সন্দ্বীপ নৌ-রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে প্রতিবাদী র্যালি, পুলিশি বাধায় স্থগিত
তহিদুল ইসলাম রাসেল, চট্টগ্রাম শনিবার বিকেল ০৫:১১, ২৬ মার্চ, ২০২২
সন্দ্বীপ নৌ-রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে আয়োজিত মোটরসাইকেল র্যালি পুলিশি বাধায় স্থগিত করা হয়েছে। তবে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন ও থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে।
গতকাল ২৫ মার্চ শুক্রবার এই প্রতিবাদী র্যালির ডাক দেয় অনলাইনে সক্রিয় তরুণ সমাজ।
আয়োজকরা জানান, বিকাল তিনটায়ে উপজেলা প্রশাসন মাঠ থেকে এই র্যালি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর থেকে কয়েক প্লাটুন পুলিশ ওই মাঠে অবস্থান নেয়। এসময় র্যালিতে অংশগ্রহণ করতে আসা তরুণদের শতাধিক মোটরসাইকেলে আটক করে পুলিশ। পরে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ খানের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে র্যালির আয়োজকরা তাদের লিখিত বক্তব্য উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সম্রাট খীসার কাছে পেশ করেন।
রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল মাওলা কিশোরের নেতৃত্বে প্রদত্ত এই লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, সরকারের সবগুলো সংস্থার অগচোরে সম্প্রতি ইজারাদার স্পীড বোটের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। কোন ধরনের নিয়ম-নীতি না মেনে ইজারাদার তার খেয়ালখুশি মত ভাড়া আদায় করছে। যা প্রকারন্তরে এক প্রকার চাঁদাবাজি।
আন্দোলনকারী তাদের লিখিত বক্তেব্যে মোট আটটি অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করেছেন। অভিযোগগুলো হলো- দেশের সবগুলো ফেরীঘাটে ভাড়ার তালিকা সাইনবোর্ড আকারে প্রদর্শন করা হলেও কুমিরা-গুপ্তছড়াঘাটে তেমন কিছু কখনো দেয়া হয়নি।
স্পীড বোটে মালের ভাড়ার কোন নিয়ম নেই, কাউন্টারের লোকেরাই তাদের খেয়াল-খুশি মতো ভাড়া ঠিক করে।
দুই পাশের জেটিতে মাত্র ৩/৪মিনিটের ভ্যানের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২০/২৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। তাছাড়া যাত্রীদের সাথে মালপত্র থাকলে ইজারাদারের নিযোগকৃত ভ্যানচালক যা খুশি টাকা আদায় করে।
লেবাররা ইচ্ছা অনুযায়ী টাকা আদায় করার জন্য যাত্রীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে।
কখন বোট ছাড়বে আর কখন ছাড়বেনা পূর্ব থেকে সেই ঘোষণা দেয়া হয়না।
কুমিরা থেকে চট্টগ্রাম শহর পযন্ত যে কার সর্ভিস আছে তা থেকেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। একটি কারের প্রতিটি ট্রিপ থেকে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পযন্ত নিয়ে নেওয়া হয়। এখানে যাত্রীদের কাছ থেকে যে ভাড়া আদায় হয় তাও খেয়ালখুশি মত।
মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে আরো বেশি অরাজকতা চলছে। চাকতাই থেকে সন্দ্বীপ পর্যন্ত একটি ৫০ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া যেখানে ২৫-৩০ টাকা সেখানে দশভাগের একভাগ দূরত্বের কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটের ভাড়াও আদায় হয় ৩০ টাকা। অথচ এখানে বস্তাপ্রতি মাসুল ১০-১৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
কুমিরা খালে তারা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের বোট/ট্রলারকে মালামাল পরিবহণ করতে দেয়না। গুপ্তছড়া ঘাট থেকে একটি মহলের নির্ধারিত ট্রাক ছাড়া অন্য ট্রাক সহজে সিরিয়াল পায়না।
অভিযোগ গ্রহণ করে এই বিষয়ে শীঘ্রই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সম্রাট খীসা।
র্যালি আয়োজনে বাধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শনিবার স্বাধীনতা দিবস পালনের জন্য প্রশাসন ব্যস্ত রয়েছে। যার কারণে এই র্যালির অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে তাদের লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে র্যালির আয়োজকদের পক্ষ থেকে একই অভিযোগ দায়ের করা হয় সন্দ্বীপ থানায়।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল মাওলা কিশোর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম, হাসান আল নাহিয়ান ও মাইনউদ্দিন আকাশ ও মোহাম্মদ রুস্তম প্রমুখ।
এ বিষয়ে ফরিদুল মাওলা কিশোর বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবাদী মোটরসাইকেল র্যালি স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসন কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে বেআইনী অর্থ আদায়সহ সকল অনিয়ম দূর না করলে আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ-রুটের অনিয়ম দূর না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে ঘরে না ফেরার আহ্বান জানান।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে র্যালির বিষয়ে সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাকে বিস্তারিত অবহিত করা হয়। এসময় তিনি আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিষয়টা অফিসিয়ালি দেখা হচ্ছে বলে আশ্বস্থ করেন।