখলেসুর রহমান, আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবাইলফোন প্রতীকের মো. সামিউল হক লিটন, বিএনপি সমর্থিত নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.নজরুল ইসলাম এবং জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক শিবির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল।
এছাড়াও ১৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় এবার ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১ হাজার ৪৩২ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ৭৪ হাজার ৬৫ জন।
তফসিল অনুযায়ী সপ্তম ধাপে পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল ৯ অক্টোবর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১১ অক্টোবর, বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১২ থেকে ১৪ অক্টোবর, আপলি নিষ্পত্তি ১৬ অক্টোবর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ১৭ অক্টোবর এবং প্রতীক বরাদ্দ হয় ১৮ অক্টোবর।