বুড়িমারী স্থলবন্দরে ৬ দিন যাবত আটকে আছে পন্য বোঝাই ট্রাক, কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মেঘনা নিউজ ডেস্ক শুক্রবার রাত ০৯:৫২, ৩১ মে, ২০১৯
ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : জেলার পাটগ্রাম উপজেলাধীন বুড়িমারী স্থলবন্দরে গত ৬ দিন ধরে ভারতে রফতানি জন্য পণ্যবোঝাই শত শত ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের ওপারে ভারতীয় কুচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে গত ২৬ মে থেকে অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তীতে পড়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী বাংলাদেশি রফতানি কারক ব্যবসায়ীরা। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করলেও স্থানীয়ভাবে তাদের কিছু করার নেই বলে দাবী করেন।
কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ভারতের কুচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর কাস্টমসকে ভারতীয় রাজস্ব বিভাগ কম্পিউটারাইজ সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসতে গত ২৬ মে থেকে ‘এএসওয়াই কুডা’ সিস্টেম চালু করেছে। এই সিস্টেম চালু করায় বাংলাদেশি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সাহা জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দর অনলাইন সেবা কার্যক্রম অনেক আগে থেকে চালু আছে। কিন্তু চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস ম্যানুয়ালি কার্যক্রম করত। তারা এখন অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করায় রফতানি কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলেও আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রফতানির জন্য রাজধানীয় ঢাকার মালীবাগ এলাকার মেসার্স মাড়–তি ইন্টারন্যাশনালের পণ্যবোঝাই ৬০টি ট্রাক, গাজীপুর কোনাবাড়ী এলাকার মেসার্স ক্যাচান ট্রেডিংয়ের ৪০টি ট্রাক রফতানি পণ্য নিয়ে গত ২৬ মে থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় অপেক্ষায় রয়েছে। এই দুই রফতানি কারক প্রতিষ্ঠানের মতো প্রাণ আরএফএলসহ বিভিন্ন রফতানি কারক প্রতিষ্ঠানের শত শত পণ্যবোঝাই ট্রাক বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এ কারনে এক দিকে যেমন চরম যানজট সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে ট্রাক মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়ার অর্থ গুনতে হচ্ছে রফতানিক কারক ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমসের অনলাইন সেবার কার্যক্রম চালুর জটিলতার কারণে বাংলাদেশি রফতানি কারক ব্যবসায়ীরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ঈদ-উল ফিতরের কয়েকদিন আগে এই ভোগান্তি রফতানি কারক ব্যবসায়ীদের জন্য আরো অস্বস্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে ভারত থেকে বাংলাদেশে রফতানি কার্যক্রম সচল রেখেছে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরো বেশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী মেসার্স আরএন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবীর সওদাগর বলেন, ‘আমার কয়েকজন রফতানি কারক ব্যবসায়ীর দুইশতাধিক গার্মেন্টস ঝুট বোঝাই ট্রাক কয়েকদিন ধরে ভারতে রফতানির জন্য অপেক্ষায় আছে। বিষয়টি কাস্টমসকে বলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ভারতীয় সমস্যার জন্য ব্যবসায়ীদের চরম ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে আমাদের। কেউ বিষয়টি দেখছে না। অথচ আমদানি ব্যবসা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। রফতানির দিকে কারো নজর নেই।’ একই অভিযোগ করেন মেসার্স তাসনিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শামীম হোসেন ও মেসার্স ট্রেড এন্টারপ্রাইজ সিন্ডিকেটের স্বত্বাধিকারী সুশান্ত কুমার ধরসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
রাজধানী ঢাকার মালিবাগ এলাকার রফতানি কারক ব্যবসায়ী মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব প্রতিদিন দুই হাজার টাকা ডেমারেজ দিতে হচ্ছে ট্রাক মালিকদের। ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমসের অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করার আগে অন্তত যেসব ট্রাক বন্দরে অপেক্ষমান রয়েছে। এসব গাড়ী ভারতের রিসিভ করা উচিত। এই বিষয়ে বাংলাদেশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সাথে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সাহা ও রাজস্ব কর্মকর্তা প্রভাষ কুমার রায় ভারতে রফতানির জন্য কয়েকশ গাড়ী অপেক্ষমান থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারাইজড অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডাটা (এএসওয়াইকুড) সফটওয়ার চালু করায় রফতানির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। রফতানি কারক ও স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট বিষয়টি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করছেন। আমরাও বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আমাদের হাতে কিছু করার ক্ষমতা নেই।