সিলেটে এমসি কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত শুরু
মোঃইবাদুর রহমান জাকির,সিলেট মঙ্গলবার রাত ১০:১৮, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষনের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আজ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এমসি কলেজে পৌঁছে তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। গতকাল সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের এই কমিটি গঠন করা হয়।
এর আগে তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্তের কাজে ঢাকা থেকে সিলেটে আসছেন বলে মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছিলেন এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সালেহ আহমেদ। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা থেকে সোমবার রাতে জানানো হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা আজ (মঙ্গলবার) সিলেটে আসবেন তদন্ত করতে। কিন্তু কখন আসবেন তা জানানো হয়নি। তবে তদন্ত কমিটি যখনই আসবেন আমি উপস্থিত থাকব।’
পরে ওই তদন্ত কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটে এসে পৌঁছান এবং এমসি কলেজে গিয়ে নিজেদের তদন্ত কাজ শুরু করেন। জানা গেছে, এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন ঢাকা থেকে আসা তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ওই ঘটনা সম্পর্কে জানেন- এমন কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলবেন তারা। এর পাশাপাশি তারা ছাত্রাবাসে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে এমসি কলেজ বন্ধ থাকার মধ্যেও ছাত্রাবাস খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের থাকতে দেওয়া নিয়ে কলেজ প্রশাসন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই গৃহবধূকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসের সামনে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখে দুইজন। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ওসিসি’তে চিকিৎসা গ্রহণের পর গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে সেই রাতের ঘটনার জবানবন্দি দেন নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ। এ সময় তিনি ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালত গৃহবধূর জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে পরিবারের জিম্মায় দিয়ে দেন।চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিলেট রেঞ্জ পুলিশ ও র্যাব-৯। তাদের মধ্যে ছয়জনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও পাঁচ নম্বর আসামি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি রবিউল হাসান, এজাহারভুক্ত আসামি মাহবুবুর রহমান রনি, সন্দেহভাজন আসামি রাজন ও আইনুদ্দিন। আর গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া মাহফুজুর রহমান মাসুমকে সিলেটের শাহপরাণ (র) থানায় রাখা হয়েছে।