নিজস্ব প্রতিনিধি শনিবার রাত ০২:৪৯, ১৬ এপ্রিল, ২০২২
বৈশাখের শুরুতেই রাজশাহীতে চলমান তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। গতকাল শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ছয় বছর পর আবার এ তাপমাত্রা রাজশাহীতে রেকর্ড হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একই তাপমাত্রা বিদ্যমান ছিল। এর আগে সকালের দিকে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেলের পর থেকে সন্ধ্যা ও রাতের দিকে ধীরে ধীরে এই তাপমাত্রা কমবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, গত ১২ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ ডিগ্রি। ১৩ এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি। গত ১৪ এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর হঠাৎ করে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রিতে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীদিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে থাকবে। তবে রাজশাহীর প্রকৃতিতে মৃদু তাপদাহ বিরাজ করবে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, মার্চের মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে একই মাত্রায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। এর মধ্যে গত ৪ এপ্রিল রাজশাহীতে মাত্র শূন্য দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। এর আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
সাধারণত দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে মৃদু তাপদাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে মাঝারি তাপপ্রবাহ রাজশাহীতে আজ তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও ওই পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি।
গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর হাট-বাজারে খানিকটা ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও দুপুরের পর নগরী ছিল প্রায় ফাঁকা। কাঁচাবাজার ও ফলের দোকানগুলো খোলা থাকলেও তেমন ক্রেতা সমাগম চোখে পড়েনি। তবে তরমুজ-আনারস ও কলার দোকানে দেখা গেছে কিছু ক্রেতা।
এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ হিল কাফি জানান, হঠাৎ করেই রাজশাহীর প্রকৃতিতে সূর্যের তাপ বেড়েছে। এসময় বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন, অন্যথায় কৃষকের ফসল পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
এ তাপদাহে আমের পরিচর্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এসময় আমের বেশ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গাছে বেশি বেশি ওষুধযুক্ত পানি ছিটাতে হবে যাতে গুটি আম ও ছোট ছোট আমগুলো ঝরে না যায়। যদিও প্রথম দিকে রাজশাহীর গাছগুলোতে প্রচুর আমের মুকুল ধরেছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের তীব্র তাপদাহে আমের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আর তাই আমের পরিচর্যায় চাষিদের যত্নশীল হতে হবে।