ঢাকা (সকাল ৯:২৭) মঙ্গলবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News গৌরীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অটোরিকশা চালক নিহত Meghna News ফতুল্লায় গ্রেফতার হওয়া স্বপনের মুক্তির দাবিতে গৌরীপুরে মানববন্ধন Meghna News ৮১ বছর পর কুমিল্লা থেকে নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ২৪ সেনার দেহাবশেষ Meghna News সিলেট নগরীতে ভোর বেলায় হঠাৎ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুর ঝটিকা মিছিল Meghna News গৌরীপুর মহিলা কলেজে নবীনবরণ ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত Meghna News সিলেটে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের মাঝে নাভিশ্বাস Meghna News সাইফুল প্রধানের হাতের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে ঢাকারগাঁও গ্রামের সমাজব্যবস্থা ও উন্নয়নচিত্র Meghna News বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাকা প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিকাশ কর্মীর বাড়ি ফেরা হলোনা Meghna News হাফেজ-এ- কোরআনদের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায়: আব্দুস সাত্তার

সীমাহীন সমস্যার সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের লক্ষলক্ষ মানুষ

মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ Clock শনিবার দুপুর ০১:৪১, ২৪ অক্টোবর, ২০২০

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত-তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা,মধ্যনগর ও দিরাই-শাল্লা উপজেলা। আর এই উপজেলা গুলোতে বসবাস করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সাথে লড়াই করছে। কারণ বছরের প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস পানি বন্ধি হয়ে থাকতে হয় হাওর বাসীকে। এসময় ঝড় ও হাওরের বিশাল আকৃতির ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে যায় ঘরবাড়ি ও গাছপালা। দুষ্প্রাপ বাঁশ,খড়,মাটি,কচুরিপানা,ঘাস দিয়েও ঘরবাড়ি রক্ষা করা সম্ভব হয়না। তখন গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপদে। তাই বাধ্য হয়ে গবাদি পশু-পাখি পানির দরে বিক্রি করতে হয়। এসময় আরো দেখা দেয় খাবার পানির তীব্র সংকট। এছাড়া সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ কাঁচা ও পাকাসহ বেশির ভাগ সড়ক থাকে পানির নিচে। তখন কাঠের তৈরি ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে ঘটে প্রাণহানীর ঘটনা। মহামারী করোনা ভাইরাস যখন সারা বিশ্ববাসীকে গ্রাস করে নিচ্ছে, তখন মরার উপর খাড়া ঘা হয়ে হাজির হয় বন্যা। তারও আবার ১বার ২বার নয়। এক সপ্তাহ ও ১৫ দিনের ব্যবধানে ২ মাসের ভিতরে পরপর ৫ বার বন্যা হয় চলতি বছরে। তাতে এই হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। বন্যার সময় সরকারের দায়িত্বে থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরাঞ্চলের দূর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠান। কিন্তু সেই ত্রাণ সঠিক ভাবে বিতরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়-সুনামগঞ্জ জেলার অবহেলিত তাহিরপুর,বিশ্বভরপুর,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা-মধ্যনগর ও দিরাই-শাল্লা উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সময় মতো হাওরের বেড়ি বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে পাহাড়ী ঢলের পানিতে প্রতি বছরই ডুবে যায় হাজার হাজার একর ফসলী জমি। যার ফলে বেশির ভাগ কৃষকই নিঃস্ব হয়ে যায়। পরে জীবন বাঁচানোর তাগিদে কোন উপায় না পেয়ে হাওরের পানিতে মাছ ধরতে বাধ্য হয় কৃষকরা। কিন্তু হাওরের পানিতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অবাধে কারেন্ট জাল ব্যবহারের কারণে মাছের অস্তিত্ব ধ্বংসের পথে। তাই না খেয়ে অনেকেই দিন কাটায়। বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের চারদিকে অথৈ পানি থৈথৈ করছে। হাওরের মাঝে অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে দেখলে দীপের মত মনে হয়। ভাংগা-ছুরা পাকা সড়ক দিয়ে উপজেলা সদর থেকে জেলা শহরে কোন রকম যাতায়াত করা যাচ্ছে। কিন্তু উপজেলা সদরের সাথে বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। তাই ছোট-বড় ইঞ্জিনের নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছে হাওরের মানুষগুলো। হাওর এলাকা গুলোর প্রধান সমস্যা হচ্ছে অকাল বন্যা ও ফসল হানী। এছাড়াও রয়েছে বর্ষাকালের সমুদ্রাকৃতির বিশাল ঢেউ। আর বন্যা দেখা দিলে হাওর এলাকার মানুষের দূর্ভোগের কোন শেষ থাকেনা। এসময় তারা ঘরের ভিতর বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে বসবাস করে। আর পানির পরিমান বেশি বাড়লে কেউ কলার ভেলায় আবার অনেকেই নৌকার মাঝে