বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিপি ফজলুল হকের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ শুক্রবার রাত ১১:৩৪, ১৩ মে, ২০২২
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের আজ (শনিবার, ১৪মে/২০২২) তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের কবর জিয়ারত, কোরানখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আলোচনা সভা ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, মরহুম মৌলভী জলফু মিয়া ও মোছাঃ আনোয়ারা বেগমের ৯ সন্তানের মধ্যে ফজলুল হক ছিলেন ২য় সন্তান। ১৯৪৭ সালে ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। সপ্তম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় গৌরীপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে গৌরীপুরের আনাচে-কানাচে চোঙ্গা ফুঁকিয়ে দাবী আদায়ে বিভিন্ন ধরণের প্রচারণা করেন। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করলে পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে পুরো বাংলাদেশের মতো ফজলুল হকের নেতৃত্বে গৌরীপুরও গর্জে উঠে। আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ৬৯ সালে গৌরীপুর কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। এরপরই গণঅভূত্থানের ডাকে গৌরীপুর সরকারি কলেজ ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিনই গৌরীপুরের রাজপথে শ্লোগান-মিছিলের অগ্রগণ্য ছিলেন তিনি।
জানুয়ারী মাসে আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে উঠলে তা সফল করার লক্ষ্যে তার নেতৃত্বে ২৭ জানুয়ারী সরকারি কলেজ থেকে একটি মিছিল মধ্য বাজারে আসলে পাকিস্তানি সরকারের পেটুয়া পুলিশবাহিনী গুলি চালালে তারই সহপাটি আজিজুল হক হারুন গুলিতে নিহত হন, তারপরো তিনি আন্দোলনের পথ থেকে দমে যাননি। গণআন্দোলনকে চাঙ্গা করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন জায়গা পিকেটিং করেছেন, ছাত্র-জমায়েত করেছেন এবং আন্দোলনকে সফলও করেছেন। তিনিই তার পরের বছর থেকে সহপাটি হারুনের স্মরণে মধ্যবাজার একটি জায়গার নামকরণ করেন হারুন পার্ক এবং দিবসটি পালন করে আসছেন আমৃত্যু।
৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে গৌরীপুরের বিভিন্ন জায়গায় বাংলার স্বাধীকারের পক্ষে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ৭০ এর নির্বাচনের সময় একবার কলতাপাড়া হয়ে বঙ্গবন্ধু নান্দাইলে আওয়ামীলীগের প্রচারণা যাওয়ার সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে গৌরীপুরে নিয়ে আসবেন এই জন্যই রাস্তায় শুয়ে অবরোধ করেন কিন্তু সময় না থাকায় বঙ্গবন্ধু তাকে ধমক দিয়ে সরতে বললেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে আদর করে ফজলু (তুই) বলে ডাকতো।
সত্তরের নির্বাচনে গৌরীপুরের এমসিএ হাতেম আলী মিয়াকে বিজয়ী করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মাত্র ২৭ বছর বয়সে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ভারতের তোরায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ২৯ দিন অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ গ্রহন শেষে ১১ নং সেক্টরের অধীনে কোম্পানি কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর নির্দেশনার জন্য সদা সর্বদা এস,এল,আর নিয়ে প্রস্তুত থাকতেন। যুদ্ধে প্লাটুনের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতা উত্তর সময়ে তিনি গৌরীপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। ১৯৭২ সালে ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের গৌরীপুর থানা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে গৌরীপুর থানা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং হারুন পার্ক সংলগ্ন শ্রমিক ইউনিয়নের জায়গা বরাদ্দ নিয়ে শক্তিশালী শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলেন। ১৯৮১ সালে গৌরীপুর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ দ্বিধাবিভক্ত হলে বাকশালে যোগ দিয়ে তিনি গৌরীপুর উপজেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ভিপি ফজলুল হকের একমাত্র পুত্র রাজিবুল হক তাঁর পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের জন্য, সদা হাস্যেজ্বল, রসিকজন হিসেবে ছোট-বড় সবার মাঝেই ছিলেন জনপ্রিয়। চিরদিন গৌরীপুরের মানুষের মধ্যে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।