বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ সম্মেলন করায় মামলার আসামি করা হয়েছে সংবাদকর্মীকে
শাকিল হোসেন শওকত,নাগরপুর,টাঙ্গাইল সোমবার সন্ধ্যা ০৬:২৯, ৩১ মে, ২০২১
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ভারতীয় তালিকাভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা গত ১৪ এপ্রিল সকালে নাগরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত হোসেনকে অভিযুক্ত অমুক্তিযোদ্ধা অখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
এই সংবাদ সম্মেলনে প্রেক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাসুজায়েত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে সংবাদকর্মী ও সংবাদ সম্মেলনকারী ৩ জন ভারতীয় তালিকা ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আসামি করে বিজ্ঞ আদালতে ১০ কোটি টাকার একটি মানহানীর মামলা দায়ের করেছে বলে জানা যায়।
সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাদ্দেস আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২ মে ২০২১ তারিখে টাঙ্গাইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের বিজ্ঞ আমলি আদালতের নাগরপুর থানার সিআর ৯৫/২০২১ নং ক্রমিকে মোকাদ্দেস গং কে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে সুজায়েত হোসেন। পরে বিজ্ঞ আদালত টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ বুরো আব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে ১ জুন ২০২১ তারিখের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি আরো বলেন, আজ ৩১ মে তারিখ পর্যন্ত আমাদের কাছে সিবিআই বা পুলিশ সদস্যরা তদন্তের জন্য আসেননি। এছাড়াও কোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ পাইনি। কোন মামলার সমন বা নোশটিশ আমরা পাইনি।
আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞ আদালত এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আস্থাশীল। সংবাদ সম্মেলন করায় জালিয়াত সুজায়েতের স্বার্থের আঘাত লাগতে পারে। সে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। নাগরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা আমাদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনটি তাদের গণমাধ্যমে তুলে ধরেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে সকলের মতামত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। মুক্ত সাংবাদিকতায় তারা আমাদের লিখিত বক্তব্য তুলেছে, তাই সুজায়েত আমাদের ভারতীয় তালিকা ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহ সাংবাদিক মো. জসিউর রহমান লুকন কে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। আজ অতি দুঃখের সাথে বলতে হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর, যে ব্যক্তি স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী কাজ করতে পারে সে কিভাবে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে? বাক স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক দেশের সকল জনগণের অধিকার। আজ আবারও সুজায়েত এই মিথ্যা, ভিত্তিহীন অসাংবিধানিক মামলা দায়ের করে প্রমান করেছে সে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয়। আমরা সুজায়েতের এমন হীন কাজের তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে আশাকরি বিজ্ঞ আদালত এ মামলার ন্যায় বিচার করবেন।
এ বিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত হোসেন বলেন, মোকাদ্দেসরা আমার বিরুদ্ধে মনগড়া মিথ্যে কথা বলে সংবাদ সম্মেলন করে আমার মানহানি করেছে এবং সাংবাদিক মো. জসিউর রহমান লুকন এর কার্মরত পত্রিকায় এবং ফেইসবুক আইডিতে তা প্রচার হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আসামি করা হয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে কথা বলে থানায় জিডি করেছে।
সংবাদকর্মী হিসেবে সাংবাদিক কি তার মানহানি করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলন করে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছে। তুমি পেশাকে বড় করে দেখেছো, আমি তোমার ভুল মনে করিনা। তুমি পেশাকে সর্বচ্চো বড় করে দেখেছো। পেশার গুরুত্বের বাইরে কোন সম্পর্কে গুরুত্ব দাওনি। এটা ভালো। অনেকেই তা দেয় না। এ জন্য সাংবাদিককে সাধুবাদ জানাই।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জসিউর রহমান লুকন বলেন, সংবাদ সম্মেলন করার অধিকার সকলের আছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাদ্দেস আলী ও তার সহযোদ্ধারা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এর প্রেক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে এবং মুক্ত সাংবাদিকতাকে অবরুদ্ধ করতে আমাকে এবং ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ ৪ জনকে আসামি করে বিজ্ঞ আমলি আদালতে একটি মানহানির মামলা দায়ের করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনটির বক্তব্য গণমাধ্যমে তুলে ধরা কি আমার অপরাধ? আমি কি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত হোসেনের মানহানি করেছি? আমি কিভাবে তার মানহানি করলাম। আমি শুধু পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি। বিজ্ঞ আদালতের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল, তাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়েত হোসেনের মানহানির এই মামলার বিষয়ে আমার কোন সম্পৃক্ততা আছে কি না তা বিজ্ঞ আদালত অবশ্যই খতিয়ে দেখবেন।