আশ্রয় নেয়। তবে বন্যার সময় হাওর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলো পরিণত হয় অসহায় মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে। এসময় কোন মানুষ মারা গেলে তার মৃতদেহ দাফন-কাফন কিংবা সৎকারের ব্যবস্থা থাকেনা। দেখা দেয় গো-খাদ্য,জ্বালানী কাঠ ও শুকনো খাবারসহ বিশুদ্ধ খাবার পানি তীব্র সংকট দেখা। পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে হাওরের গ্রামগুলো বিদ্যুতায়িত হলেও বেশির ভাগ গ্রাম থাকে অন্ধকারে। কারণ সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়না। এসময় হাওরাঞ্চলে বেড়ে যায় চোর ডাকাতের উপদ্রুপ। নৌকা যোগে ডাকাতরা এসে বিছিন্ন গ্রাম গুলোতে হানা দেয়। এলাকার মানুষ সারারাত জেগে পাহাড়া দিয়েও রক্ষা করতে পারে না তাদের মূল্যবান সম্পদ। এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকা গুলো দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায়,শিক্ষার দিক দিয়ে রয়েছে অনেক পিছিয়ে। বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস দেখা দেওয়ার আগে থেকেই এই হাওরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোর দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের অবহেলার কারণে প্রতি বছরই ঝড়ে পড়ছে হাজার হাজার শিশু শিক্ষার্থী। কারণ শিক্ষা কর্মকর্তারা নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন ও তদারকি না করার কারণে শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে না যায় না। বেশি ভাগ শিক্ষকরা স্কুল রেখে রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানান কাজে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে নাম ছাড়াই প্রতিষ্টানে পরিণত হয়েছে হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ স্কুল। তাছাড়া হাওর এলাকা গুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সারা বছরই লেগে থাকে। বিশুদ্ধ খাবার পানি না পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে হাওর ও পুকুরের পানি পান করতে হয় হাওরবাসীকে। এছাড়া বেশির ভাগ মানুষ খোলা ল্যাট্টিন ব্যবহার করে। একারণে ডায়রিয়া,আমাশয় ও কলেরাসহ নানাবিদ পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয় তারা। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান ডাক্তার-নার্স ও ঔষধ না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে হাওরবাসী। এসব নানাবিধ সমস্যার সাথে লড়াই করে প্রতিনিয়ত বেঁচে আছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওর এলাকার লক্ষলক্ষ অসহায় মানুষ। কিন্তু তাদের সমাধান করার মতো কেউ নেই। এব্যাপারে তাহিরপুর জয়নাল আবেদীন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলী মর্তুজা বলেন-বর্তমান সরকার সারাদেশের উন্নয়নের জন্য যে ভূমিকা নিয়েছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে কৃষকদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ্য হতে হয়। তাছাড়া জেলা শহর ও উপজেলা সদরের রাস্তাঘাট ভাংগা চুরা। সেগুলো দ্রæত মেরামত করাসহ স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন করা জরুরী প্রয়োজন। জামালগঞ্জ উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক ও কৃষক তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ বলেন- হাওর বলতে আমরা বুঝি ধান ও বিভিন্ন প্রকার ফসল চাষাবাদের এলাকা। কিন্তু হাওরের বেরী বাঁধগুলো কখনোই সঠিক ভাবে নির্মাণ করা হয়না। তাছাড়া হাওর এলাকাগুলো প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেনা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তাররা এসে বেশিদিন থাকেনা। অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যায়। যার কারণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে সব সময় আমরা বঞ্চিত। এছাড়া জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ যাতায়তের প্রধান সড়কসহ বেশির ভাগ সড়কই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এসব সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও আজ পর্যন্ত তার সমাধান হয়নি। যার কারণে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাওরবাসীকে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন-হাওরের মাছ ও প্রাণীর উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ধানের ওপর নির্ভর করে হাওরবাসী জীবন চলবেনা। এছাড়া হাওর এলাকার ক্ষতিগ্রহ্য সড়কগুলোর তথ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোর সংস্কার করা হবে। আর অন্যান্য বিষয়ের ওপর তদারকি চলছে। একবারে তো আর সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

 

 




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT